image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: একাত্তরের চিঠিঃ চিঠি – ৪ : শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
  চিঠি লেখকঃ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ। চিঠি প্রাপকঃ স্ত্রী ফজিলা আজিজ। চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ মোঃ ফারুক জাহাঙ্গীর, গ্রামঃ কুজাইল, ...
 
চিঠি লেখকঃ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ।
চিঠি প্রাপকঃ স্ত্রী ফজিলা আজিজ।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ মোঃ ফারুক জাহাঙ্গীর, গ্রামঃ কুজাইল, নাটোর। ফারুক জাহাঙ্গীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজের পুত্র 

তারিখঃ ১৬/০৪/৭১

প্রিয় ফজিলা,
জানি না কী অবস্থায় আছ। আমরা তো মরণের সাথে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত জীবন হাতে নিয়ে বেঁচে আছি। এর পরে থাকতে পারব কি না বুঝতে পারছি না। সেলিমদের বিদায় দিয়ে আজ পর্যন্ত অশান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আবার মনে হয় তারা যদি আর একটা দিন আমাদের এইখানে থাকত তাহলে তাদের নিয়ে আমি কী করতাম। সত্যিই ফজিলা, রবিবার ১১ এপ্রিলের কথা মনে হলে আজও ভয় হয়। রাইফেল, কামান, মেশিনগান, বোমা, রকেট বোমার কী আওয়াজ আর ঘর বাড়ির আগুনের আলো দেখলে ভয় হয়। সুফিয়ার বাড়ির ওখানে ৪২ জন মরেছে। সুফিয়ার আব্বার হাতে গুলি লেগেছিল। অবশ্য তিনি বেঁচে আছেন। সুফিয়াদের বাড়ি এবং বাড়ির সব জিনিস পুড়ে গেছে। য়ামাদের বাড়িতে তিন-চার দিন শোয়ার মত জায়গা পাইনি। রাহেলাদের বাড়ির সবাই, ওদের গ্রামের আর ১৫-১৬ জন, সুফিয়ার বাড়ির পাশের বাড়ির চারজন, দুলালের বাড়ির সকলে, দুলালের ফুফুজামাই দীঘির কয়েকজন এসে বাড়িতে উঠল। তাই বলি, সেই দিন যদি আব্বা এবং সেলিমরা থাকত তাহলে কী অবস্থা হতো। এদিকে আমরাও আবার পায়খানার কাছে জঙ্গলে আশ্রয় নিলাম। কী যে ব্যাপার, থাকলে বুঝতে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তা আর বলার নয়, রাস্তার ধারের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। রোজ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী ছাড়াও যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দুই একদিন পর আধা মরা আবস্থায় রাস্তার ধারে ফেলে দিয়ে যাচ্ছে। প্রত্যেক এসব ঘটনা। বাড়িতে আগুন আর গুলি করে মানুষ মারার তো কথাই নেই। তা ছাড়া লুটতরাজ, চুরি, ডাকাতি সব সময় হচ্ছে। কয়েকদিন বৃষ্টির জন্য রাস্তা ঘাটে কাদা হওয়ায় আমরা বেঁচে আছি। রাস্তাঘাট শুকনা থাকলে হয়তো আমাদের এদিকেও আসত। জানি না ভবিষ্যতে কী হবে। তবে ওরা শিক্ষিত এবং হিন্দুদের আর রাখবে না বলে বিশ্বাস। হিন্দু এবং ছাত্রদের সামনে পেলে সঙ্গে সঙ্গে গুলি করছে। গত রাতে পাশের গ্রামে এক বাড়িতে ডাকাত্রা এসে সেই বাড়ির মানুষদের যা মেরেছে তা আর বলার নয়। কখন কী হয় বলার নেই। তবু খোদা ভরসা করে বেঁচে আছি। আমাদের এদিকে ছেলেরা প্রায় সবাঈ বাড়ি ছেড়ে দূরে থাকে। কারণ বাড়িতে থাকা এ সময় মোটেই নিরাপদ নয়। তোমাদের দেখার জন্য চৌবাড়ি যাওয়ার অনেক চেষ্টা করেছি। দুঃখের বিষয়, একটি দিনও বৃষ্টি থামেনি। অবশ্য বৃষ্টি না থামার জন্য আমাদের একটু সুবিধাই হয়েছে। তোমাদের সংবাদ জানানোর মতো কনো পথ নেই। কীভাবে যে সংবাদ পাব ভেবে পাই না। মিঠু বোধ হয় এখন হাঁটতে শিখেছে তাই না? মিঠুকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু পথ নেই। সান্ত্বনা এইটুকুই যে বেঁচে থাকলে একদিন দেখা হবে। কিন্তু বাঁচাই সমস্যা। রাতে ঘুম নেই দিনে পালিয়ে বেড়াই। মা-বাবা তো প্রায়ই আমার জন্য কাঁদে। যাক, দোয়া করো যেন ভালো থাকতে পারি। বুবুদের যে কী অবস্থায় পাঠিয়েছি, তা মনে হলে দুঃখ লাগে। আমি সঙ্গে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সম্ভব হয়নি। অবশ্য সেদিন নাপাঠালে তাদের নিয়ে দারুন মুশকিলে পড়তে হতো। রবিবার দিন বাবলুর আম্মা মেরীগাছা এসেছিল। বাবলুরা ভালো আছে। তোমাদের সংবাদটা জানাতে পারলে জানাবে। আমার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা ভীষন খারাপ। বুবু, আম্মা, দুলাভাইকে আমার সালাম এবং সেলিমদের ও মিনাদের আমার স্নেহ দেবে। সম্ভব হলে তোমাদের সংবাদটা জানাবে। আমরা তো মরেও কোনো রকমে বেঁচে আছি। শেষ পর্যন্ত কী হবে জানি না।

ইতি
আজিজ

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top