২৬ এপ্রিল, ১৯৭১
- মীর শওকত আলী মহালছড়িস্থ মুক্তিযোদ্ধা হেড কোয়ার্টার আক্রমণে পাকবাহিনী তৎপরতা প্রতিরোধ করতে ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান ও তাঁর দলকে নানিয়ারচর বাজারে বড় পাহাড়ের ওপর ডিফেন্স গ্রহণের নির্দেশ দেন। ক্যাপ্টেন কাদের এর নেতৃত্বে একটি মুক্তিযোদ্ধা দলকে সড়কপথে পাকবাহিনীর গতিপথ রুদ্ধ করতে পাঠান এবং লে. মাহফুজের নেতৃত্বে একটি দলকে রিজার্ভ ডিফেন্স রাখেন যাতে পাল্টা আক্রমণ করা যায়।
- সিরাজগঞ্জের কাশীনাথপুরস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটির ওপর পাকবাহিনী হঠাৎ আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে ৩০-৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাৎ বরণ করেন।
- পাকহানাদার বাহিনী সোজাপথে সিরাজগঞ্জ ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে প্রবল বোমাবর্ষণ শুরু করে।
- কুড়িগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি টহলদার দলের সঙ্গে পাকবাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীর বেশকিছু ক্ষতিসাধন করে নিরাপদ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
- পাকহানাদার বাহিনী বরিশাল দখলের পর শুরু করে গণহত্যা, নারী ধর্ষণ,অবাধ লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ। ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনী অবিরাম বোমা ও গুলিবর্ষণের মুখে এসব এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা শহর ছেড়ে গ্রাম এলাকায় অবস্থান নেয়।
- বর্বর পাকবাহিনী সিলেটের কালাগুল চা-বাগানে হামলা চালিয়ে ৫০ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।
- টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে: গৃহযুদ্ধের দীর্ঘস্থায়ী গেরিলা তৎপরতার অধ্যায় ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে, অধিকাংশ শহর সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আর বিদ্রোহীদের দখলে রয়েছে গ্রাম এলাকার বেশিরভাগ। পূর্ব পাকিস্থানকে কব্জা করে রাখার সংকল্পে পাকিস্তান যতই অটল থাক, পরিস্থিতি-দৃষ্টে সিদ্ধান্তে আসতে হয় যে, শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ স্বাধীন হবেই।
- সাবেক প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী ও মুসলিম লীগের (কাইয়ুম) সহ-সভাপতিমফিজুদ্দিন আহমদ, প্রাদেশিক মুসলিম লীগের (কনভেনশন) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মওলানা আবদুল মান্নান ঢাকায় এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষক ও ওলেমারা গৌরবময় ভূমিকা পালন করবেন।
- তারা আরও বলেন, পাকিস্তানকে রক্ষা এবং দুষ্কৃতকারী ও অনুপ্রবেশকারী (মুক্তিযোদ্ধা) সহ সমাজ ও রাষ্ট্রবিরোধীদের নিশ্চিহ্ন করে পূর্ব পাকস্তানের দেশিপ্রেমিক নাগরিখরা দেশের পশ্চিমাংশের সাথে একত্রিত হতে যে প্রস্তুত আছেন সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। তারা এব্যাপারে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান।
- ২৩ এপ্রিল জারিকৃত মিশন বন্ধের নির্দেশ কার্যকর করতে সামরিক কর্তৃপক্ষ বেলা ১২টায় ঢাকাস্থ ভারতীয় ডেপুটি হাই কামিশন বলপূর্বক বন্ধ করে দেয়।
- রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল হামিদ খান পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নির্ধরণের জন্য ঢাকায় আসেন। টিক্কা খানসহ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা হামিদ খানকে বিমান বন্দরে অভ্যর্থনা জানান।
- সামরিক কর্তৃপক্ষ আদেশ জারি করে, কেউ যোগাযোগ ব্যবস্থা, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করলে তাকে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড দেয়া হবে। যেখানে ক্ষতিসাধন করা হবে তার আশপাশের অধিবাসীদের বিরুদ্ধে পাইকারি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
- শান্তি কমিটির জেলা আহ্বায়কদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরা হলেন:
বরিশাল জেলা - মওলানা বশির উল্লাহ আতাহরী প্রাক্তন এমএলএ ও অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সিকদারদিনাজপুর জেলা - মৌলভী মতিউর রহমান চৌধুরী ও আহমদ জান মোক্তারঈশ্বরদি (পাবনা জেলা) - মমতাজুর রহমানপটুয়াখালী জেলা - প্রাক্তন এমএলএ কসিমউদ্দিন সিকদার এবংবগুড়া, খুলনা, মাদারীপুর ও পটুয়াখালী জামে মসজিদের ইমামবৃন্দ।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook