২৩শে মার্চ ঢাকার মিরপুরে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনাল দেখতে যাই আমি। ম্যাচটি ছিল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের। বিশ্বকাপের নিয়মানুসারে শুরুতে দুই দলের জাতীয় সংগীত হবে। জাতীয় সঙ্গীতের সময়ে দাড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনের নিয়ম থাকলেও ঠিক করলাম পাকিস্তানের জাতীয় সঙ্গীতের সময় দাড়াব না। যে জাতি আমাদের অস্তিত্ব চায়নি তাদের জাতীয় সঙ্গীতে সম্মান প্রদর্শন?
আমি বসে থাকলাম। শুধু আমি না,আমাদের গ্যালারির আরও অনেকেই আমার মত বসে আছে। খুব সম্ভব ৯/১০ বছরের একটা ছেলেকে দেখলাম থু ফেলাতে। চোখে মুখে রাজ্যের ঘৃণা! পাক সার জামিন সাদ বাদ শুরু হল। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে পুরো স্টেডিয়ামের বেশীরভাগ মানুষই দারিয়ে গলা মেলাল পাকিস্তানী খেলোয়াড়দের সাথে! রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে ওদের পাক সার জামিন সাদ বাদ শুনলাম।
পাকিস্তানের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের পালা। এবার আর কারো হুশ জ্ঞান নেই। বেশির ভাগ দর্শকই বসে পড়েছে। গ্যালারির শোরগোলের মধ্যেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গীত শেষ হল।
খুব ভাল খেলছিল পাকিস্তান। কিন্তু কে জানি চিৎকার করে বলল, পাকিস্তান ভুয়া! মুহূর্তের মধ্যেই পাকিস্তানের এক সমর্থক চিৎকার করে বলে উঠল, ইন্ডিয়া ভুয়া!! টেন্ডুলকার ভুয়া!! তার সাথে গলা মেলাল অনেকেই! বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো উমর গুল বারবার তাকিয়ে ঘটনা বুঝতে চেষ্টা করছিলেন।
ভাল করে খেয়াল করলাম পুরো গ্যালারি। পাকিস্তানের পতাকা উড়ছে। কারো হাতে কারো মুখে। এক বাচ্চার মুখের এক পাশে পাকিস্তানের পতাকা আঁকা। আরেক পাশে বুম বুম আফ্রিদি। অনেক তরুন-তরুণী পাকিস্তানের জার্সি পড়ে এসেছে খেলা দেখতে। একজন আবার পাকিস্তানের পতাকা হাতে গ্যালারির এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত দৌড়াচ্ছিলেন যার পিঠে আবার লেখা প্রজন্ম একাত্তর ! কয়েকদিন পরেই খুব সম্ভব প্রথম আলোতে পড়েছিলাম এই ম্যাচে পাকিস্তানের এতো সমর্থন দেখে পাকিস্তানের বিভিন্ন দৈনিকে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা ৭১ এ তাদের (আমাদের) ভুল বুঝতে পেরে পাকিস্তানি ভাইদের বুকে টেনে নিয়েছে। তারা আশা করছে অনেকদিন পর হলেও আবার দুই পাকিস্তান এক হবে!
গালাগালি দেয়া শুরু করলে নোট আর শেষ হবে না তাই চলুন এদের খোড়া যুক্তি গুলো দেখি আর তা খন্ডন করি -
যুক্তি ১: পাকিস্তান কে যদি এতই ঘৃণা করেন তাহলে তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করলেই হয়! রাষ্ট্রীয় ভাবে তাদের দেশে আমন্ত্রন জানানো হয় কেন?
খন্ডন ১: আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রপ্রধান যখন ইংল্যান্ডে যায় অথবা ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রপ্রধান যখন আর্জেন্টিনা যায় তখনও রাষ্ট্রীয় আতিথেয়তা দেয়া হয়, তাই বলে কোন আর্জেন্টাইন ইংল্যান্ডকে সমর্থন করেনা, তেমনি ইংল্যান্ড আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করেনা।
রাশিয়ার সাথে তো জার্মানীর ভালো সম্পর্ক, কারন জার্মানরা নিজেদের সংশোধন করছে, যুদ্ধের ক্ষতিপূরন ও দিয়েছে আবার মাফ চাইছে, সেই সাথে নিজের দেশের অপরাধীদের বিচার করছে।
পক্ষান্তরে ফাকিস্তান এখনো ক্ষমা চায় নি, আর দেয়ার মধ্যে দিয়ে গেছে কতগুলা পাকি জারজ, যারা বিভিন্ন ছুতায় ফাকিস্তানের গুনগান গায়।
যুক্তি ২: খেলা তো খেলাই। এর সাথে রাজনীতি মেশানোর কোনো দরকার নেই।
খন্ডন ২.১: খেলার সাথে রাজনীতি আলাদা করে দেখার কোন উপায়ই নেই। বাংলাদেশ দল বলেন বা ভারত বা ইংল্যান্ড, দুনিয়ার প্রত্যেকটা টীমই একটা রাষ্ট্রের বা রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিত্ব করে, আর রাষ্ট্র ব্যাপারটাই রাজনৈতিক। খেলার সাথে রাজনীতি যদি না-ই মিশত, তবে ভারত পাকিস্তান খেলা নিয়ে সবার এত আগ্রহ থাকত না, ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ার অ্যাশেজ নিয়া এত মাতামাতি হতনা। রাজনৈতিকভাবে বা সাংস্কৃতিকভাবে এরা শত্রু বলেই এদের খেলাগুলোতেও সেই উত্তাপ ছড়ায়।
খন্ডন ২.২: একটি কথোপকথন থেকে ব্যাপারটা আরও বোঝার চেষ্টা করি।
রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছি এক বন্ধুর সাথে … কথা হচ্ছে …
আমিঃ আচ্ছা ক্রিকেটে এখন World Champion কে রে?
বন্ধুঃ কেন অস্ট্রেলিয়া
আমিঃ অস্ট্রেলিয়া নাকি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম???
বন্ধুঃ একই তো কথা …
আমিঃ কেন এক হবে কেন? খেললো তো ওরা ১১ জন… বড়োজোড় দলের ১৫ সদস্য আর কোচ (যদিও অধিকাংশ কোচ অন্য দেশের হয়ে থাকে) কে World Champion বলা যাতে পারে … তাই বলে পুরো অস্ট্রেলিয়াকে!!!!!!
বন্ধুঃ আরে গাধা… এই যে বাংলাদেশের খেলা হচ্ছে তো ওরা কি শুধু ১১ জন খেলছে … আমরা !!! ওরা খারাপ করলে আমরা ১৬ কোটি মানুষ হতাশায় ডুবি … ওরা ভালো করলে ১৬ কোটি মানুষ সারা দিন রাত উল্লাস করি … এই যে ওদের সমর্থন এর জন্য কত কিছু … কেন করি … কারন ওদের সাথেই জরিয়ে আছে আমাদের সবকিছু … ওদের হাতেই আজ বাংলাদেশের পতাকা … ওরা বাংলাদেশ কে তুলে ধরছে সারা বিশ্ব এর কাছে।
আমিঃ তাই নাকি!!! আচ্ছা বন্ধু তাহলে অন্য দেশ গুলোও নিশ্চয় ওদের দেশ কে তুলে ধরার জন্য খেলে???
বন্ধুঃ তুই যে এতো গাধা আগে জানতাম না … শোন যে কোন খেলায় দেশ ভিত্তিতে কেন এসেছে জানিস??? ঐ দেশকে সারা পৃথিবীর সামনে তুলে ধরার জন্য … তাহলে তো শুধু একা একা খেললেই পারতো তাই না … আর আজকের যত নামি দামি খেলা যেমন - ফুটবল, ক্রিকেট এসব খেলা যে কিভাবে একটা দেশকে সারা বিশ্বের কাছে নিজের দেশ কে রিপ্রেজেন্ট করে চিন্তাও করা যায় না … এই যেমন ধর পৃথিবীর মানুষ কি বাংলাদেশ কে চিনতো … এই ক্রিকেট দিয়েই তো চিনলো …
আমিঃ হুম তাহলে ক্রিকেট শুধু ঐ ১৫ কে না পুরো জাতি বা দেশকেই তুলে ধরে??? আজ যদি বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জেতে তাহলে ওরা শুধু ১৫ জন ই বিশ্বকাপ জিতবে না … জিতবে পুরো জাতি … পুরো বাংলাদেশ!!!
বন্ধুঃ অবশ্যই …
আমিঃ আচ্ছা তোমার কি মনে হয় না ৭১ এর জন্য পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ???
বন্ধুঃ হঠাত এ প্রসঙ্গ?? উচিৎ তো … ওরা যা করেছে তা তো যুদ্ধ নয় গণহত্যা … নির্মম গণহত্যা … ওদের এই গণহত্যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল নিকৃষ্ট ঘৃন্যতম অপরাধ …
আমিঃ তাহলে যে তুমি ক্রিকেটে পাকিস্তান কে সমর্থন কর!!! আজ না পাকিস্তান নিয়ে কত লাফালাফি করলে!!!
বন্ধুঃ আরে ওটা তো ক্রিকেট … ক্রিকেটে সমর্থন করলেই কি পাকিস্থানকে সমর্থন করা হয় নাকি???
আমিঃ কেন তুমি যে বললে ক্রিকেট শুধু ১১ জন এর খেলা না … পুরো জাতির খেলা … ক্রিকেট রিপ্রেজেন্ট করে পুরো জাতি কেই??? বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বিশ্বকাপ জিতলে তা হবে বাংলাদেশের জয়??
খন্ডন ২.৩: একজন পাকিস্তান সাপোর্টার কে যদি জিজ্ঞেস করা হয় ভারত সাপোর্ট করেন না কেন- সেখানে তিনি অবশ্যই ভারতের বর্তমানে বাংলাদেশের সাথে অমানবিক আচরণের বিষয়টি তুলে আনবেন। সীমান্ত হত্যা, টিপাইমুখ সহ অনেক বিষয় আনবেন। তখন তাদের যদি বলা হয়- আপনি নিজেই তো রাজনৈতিক কারনে ভারত কে সাপোর্ট করছেন না- তো আমাকে কেন খেলার সাথে রাজনীতি মেশাতে নিষেধ করছেন???
খন্ডন ২.৪: বাংলাদেশ খেললে সাপোর্ট দেন কেন? নিজের "দেশ", নিজের "রাষ্ট্র" জিনিষটা কি একটা পলিটিক্যাল এনটিটি না?
খন্ডন ২.৫: মুক্তিযুদ্ধের কথা, আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের কথা বললে যারা শুধু "রাজনীতি" মনে করেন, তারা ইতিহাসের মানেও জানেন না, রাজনীতির মানেও জানেন না। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পেছনে রাজনৈতিক ভুমিকা কোনোভাবেই অস্বীকার করা না গেলেও শুধুই "রাজনীতি" বলে আমাদের দেশের ইতিহাস কে ছোট করা বড় ধরনের অপরাধ। খেলার মধ্যে শুধুই রাজনীতি নয়, আমাদের গৌরবময় ইতিহাস, আমাদের অস্তিত্বের কথাও সবারই মাথায় রাখা উচিত। আপনারা সামান্য একটা খেলার জন্যই যদি রাজনীতির ছুতা দিয়ে দেশ কে ভুলতে পারেন, তাহলে দেশের প্রয়োজনে তো আপনাদের খুজেই পাওয়া যাবে না।
খন্ডন ২.৬: কিছু সময়ের জন্য আপনাদের তথাকথিত রাজনীতি কে এক পাশে রাখলাম। কিন্তু জনাব- দেখে নিই আপনাদের 'খেলোয়াড়ি মানসিকতা'র দ্বারা পছন্দ করা দল নিজেরা কতটা খেলোয়াড়ি মানসিকতা সম্পন্ন -
প্রথমেই দেখি ‘ড্যাশিং’ খেলোয়াড় শহিদ আফ্রিদির চরিত্র। বছর কয়েক আগে এই শহিদ খান আফ্রিদি অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট মাঠে সবার সামনে আপেলের মত করে বল কামড়ে বলের আকৃতি বিকৃত করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন কয়েক ম্যাচ। মুখে দাড়ি রেখে বর্তমানে ধার্মিকের বেশ ধরা আফ্রিদি ২০০০ সালে সিঙ্গাপুরে কি যেন(!) করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে!
এরপরে আসি রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস খ্যাত স্পীড স্টার শোয়েব আক্তারের কথায়। বিতর্ক আর শোয়েব যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ক্যারিয়ারে যে কতবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন শোয়েব তা হয়তো তার নিজেরও জানা নেই। ইতিহাসের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বল টেম্পারিং করে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ২০০৩ সালে শ্রীলংকাতে অনুষ্ঠিত একটি ট্রায়াঙ্গুলার টুর্নামেন্টে। এছাড়াও সতীর্থ আসিফকে ব্যাট দিয়ে পিটানো, ইনজুরির নাম করে জাতীয় দল বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার লীগে গিয়ে ম্যাচ খেলা, ড্রাগ কেলেঙ্কারিতে জড়ানো শোয়েবের বিতর্কের কোন শেষ নেই।
২০০০ সালের দিকে ম্যাচ ফিক্সিং এ ধরা পড়ে ফাইন দিয়েছিলেন ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, মুশতাক আহমেদ এবং বর্তমানে অনেকের আদর্শ সাঈদ আনোয়ার। আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সেলিম মালিক এবং আতাউর রহমান।
২০১০ সালে ইংল্যান্ড সফরে পাকিস্তানি কয়েকজন খেলোয়াড় যা করেছে তা ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় কলঙ্কের জন্ম দিয়েছে। স্পট ফিক্সিং করে জেল খাটছেন সালমান বাট, মোহাম্মদ আসিফ এবং মোহাম্মাদ আমির। জুয়াড়ি মাজহার মাজিদের ভাষায় দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটার টাকা নারী খাবার ছাড়া কিছুই বোঝেনা।
আমাদের বিপিএল কেও কলঙ্কিত করেছে এই পাকিস্তানিরাই।
খন্ডন ২.৭: ১৯৭১ সালের এপ্রিলের দিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সাবেক এমপি মাইকেল বার্ন পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের ব্রিটেনে আসা আটকে দেন। পরবর্তীতে জুলাইয়ের দিকে পাকিস্তান এই সফর করতে পারে। ব্রিটেন তখনো বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা যুদ্ধকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ও বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী তখন লন্ডনে। দেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে বিশ্বজনমত গঠন করতে তিনি তখন অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও প্রবাসী নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিল, যে দেশের সেনাবাহিনী নির্বিচারে নিজ দেশের মানুষের ওপরই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে, সে দেশের কোনো ক্রীড়াদলের বিদেশের মাটিতে নির্বিবাদে খেলাধুলায় অংশ নিতে দেওয়া যেকোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষেই অনুচিত। তারা প্রতিটি ভেন্যুতেই পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কালো পতাকা প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা করলেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লন্ডনের বিখ্যাত লর্ডস, ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ড, লন্ডনেরই আরেক বিখ্যাত ক্রিকেট ভেন্যু দ্য ওভাল, বার্মিংহামের ট্রেন্টব্রিজ প্রভৃতি সব জায়গাতেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলেন ব্রিটেন প্রবাসী বাঙালিরা। বিব্রত হলেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। ব্রিটিশরা জানল, পাকিস্তানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি নেই। কোনো হাঙ্গামা নয়, চিৎকার করে প্রতিবাদ নয়, হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে টেস্ট ম্যাচগুলোর সময় কেবল বাঙালিরা জানিয়ে দিল, ওরা (পাকিস্তানিরা) আমাদের এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে, যেখানে দাঁড়িয়ে আমরা বাঙালিরা এখন আর পাকিস্তানকে নিজের দেশ হিসেবে কিছুতেই ভাবতে পারি না।
আজ ভারতের সাথে খেলার সময় একই ভাবে বি এস এফ এর হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ জানানোর কথা বলা হচ্ছে, খেলার সাথে রাজনীতির সম্পর্ক না থাকলে এই প্রতিবাদের ঘটনা ঘটতো না।
খন্ডন ২.৮: খেলা শুধুমাত্র খেলাই থাকে যখন তা পাড়ার মাঠের খেলা থাকে। কিন্তু যখন তা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হয় তখন তা আর শুধুমাত্র খেলা থাকেনা। একটি দেশের জাতীয় দল সেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। দেশের জাতীয় পতাকা বহন করে। দেশের জাতীয় দল যেখানে যাবে, দেশের পতাকা তুলে ধরবে। এই দলের সাফল্য-ব্যর্থতার সাথে পুরো জাতির হাসি কান্না জড়িয়ে থাকে। এইকারনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল কোন ম্যাচ জিতলে আমাদের পুরো জাতি জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে। হারলে দলের খেলোয়াড়দের মত পুরো জাতি শোকাচ্ছন্ন থাকে। দলের খেলোয়াড়েরাও যখন জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নামে তখন আর সে শুধুই একজন খেলোয়াড় থাকেনা, হয়ে যায় নিজ দেশের রাষ্ট্রদূত। নিজের দেশের জাতীয় দলের বিরুদ্ধে, জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে, পুরো জাতির বিরুদ্ধে যে সমর্থন করে সে কি রাজাকার নয়?
"নিজ দেশে খেললে দর্শকরা তাদের দলকে সমর্থন দেবেন এটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আমাদের খেলা হলেও গ্যালারি থেকে আমাদের পতাকা উড়িয়ে উৎসাহ দেওয়া হয়।"এ বক্তব্য পাকিস্তানি ক্রিকেটার আব্দুল রাজ্জাকের।
যুক্তি ৩: পাকিস্তান ভালো খেলে/খেলা ভালো লাগে।
খন্ডন ৩: নো কমেন্ট। ভালো লাগলে সাপোর্ট কর গিয়া। কিন্তু আমি বলবো তুমি খেলা বোঝ না। পাকিস্তান এমন বিশেষ কোন ভালো খেলে না । অস্ট্রেলিয়া - সাউথ আফ্রিকা - ইংল্যান্ড এরা পাকিস্তানের থেকে অনেক ভালো টিম। ভাল কি শুধু পাকিস্তানই খেলে? ভাল খেলার কথাই যদি ধরা হয় তাহলে সবার আগে আসবে অস্ট্রেলিয়ার নাম। ৪ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অসিরা। টেস্ট অথবা ওয়ানডে ক্রিকেট দুই ধরনের ক্রিকেটেই ওদের রেকর্ড যথেষ্ট সমৃদ্ধ।
যুক্তি ৪: পাকিস্তান প্রতিবেশী দেশ।
খন্ডন ৪: ভারত-শ্রীলংকা আরো নিকট প্রতিবেশী। এই যুক্তিতে পাকিস্তানের চেয়ে বেশি সাপোর্ট ভারত বা শ্রীলঙ্কা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। এশিয়ান টিমের কথা বললেও আগে আসবে ভারত-শ্রীলংকার নাম। দুই বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের রয়েছে বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ। সর্বোচ্চ ৫ বার এশিয়া কাপের চ্যাম্পিয়ন ভারত যেখানে পাকিস্তান এশিয়া কাপ জিতেছে মাত্র ১ বার। এশিয়ার টিম গুলোর মধ্যে একমাত্র ভারতই টেস্ট ক্রিকেটের গদা হাতে নিতে পেরেছে। শ্রীলংকা পাকিস্তানের মত ১ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও এশিয়া কাপ জিতেছে ৪ বার। বিশ্বকাপের সর্বশেষ ৫ আসরে ফাইনাল খেলেছে তিন বার, একবার সেমিফাইনাল। সবচেয়ে বেশি রান সেঞ্চুরি ভারতের শচীন টেন্ডুলকারের, সবচেয়ে বেশি উইকেট শ্রীলংকার অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের। তাহলে কেন পাকিস্তান সমর্থন? এর কারন ওরা পাকিস্তানি।
যুক্তি ৫: ধর্মীয় কারণ।
খন্ডন ৫.১: বিশ্বকাপ ফুটবলে সৌদি আরব, ইরান, তুরষ্ক, মিশর, মরোক্কো, তিউনিশিয়া সহ অনেক মুসলিম দেশই খেলে থাকে। সেখানে বেশির ভাগ লোককেই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা অথবা জার্মানি-ইটালি-স্পেন-ফ্রান্স বা নেদারল্যান্ড-পর্তুগাল এসব দলকেই সাপোর্ট করতে দেখা যায়। সুতরাং তাদের এটা ধর্মপ্রেম নাকি পাকি প্রেম সেটা অবশ্যই সন্দেহের বিষয়।
ফ্রান্স-জার্মানির কথা বললে আবার অনেকে বলবেন সেখানে জিদান-রিবেরি কিংবা ওজিলদের মত মতন মুসলিম খেলোয়াড়েরা খেলে থাকেন। তাদের বলি যে যুক্তিতে ওই ২/১ জনের জন্য ফ্রান্স বা জার্মানিকে সাপোর্ট করতে পারেন- সেই একই যুক্তিতে হাশিম আমলার জন্য সাউথ আফ্রিকা কেন সাপোর্ট করেন না? তিনি পাকিস্তানী নন বলে?
খন্ডন ৫.২: পাকিস্তানিদের মুসলিম কীসের বিবেচনায় বলছেন?? যারা অর্থের কাছে নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দেয়, যারা বল টেম্পারিং করে, যারা স্পট ফিক্সিং এ জড়িত থাকে, যাদের জীবনের প্রধান অনুষঙ্গ হল মদ আর নারী, যাদের দেশে প্রতিদিন বোমা হামলা হয়, যাদের দেশ গুগলে পর্ণ সাইট সার্চ করাতে নাম্বার ১ হয়েছে, যাদের দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রতিদিন মানুষ খুন হয় , যাদের মানবতা বলতে কিছু নেই, যারা প্রতিনিয়ত আমেরিকানদের পা লেহন করে, যারা জঙ্গিবাদীর জন্য পৃথিবীতে কুখ্যাত, যারা আমাদের দেশের মা বোনকে ধর্ষণ করেছে, যারা ৩০ লক্ষ নিরীহ বাঙ্গালীকে হত্যা করেছে, যারা আজ পর্যন্ত আমাদের কাছে ক্ষমা চায়নি। এরা নাকি তাদের ধর্মীয় আদর্শের দল!!!!
খন্ডন ৫.৩: বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তান খেললে পাকিস্তানকে কোন যুক্তিতে সাপোর্ট দেন? বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের খেলোয়াড়দেরকে কি আপনার মুসলিম মনে হয়না?
যুক্তি ৬: ধান ভানতে শিবের গীত এর মত ভারত টেনে আনা।
খন্ডন ৬: ভাব দেখলে মনে হয় ক্রিকেট পৃথিবীর দুইটা দেশই খেলে- ভারত আর পাকিস্তান। পাকিস্তানের বিরোধিতা করা মানেই নাকি ভারত সাপোর্ট করা!! এই জন্য নাকি তারা পাকিস্তান সাপোর্ট করেন !! হাউ ফানি !!
আবার অনেকে ভারতীয় বিএসএফের কথা তুলে ধরেন। যে বিএসএফ সীমান্তে যেভাবে বাংলাদেশী মানুষ হত্যা করছে তাদের দেশকে কিভাবে আমরা সাপোর্ট করি? এখানেও কি রাজনীতি চলে আসেনা? বিএসএফের এই সীমান্ত হত্যা অনেকে পাকিস্তানিদের ৭১ এর গনহত্যার সাথেও তুলনা করে থাকেন। বিএসএফের কোন অধিকার নেই এভাবে সীমান্তে হত্যা করা। কেউ অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার বিচার করা উচিত কিন্তু তাই বলে হত্যা-নির্যাতন তারা করতে পারেনা। কিন্তু আমাদেরও নিশ্চই উচিত নয় বেআইনি ভাবে ওদের দেশে প্রবেশ করা। ট্যাক্সের টাকা বাঁচাতে আমাদের দেশের অসহায় মানুষদের ওদের দেশে প্রবেশ করতে হয় আর এর জন্য বিএসএফের গুলিতে তারকাটায় ঝুলে থাকতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এই ঘটনা ঘটলেও আমাদের সরকার কোন ব্যবস্থাই নেয়নি মাঝে মাঝে প্রতিবাদ করা ছাড়া। এই সীমান্ত হত্যার দায় তাহলে কি শুধুই বিএসএফের? আমাদের সরকারের নয়?
কিন্তু বিএসএফের এই সীমান্ত হত্যার জন্য "পাকিদের সাথে তুলনা করে" ভারতকে ঘৃণা করা কতটা যুক্তিযুক্ত? ৭১ সালে ওদের সরকারের থেকে কোন অংশে কম ছিলনা ভারতীয় সাধারণ জনগনের ভুমিকা। যেখানে ভারতেই প্রতি বছর অনেক মানুষ না খেয়ে মারা যায় সেখানে আমাদের ১ কোটি শরণার্থীর খাদ্য-বস্ত্র-চিকিৎসা ইত্যাদি ওরাই দিয়েছিল। আমাদের পাশে ওদের সাধারণ জনগণই দাড়িয়েছিল। সীমান্তে হত্যার কথাও ওরা লুকিয়ে রাখেনি যা পাকিস্তান করেছিল ৭১ এ। কিন্তু ৪৭ থেকে ৭১ পর্যন্ত আমাদের প্রতি যে অন্যায় অবিচার পাকিস্তানিরা করেছিল তা কি পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের অজানা ছিল? সারা পৃথিবীর মানুষ যেখানে জানতো সেখানে নিজের দেশের মানুষের কথা ওরা জানতোনা এমন যুক্তি রীতিমত হাস্যকর। ২৩ বছরের বৈষম্যের কথা জানতোনা এখনো জানেনা আবার না জেনে ক্ষমা চাওয়ার কথাও বলে !
যুক্তি ৭: এতই যখন পাকিস্তান কে ঘৃণা করেন, ইংল্যান্ডও তো ২০০ বছর এ দেশ শাসন করেছে। তাদের কিছু বলেন না কেন?
খন্ডন ৭: প্রথমত ইংল্যান্ড ক্রিকেট টিম নিয়ে বাঙ্গালীদের এমন কোন আদিখ্যেতা নেই যে পাকিস্তানের মত তাদের ইংল্যান্ড এর কথাও মনে করিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া ইংল্যান্ড ২০০ বছর অত্যাচার করেছে বলে পাকিস্তান সাপোর্ট করতে হবে এটা হাস্যকর নয় কি??
যুক্তি ৮: পাকিস্তানের ক্রিকেট প্লেয়াররা তো আর গণহত্যার সাথে জড়িত ছিল না। ইমরান খান চান পাকিস্তান যেন ক্ষমা চায় বাংলাদেশের কাছে। তাই পাকিস্তান সাপোর্ট করা দোষের কিছু না।
খন্ডন ৮.১: ধরুন আপনার পরিবারের কোন সদস্যকে নির্মম ভাবে হত্যা করলো "এক্স" নামের একজন। তারপর সেই ব্যাক্তি একটা ক্রিকেট ক্লাব বানালো "এক্স ক্রিকেট ক্লাব" নামে যে ক্লাব কিনা ভাল খেলে। আপনার পরিবারের সদস্যকে হত্যাকারীর ক্লাবের প্লেয়াররা কিন্তু খুনি না। পারবেন আপনি সেই ক্লাবকে সাপোর্ট দিতে?? আপনার পরিবার ধ্বংস করে দেওয়া লোকটার ছেলেকে পারবেন আপন বলে বুকে জড়িয়ে নিতে যেখানে ছেলেটি ক্ষমা চায়নি?
খন্ডন ৮.২: জাফর ইকবাল স্যর এবং হূমায়ুন আহমেদ স্যরের বাবার হত্যাকারী ছিলেন পাকিস্তান অলিম্পিকের একজন চ্যম্পিয়ন, যিনি পরবর্তীতে পাকি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ক্যাপ্টেন হন।
হ্য ভাইয়া, তাদের খেলোয়াড়রাও আমাদের দেশের নীরিহ মানুষকে মারতে নেমেছিল।
খন্ডন ৮.৩: অরুন নন্দী নামের চাদপুরের এক সাতারু ১৯৭১ সালের ৮ অক্টোবর বিশ্ববিখ্যাত বাঙ্গালী সাতারু ব্রজেন দাশের তত্ত্বাবধানে কলকাতা কলেজ স্কোয়ারের পুকুরে সাতার কাটতে নামেন। তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন আদায়। ৯০ ঘন্টা ৫ মিনিট সাতার কেটে তিনি বি.সি মোরের ৮৮ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট একটানা সাতার কাটার রেকর্ড ভেঙ্গে দেন।
হ্য ভাইয়া, সেদিন থেকে নির্দিষ্ট হয়ে গেছে, বাংলাদেশী খেলোয়াড়রা যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের যোদ্ধা তার মানে পাকিস্তানী খেলোয়াররাও পাকযোদ্ধা।
খন্ডন ৮.৪: পাকিস্তান আমলে গানস অ্যান্ড মুর ব্যাটে জয় বাংলা লেখা ও স্বাধীন বাংলার মানচিত্র আঁকা স্টিকার নিয়ে খেলতে নেমেছিলেন রকিবুল হাসান। এর ফলশ্রুতিতে মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই রাকিবুল হাসানের নামে পাকবাহিনী হুলিয়া জারি করেছিল।
হ্য ভাইয়া, একজন খেলোয়াড়কেও তারা ছাড়েনি। আমরা কেন খেলাকে জাতীয় জীবন ও রাজনীতি থেকে আলাদা করবো?
খন্ডন ৮.৫: অনেক বাঙ্গালী মেয়েই ষ্টেডিয়ামে পাকি জার্সী গায়ে দিয়ে “ম্যরী মী আফ্রিদী” লেখা প্ল্যকার্ড হাতে ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু একটা পাকি মেয়েকেও দেখবেন না ম্যরী মী সাকিব লিখে ঘুরেছে। অথচ সাকিব বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার এবং দেখতে শুনতেও অনেক বেশি স্মার্ট ও কিউট।
হ্য ভাইয়া, আপনারা জাতশত্রুর পা চেটে তার ভাই হতে পারবেন না, পোষা কুকুরের মতই গন্য হবেন।
খন্ডন ৮.৬: আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির নাম পাকিস্তান, পাকি ক্রিকেট টীমের নামের শুরুতেও পাকিস্তান শব্দটা আছে। এটাই কি পাকি টীম ঘৃনা করতে অনেক বড় ও যুক্তিসঙ্গত কারন নয়?
খন্ডন ৮.৭: আজকে রাজনীতিতে এসে পাকিস্তানের ক্রিকেট নায়ক ইমরান খান ৭১ এর ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়া উচিত মনে করেন। কিন্তু ১৯৭১ সালে কোথায় ছিলেন এই ইমরান খান? নিজ কানে নাকি তিনি বাঙ্গালীদের হত্যা করার নির্দেশ শুনেছিলেন। একজন আন্তর্জাতিক সেলিব্রেটি হয়ে তার কি তখন কিছুই করার ছিলনা? তখন তো এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। তাহলে এখন কেন? বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা করবেন এই আশায়?
ভণ্ড ইমরান খান সাহেব মনে আছে আপনি কেন ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে ধাওয়া খেয়েছিলেন? আপনার মনে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বিস্মৃতি বাঙালীর জীবনে এত ঘটনাই ঘটে যে তারা ভুলে যায় অকালে। তাইতো এরা পাকিস্তানের পতাকা মুখমণ্ডলে আকে –আফ্রিদি বুম বুম করে।
পাকিস্তানী একটি দলের সাথে খেলতে এসে চট্টগ্রামে নেমেই বাংলাদেশীদের প্রতি নমস্কার বলে উপহাস করেছিলেন ইমরান। জনতা তাকে ধাওয়া করে। ইমরান বোঝাতে চেয়েছিলেন আমরা হিন্দু হয়ে গেছি। এমনতর সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির মুখে ভালো ভালো কথা শুনতে ভালোই লাগে। শোনা যায় নিয়াজির ভাতিজা আপনি তাই কষ্টটা একটু বেশী লাগছে আপনার। সম্প্রতি কাদের মোল্লা ইস্যুতেও আপনার বাংলাদেশবিরোধী কথাবার্তা শুনে বোঝা গেল মুখে মিষ্টি কথা বললেও আপনি এত বছরেও শুধরাননি।
যুক্তি ৯: বাপ চাচাদের পাপের ফল নেক্সট জেনারেশন বহন করবে কেন?
খন্ডন ৯: বহন করবে এই কারণেই যে তারাও তাদের বাপ চাচাদের পাপের জন্য বিন্দু মাত্র দুঃখিত না। সেইটা যারা দেশের বাইরে থাকেন তারা খুব ভালভাবেই জানেন।
যুক্তি ১০: ভারতের শেবাগ, সিধু বাংলাদেশ কে নিয়ে অবমাননাকর কথা বলেছে।
খন্ডন ১০: এইটা পাকিস্তান সাপোর্টের পক্ষে কোন যুক্তি হতে পারে বলে মনে করি না। এটা যারা ভারত সাপোর্ট করে তাদের বিপক্ষে দেয়া যায়। তারপরও তাদের মনে করিয়ে দিতে হয়- রশীদ লতিফ বলেছিল- আফগানিস্তান বাংলাদেশের থেকে ভাল দল। শোয়েব আখতার লিখেছিল- বাংলাদেশের টেস্ট খেলার যোগ্যতা নেই। রমিজ রাজা ধারাভাষ্য কক্ষে বসে বারবার বাংলাদেশ বিরোধী মন্তব্য করতে থাকে। পাকিস্তানের ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে যেখানে কোন দলই সফরে যায়না সেখানে তারা বাংলাদেশকে নিতে চেয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার সাথে তারা নিরপেক্ষ ভেন্যুতে খেলার জন্য প্রস্তুত থাকলেও বাংলাদেশের বেলায় ছিল না। এরপর বাংলাদেশ বিপিএল থেকে পাকিদের বের করে দিলে রমিজ রাজা বলে বসে, "ক্রিকেটে বাংলাদেশের এমন কোন প্রভাব নেই যে পিসিবির তাদের পা ধরতে হবে।" এরপরেও যদি আপনারা পাকিস্তান সাপোর্ট করতে পারেন- তো আপনারা সিধু আর শেবাগ কে সমালোচনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।
রেফারেন্স:
1. http://www.somewhereinblog.net/blog/berserk/29350580 (কমেন্ট অংশ)
2. http://www.somewhereinblog.net/group/wcc2011/29350658 (কমেন্ট অংশ)
3. http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=22932
4. http://www.somewhereinblog.net/blog/krisnonagor/29350486
5. নাজিব আলমের লেখার কিছু অংশ
Post a Comment Blogger Facebook