১০ এপ্রিল, ১৯৭১, শনিবার
কিটির
রেডিওটা পাবার পর থেকে রোজই স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ধরার
জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। কতজনের কাছে শুনছি, তারা ধরেছে, অনুষ্ঠান শুনছে।
আমরাই শুধু পাচ্ছি না।
স্বাধীন বাংলা বেতারের বরাত দিয়ে আকাশবাণী যত খবর বলে, সব বিশ্বাস করতে মন সায় দেয় না। ওদের কিছু কিছু খবর ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নীলিমা আপা, সুফিয়া আপার মৃত্যু সংবাদটা ভুল ছিল। ঢাকার পতন, ক্যান্টনমেন্ট অবরোধ, টিক্কা খানের মৃত্যু-সবক’টা খবরই ভুল ছিল। টিক্কা খান বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে, একের পর এক মার্শাল ল’র বাঁধন-বেড়ি প্রচার করে যাচ্ছে। ২৫ মার্চের আগে, যে চীফ জাস্টিস বি.এ.সিদ্দিকী টিক্কা খানকে গভর্নর হিসেবে শপথ করাতে রাজি হন নি, সেই বি.এ. সিদ্দিকীকে দিয়েই গতকাল গভর্নর হিসেবে টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ করানো হয়েছে। আজকের কাগজে দু’জনের ছবি বেরিয়েছে।
আজ সকালে খাবার টেবিলে সবাইকে বললাম, “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সত্যি সত্যি আছে, না আকাশবাণীর বানানো মিথ-তা বের করতেই হবে। সকাল ছ’টা থেকে একেকজন দু’ঘন্টা করে রেডিও’র নব ঘোরাতে থাকবে। সারা দিন ধরে চলবে।”
জামী বলল, “এখন তো ন’টা বেজে গেছে।”
আমি ধমক দিয়ে বললাম, “ঠাট্টা রাখ। ন’টা থেকে এগারোটা তোমার ডিউটি।”
ফোন বেজে উঠল। উঠে গিয়ে ধরলাম। ওসমান গনি স্যার। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এখন অবসর ভোগ করছেন। উনি বললেন, “জাহানারা রেডিও পাকিস্তান থেকে শিগগিরই তোমার কাছে লোক যাবে মনে হয়।”
আঁতকে উঠলাম, “কেন স্যার?”
“মার্শাল ল’ অথরিটি রেডিও’র কর্তাব্যক্তিদের হুকুম দিয়েছে, যেখান থেকে যেমন করে পার পুরনো টকারদের এনে প্রোগ্রাম করাও। আমার কাছে এসেছিল।”
“আপনি প্রোগ্রাম করেছেন স্যার?”
“না করে উপায় কি? বাড়িতে যখন রয়েছি। তোমাকেও যদি ফোনে বা বাড়িতে পেয়ে যায়–”
উনি কথা শেষ করলেন না।
স্যারকে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম। খাবার টেবিলের কাছে ফিরে গিয়ে সবাইকে বললাম, “ফোন বাজলে এখন থেকে তোমরাই ধরবে। আমাকে চাইলে আগে জেনে নেবে কে, কোত্থেকে করেছে। যদি বলে রেডিও থেকে করেছে, তাহলে বলবে আমি নেই। আর কেউ বাসায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আগেই যেন বলে দিও না যে আমি বাড়িতে আছি। আগে জেনে নেবে কোথা থেকে এসেছে-”
জামী আবার বলে উঠল,“মা, তুমি টিক্কা খানের মত একের পর এক হোম ল’ রেগুলেশান জারি করে যাচ্ছ।”
- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে
স্বাধীন বাংলা বেতারের বরাত দিয়ে আকাশবাণী যত খবর বলে, সব বিশ্বাস করতে মন সায় দেয় না। ওদের কিছু কিছু খবর ভুল প্রমাণিত হয়েছে। নীলিমা আপা, সুফিয়া আপার মৃত্যু সংবাদটা ভুল ছিল। ঢাকার পতন, ক্যান্টনমেন্ট অবরোধ, টিক্কা খানের মৃত্যু-সবক’টা খবরই ভুল ছিল। টিক্কা খান বহাল তবিয়তে বেঁচে আছে, একের পর এক মার্শাল ল’র বাঁধন-বেড়ি প্রচার করে যাচ্ছে। ২৫ মার্চের আগে, যে চীফ জাস্টিস বি.এ.সিদ্দিকী টিক্কা খানকে গভর্নর হিসেবে শপথ করাতে রাজি হন নি, সেই বি.এ. সিদ্দিকীকে দিয়েই গতকাল গভর্নর হিসেবে টিক্কা খানের শপথ গ্রহণ করানো হয়েছে। আজকের কাগজে দু’জনের ছবি বেরিয়েছে।
আজ সকালে খাবার টেবিলে সবাইকে বললাম, “স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র সত্যি সত্যি আছে, না আকাশবাণীর বানানো মিথ-তা বের করতেই হবে। সকাল ছ’টা থেকে একেকজন দু’ঘন্টা করে রেডিও’র নব ঘোরাতে থাকবে। সারা দিন ধরে চলবে।”
জামী বলল, “এখন তো ন’টা বেজে গেছে।”
আমি ধমক দিয়ে বললাম, “ঠাট্টা রাখ। ন’টা থেকে এগারোটা তোমার ডিউটি।”
ফোন বেজে উঠল। উঠে গিয়ে ধরলাম। ওসমান গনি স্যার। ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। এখন অবসর ভোগ করছেন। উনি বললেন, “জাহানারা রেডিও পাকিস্তান থেকে শিগগিরই তোমার কাছে লোক যাবে মনে হয়।”
আঁতকে উঠলাম, “কেন স্যার?”
“মার্শাল ল’ অথরিটি রেডিও’র কর্তাব্যক্তিদের হুকুম দিয়েছে, যেখান থেকে যেমন করে পার পুরনো টকারদের এনে প্রোগ্রাম করাও। আমার কাছে এসেছিল।”
“আপনি প্রোগ্রাম করেছেন স্যার?”
“না করে উপায় কি? বাড়িতে যখন রয়েছি। তোমাকেও যদি ফোনে বা বাড়িতে পেয়ে যায়–”
উনি কথা শেষ করলেন না।
স্যারকে মনে মনে অসংখ্য ধন্যবাদ জানালাম। খাবার টেবিলের কাছে ফিরে গিয়ে সবাইকে বললাম, “ফোন বাজলে এখন থেকে তোমরাই ধরবে। আমাকে চাইলে আগে জেনে নেবে কে, কোত্থেকে করেছে। যদি বলে রেডিও থেকে করেছে, তাহলে বলবে আমি নেই। আর কেউ বাসায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে আগেই যেন বলে দিও না যে আমি বাড়িতে আছি। আগে জেনে নেবে কোথা থেকে এসেছে-”
জামী আবার বলে উঠল,“মা, তুমি টিক্কা খানের মত একের পর এক হোম ল’ রেগুলেশান জারি করে যাচ্ছ।”
- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে
Post a Comment Blogger Facebook