![]() |
চিঠি লেখকঃ শহীদ কাজী নুরুন্নবী। ১৯৭১ সালে রাজশাহী
মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র এবং কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিব বাহিনীর রাজশাহী বিভাগের প্রধান ছিলেন। ১ অক্টোবর
১৯৭১ নুরুন্নবীকে পাকিস্তানি বাহিনী আটক করে শহীদ জোহা হলে নিয়ে যায়। তাঁর
আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজের একটি হোস্টেল তাঁর নামে
রয়েছে।
চিঠি প্রাপকঃ মা নুরুস সাবাহ রোকেয়া। শহীদের বাবার নাম, কাজী সাখাওয়াত হোসেন। ঠিকানাঃ লতা বিতান কাজীপাড়া, নওগাঁ।
চিঠিটি পাঠিয়েছেনঃ ডা. কিউ এস ইসলাম, ১৮ শান্তিনগর, ঢাকা।
২৯ শে মার্চ/রাজশাহী'৭১
আম্মা,
সালাম নেবেন।
আমি ভালো আছি এবং নিরাপদেই আছি। দুশ্চিন্তা করবেন না। আব্বাকেও বলবেন। দুশ্চিন্তা মনঃকষ্টের কারণ ছাড়া আর কোন কাজে আসে না। এখানে গতকাল ও পরশু Police বনাম Army-র মধ্যে সাংঘাতিক সংঘর্ষ হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত আমরা জিততে পারিনি।
রাজশাহী শহর ছেড়ে লোকজন সব পালাচ্ছে। শহর একদম খালি। Military কামান ব্যাবহার করছে। ২৫০ মত Police মারা গিয়েছে। ৪ জন আর্মি মারা গিয়েছে মাত্র।
রাজশাহীর পরিস্থিতি এখন Army-আয়ত্তাধীনে রয়েছে। হাদী দুলাভাই ভালো আছেন। চিন্তার কারন নেই। দুলি আপার খবর বোধহয় ভালোই। অন্য কোথায় যেন আছেন। আমি যাইনি সেখানে।
পুষ্প আপা সমানে কাঁদাকাটি করে চলেছেন ঢাকার ভাবনায়। ক'দিন আগে গিয়েছিলাম। ধামকুড়িতে বোধহয় উনার মা আছেন। সম্ভব হলে খবর পৌঁছে দেবেন। আমার জন্য ব্যস্ত হবেন না। যেভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, সেখানে আমাদের বেচেঁ থাকাটাই লজ্জার। আপনাদের দোয়ার জোরে হয়তো মরব না। কিন্তু মরলে গৌরবের মৃত্যুই হতো। ঘরে শুয়ে শুয়ে মরার মানে হয় কি?
এবার জিতলে যেমন করে হোক একবার নঁওগা যেতাম। কিন্তু জিততেই পারলাম না। হেরে বাড়ি যাওয়া তো পালিয়ে যাওয়া। পালাতে বড্ড অপমান বোধহয়। হয়ত তবু পালাতেই হবে। আব্বাকে ছালাম। দুলুরা যেন অকারণ কোনোরকম risk না নেয়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বললাম কথাটা। তাতে শুধু শক্তি ক্ষয়ই হবে।
দোয়া করবেন।
ইতি
বাবুল, ২৯/৩
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.