image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: একাত্তরের দিনগুলি: ৩০ এপ্রিল, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
৩০ এপ্রিল, ১৯৭১, শুক্রবার বেশ গরম পড়ে গেছে। ক’দিন আগের তুমুল বৃষ্টির ফলে হিউমিডিটি বেড়ে গরমটা আরো অসহ্য লাগছে। সন্ধ্যায় গাড়ি-ব...

৩০ এপ্রিল, ১৯৭১, শুক্রবার

বেশ গরম পড়ে গেছে। ক’দিন আগের তুমুল বৃষ্টির ফলে হিউমিডিটি বেড়ে গরমটা আরো অসহ্য লাগছে। সন্ধ্যায় গাড়ি-বারান্দার সামনের ছোট খোলা জায়গাটায় বেতের চেয়ারে বসেছিলাম। আজ মোতাহার সাহেব বেড়াতে আসেন নি। উনি সারাদিন ধরে মেডিক্যাল ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে, থানায় এবং সম্ভব অসম্ভব আরো বহু জায়গায় ছুটে বেরিয়েছিলেন। শরীফ বলল, "চল, আমরাও ওঁর বাসায় যাই। খোঁজ নিয়ে আসি কি হল।"

আমাদের বাড়ি থেকে দুটো বাড়ির পরে মেইন রোডের কাছাকাছি সামাদের বাসা। এটা আসলে সিদ্দিকী সাহেবের বাড়ি- এ গলিতে ওঁর বাড়িটাই একমাত্র তেতলা- সামাদরা একতলায় ভাড়া থাকে।

সামাদদের বসার ঘরের একপাশে একটা খাট আছে। মোতাহার সাহেব সেই খাটে শুয়েছিলেন। আমাদের দেখে উঠে বসলেন। দু’দিনেই ওর দশ পাউণ্ড ওজন কমে গেছে মনে হল।

আমরা চেয়ারে বসে চুপ করে অপেক্ষা করতে লাগলাম। মোতাহার সাহেব ভাঙা গলায় বললেন, "কোথাও খোঁজ পেলাম না। মর্গে যত লাশ দেখলাম, সব পেটের নাড়িভুড়ি বের করা। পিশাচগুলো প্রথম কোপ দিয়েছে পেটে। তারপর শরীরের অন্য সব জায়গায়। উঃ! এমন বীভৎস দৃশ্য জীবনে চোখে দেখি নি। পুলিশে সব লাশ তুলে আনতে পেরেছে বলে মনে হয় না। ড্রাইভারতো নিজেই দেখেছে অনেকগুলোকে নদীর পানিতে ছুঁড়ে ফেলেছে। ছুঁড়ে ফেলার পরিশ্রমে বোধহয় পারে নি, নইলে সব লাশই নিশ্চয় নদীতেই ফেলত।"

মোতাহার সাহেব চোখ বন্ধ করলেন।

"আপনি ওসব কথা এখন আর বলবেন না, মনেও করবেন না। আজ রাতে বরং দুটো ভ্যালিয়াম খেয়ে শোবেন।" এই বলে আমরা চলে এলাম।

সে রাতে ভ্যালিয়াম আমাদেরও খেতে হল। তা সত্ত্বেও ঘুম এল না। মাঝে-মাঝে তন্দ্রার মধ্যে চমকে উঠতে লাগলাম।

- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top