image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: একাত্তরের দিনগুলি: ২৩ মার্চ, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
২৩ মার্চ, ১৯৭১, মঙ্গলবার আজ প্রতিরোধ দিবস। খুব সকালে সবাই মিলে ছাদে গিয়ে কালো পতাকার পাশে আরেকটা বাঁশে ওড়ালাম স্বাধীন বাংলাদে...
২৩ মার্চ, ১৯৭১, মঙ্গলবার

আজ প্রতিরোধ দিবস। খুব সকালে সবাই মিলে ছাদে গিয়ে কালো পতাকার পাশে আরেকটা বাঁশে ওড়ালাম স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন পতাকা। বুকের ভেতরটা শিরশির করে উঠল। আনন্দ, প্রত্যাশা, ভয়, অজানা আতঙ্ক সব মিশে একাকার অনুভূতি।

নাশতা খাওয়ার পর সবাই মিলে গাড়িতে করে বেরোলাম- খুব ঘুরে বেড়ালাম সারা শহরের বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে। সবখানে সব বাড়িতে কালো পতাকার পাশাপাশি সবুজ - লাল - হলুদে উজ্জ্বল পতাকা পতপত করে উড়ছে। ফটো তুললাম অনেক। ঘুরতে ঘুরতে ধানমণ্ডি দুই নাম্বার রোডে বাঁকার বাসায় গিয়ে নামলাম। সেখানে খানিকক্ষন বসে, গেলাম ডাঃ খালেকের বাসায়। বাঁকার বাসার ঠিক সামনেই, রাস্তার ও পাশে। ডাঃ খালেকের বাসায় দেখা হল তাঁর শালী মদিরা ও তাঁর স্বামী নেভির অবসরপ্রাপ্ত কম্যান্ডার মোয়াজ্জেমের সঙ্গে। নেভি থেকে অবসর নেয়ার পর মোয়াজ্জেম একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেন দুই বছর আগে। নামটা বেশ বড়- 'লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়ন কমিটি'। মোয়াজ্জেমের সঙ্গে যখনই দেখা হয় তিনি হেসে হেসে বলেন, 'শেখ সাহেবের ছয় দফা, আমার কিন্তু এক দফা। তা হল পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা।'

আজ মোয়াজ্জেম বললেন, 'শেখ সাহেবও এখন এক দফা এক্সেপট করতে বাধ্য হয়েছেন।'

কি রকম?

আজ সকালে ওঁকেও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা তুলতে হয়েছে ওঁর নিজের বাড়িতে।

মিসেস খালেক জিজ্ঞেস করলেন, 'আজ সকালে পল্টন ময়দানে কুচকাওয়াজ দেখতে গিয়েছিলেন নাকি?'

"নাহ। শুধু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরলাম নতুন পতাকা দেখতে। অফিস বিল্ডিংগুলোতেও স্বাধীন বাংলার পতাকা উড়িয়েছে। ইন্টার কন্টিনেন্টালেও। ওখানে এত মিলিটারি থাকা সত্ত্বেও পারল কি করে?'

মোয়াজ্জেম বললেন, "বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি। বাঙ্গালির মনও তাই।"

'বিদেশি দূতাবাসগুলোতেও নতুন পতাকা। কি যে ভাল লাগছিল দেখতে। সবচেয়ে ভাল লেগেছে শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে। কামরুল হাসানের আঁকা কয়েকটা দুর্দান্ত পোস্টার দেখলাম। মিনারের সিঁড়ির ধাপের নিচে সার সার সেঁটে রেখেছে। প্রত্যেকটা পোস্টারে একটা মানুষের মুখ, নিচে লেখা এদেরকে খতম কর। মুখটা একদম প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মুখের মত।'

'বলেন কি ? আমাদের যেতে হবে তো দেখতে।'

টেলিভিশনের অনুষ্ঠান যে আজকে শেষ ই হয়না। অন্যদিন সাড়ে নয়টার মধ্যে সব সুমসাম। আজ দেখি মহোৎসব চলছে তো চলছেই। সুকান্তর কবিতার উপর চরম দুইটা অনুষ্ঠান হল। একটা 'ছাড়পত্র' - মোস্তফা মনয়ারের প্রযোজনা। ডঃ নওয়াজেশ আহমেদের ফটোগ্রাফির সঙ্গে কবিতার আবৃত্তি। আরেকটা "দেশলাই"- বেলাল বেগের প্রযোজনা। সুকান্তের দেশলাই কবিতাটি আবৃত্তির সঙ্গে সঙ্গে টিভি পর্দায় দেখা গেল অসংখ্য দেশলাইয়ের কাঠি একটার পর একটা জ্বলে উঠছে। একটা কাঠি থেকে আরেকটাতে আগুন ধরতে ধরতে সবগুলো মশালের মত জ্বলতে লাগল পুরো টিভি পর্দা জুড়ে।

এরপর শুরু হল আব্দুল্লাহ আল মামুনের এক নাটক "আবার আসিব ফিরে।" উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহীদ এক ছেলের বিস্মৃতপ্রায় স্মৃতি আবার উজ্জ্বল হয়ে ওঠে একাত্তরের গণআন্দোলনে। নাটক ২৩ মার্চের রাত পৌনে এগারোটায় শুরু হয়ে শেষ হয় ২৪ মার্চের প্রথম প্রহরে। রাত বারোটা বেজে নয় মিনিটে ঘোষক সরকার ফিরোজ উদ্দিন আহমেদ সমাপনী ঘোষণায় বলেন-

'এখন বাংলাদেশ সময় রাত বারোটা বেজে নয় মিনিট- আজ ২৪ শে মার্চ বুধবার। আমাদের অধিবেশনের এখানেই সমাপ্তি।'

এরপর পাকিস্তানি ফ্ল্যাগের সঙ্গে পাক সার জামিন শাদবাদের বাজনা বেজে উঠল।

এতক্ষণে রহস্য বোঝা গেল। ২৩ শে মার্চের প্রতিরোধ দিবসে বীর বাঙ্গালিরা টেলিভিশনের পর্দায় পাকিস্তানি পতাকা দেখাতে দেয়নি।

- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top