image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: একাত্তরের দিনগুলি: ৪ এপ্রিল, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
৪ এপ্রিল, ১৯৭১, রবিবার আজ কিটি ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সকালে এসেছে বিদায় নিতে। ওর রেডিওটা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। খাবার টেবিলের ওপর রেখে ...

৪ এপ্রিল, ১৯৭১, রবিবার

আজ কিটি ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছে। সকালে এসেছে বিদায় নিতে। ওর রেডিওটা সঙ্গে নিয়ে এসেছে। খাবার টেবিলের ওপর রেখে বলল, “এটা তোমাদের কাছে রেখে যাচ্ছি। এখন প্রথমে তেহরানে যাব,তারপর কোথায় যাব, ঠিক নেই। এত ভারি রেডিও নিয়ে মুভ করা অসুবিধে।”

কিটি রাওয়ালপিন্ডি হয়ে তেহরান যাবে। ওর কাছে বেলু-ধলুদের ফোন নম্বর লিখে দিলাম। “ওরা ইসলামাবাদে থাকে। ওদেরকে বোলো এখানে কি কি ঘটেছে। আর বোলো আমরা ভালো আছি।”

কিটি আস্তে করে বলল, “তোমাদের কিছু জিনিস আমি আমার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারি নিরাপদে রাখার জন্য।”

রুমী লাফ দিয়ে এসে বলল, “হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের রেকর্ডটা তুমি সঙ্গে নিয়ে যাও। আর চে গুয়েভারার এই বই দুটো।”

আমি শাহনাজের গাওয়া ‘জয় বাংলা-বাংলার জয়’ রেকর্ডটাও দিলাম।

রুমী বলল, “আশা করব একদিন তুমি এগুলো ঢাকায় আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।”

“তাই যেন হয়।” কিটির চোখ পানিতে ভরে গেল। শরীফের সঙ্গে কিটির দেখা হল না। কিটি আসার আগেই শরীফ বাঁকার সঙ্গে সাভারে গেছে। আমরা জানতাম না যে কিটি আজই চলে যাবে। মিঃ চাইল্ডারের বাসায় ফোন নেই, কিটি আগে জানাতে পারে নি।

কিটি চলে গেলে আমরা সবাই খানিকক্ষণ খুব মন খারাপ করে বসে রইলাম।

তারপর হঠাৎ মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে দাঁড়ালাম, “নাঃ এভাবে বসে বসে কষ্ট পাওয়ার কোন মানে হয় না। একটু হেঁটে আসি।”

এলিফ্যান্ট রোডে উঠতেই দেখি রিকশায় মা। আমাকে দেখে নেমে বললেন, “পায়ে হেঁটে কোথায় যাচ্ছিস?”

“কোথায় না। এমনিই।”

মা রিকশার ভাড়া চুকিয়ে আমার সঙ্গে হাঁটতে লাগলেন, বললেন, “চল, কাঁচাবাজারে যাই।” নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের পোড়া জঞ্জাল এখনো সম্পূর্ণ সরানো হয় নি, তবু ওরই মধ্যে কিছু কিছু দোকানদার একটু সাফসুতরো করে পশরা নিয়ে বসেছে। একদম ভিড় নেই। নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারে আগে কোনদিন ঢুকি নি ভিড়ের ভয়ে। আর এখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরলাম। ডিম অসম্ভব সস্তা-দু’টাকা হালি। মা আর আমি মিলে একসঙ্গে পঞ্চাশটা কিনলাম। মুরগি, শাকসব্জি সবই মনে হল পানির দর। কাছাকাছি গ্রাম থেকে যে যা পেরেছে, নিয়ে এসে বসেছে। কোনমতে বিক্রি হলেই উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে চলে যাবে, এমনি ভাব। ঝুড়ি হাতে মিনতি ছোকরা একটাও নেই, বয়ে নিতে পারব না বলে আর কিছু কিনলাম না।

বাড়ি ঢুকে দেখি শরীফ ফিরছে সাভার থেকে। মুরগি, শাকসব্জি, মিষ্টি অনেক কিছু কিনে এনেছে। ভাগ্যিস, ডিম ছাড়া আর কিছু কিনি নি কাঁচাবাজার থেকে। মাকে একটা মুরগি, কিছু সব্জি ও মিষ্টি দিলাম। রুমীকে বললাম, “যা, নানীকে পৌছে দিয়ে আয়।”

বাড়ির নাম ও গাড়ির নম্বর-প্লেট উর্দুতে লেখার কথাটা নেহাতই গুজব। সামরিক কর্তৃপক্ষ এই মর্মে কাগজে বিবৃতি দিয়েছে। শরীফ মন্তব্য করল, “ নেহাৎ ভিত্তিহীন গুজব বলে মনে হয় না। অতি উৎসাহী অবাঙালিরাই এটা প্রথম ছড়িয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। তারপর, কানাকানি, বলাবলি, চাপা অসন্তোষ-এসব হতে হতে সরকারের টনক নড়েছে। তাই এখন কাগজে ঘোষণা দিয়ে বলছে এটা ভিত্তিহীন গুজব। যতো সব।”

আমি হেসে বললাম, “তবু তো রেহাই। উর্দুতে নম্বর-প্লেট? বাড়ির সামনে উর্দু হরফে ‘কণিকা’ লেখা? উঃ মাগো। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন।”

- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top