![]() |
২৩ এপ্রিল, ১৯৭১, শুক্রবার
কিছুই ভালো লাগে না। জীবনের, পৃথিবীর সব রসকষ ভো আগেই শুকিয়ে গেছে। যে ভয়, আতঙ্ক আমাদের সবাইকে টানটান করে রেখেছে, তাও যেন শিথিল হয়ে আমাদের দিনরাতগুলোকে এলিয়ে দিয়েছে।
মা'র বাসায় গেছিলাম সকালে। নিচতলায় রফিকরা আর মণিরা ভাগাভাগি করে থাকছে । মণি আমার চাচাতো বোন। ওরা নাখালপাড়ায় থাকতো। ২৫ মার্চের কয়েকদিন পর এ বাসায় এসে উঠেছে। মণির স্বামী, ছেলেমেয়ে, রফিক, জুবলী, তাদের দুটো বাচ্চা, কাজের মেয়ে আনোয়ারা-দুটো সম্পূর্ণ আলাদা পরিবারের এতগুলো লোক ছোট ছোট চারটে ঘরে থাকছে। বেশ কষ্ট করেই থাকছে। তবে রফিক ভাবছে সায়ান্স ল্যাবরেটরি রোডে ওর ভাই আতিকুল ইসলামের বাসায় উঠে যাবে কিনা।
আমরা থাকতে থাকতেই মা'র মামাতো ভাইয়ের মেয়ে তারা আর তার স্বামী বেড়াতে এল। ওরা আসাদ গেটের কাছে নিউ কলোনিতে থাকে। ওরা বলল, ওই অঞ্চলে একটা থাকার জায়গা খুঁজতে বেরিয়েছে। কারণ ওদিকে বাঙালিদের থাকাটা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। মিরপুর-মোহাম্মদপুরের বিহারিরা দিন দিন অত্যাচারী হয়ে উঠছে। সৈয়দপুর, পার্বতীপুর, রাজশাহী, চটগ্রাম বিভিন্ন জায়গাতে বাঙালিরা যে বিহারিদের মেরেছে, তার প্রতিবাদে তারা মিছিল বের করবে আগামীকাল। মোহাম্মদপুরের অনেক বাঙালিই ইতিমধ্যে বাসা ছেড়ে শহরের অন্য অঞ্চলে আত্মীয়দের বাসায় চলে গেছে।
আমি বললাম, "বাঙালিরা বিহারিদের মেরেছে, তার প্রতিবাদে তারা মিছিল বের করবে? আর বিহারিরা যে বাঙালিদের কচুকাটা করেছে, তার বেলায় কে প্রতিবাদ করে?"
গতকাল প্রচুর রানাবান্না করেছি। কাসেম মাত্র চারদিনের ছুটি নিয়ে গেছে, কিন্তু জানি চারদিনের জায়গায় চোদ্দ দিন হয়ে যাওয়া মোটেও অসম্ভব নয়। আজ কোন কাজ নেই। তাই কি এগারোটার সময় গরম পানিতে সাবান গুলে একগুচ্ছ কাপড় ধুতে বসলাম? বড় বড় বেড কভারও। কিছু একটা কষ্টসাধ্য, ভারি কাজ করা দরকার। কিছু পেটানো, আছড়ানো। সারাদিন ধরেই কাপড় ধোয়া চলছে।
- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.