- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার উদ্দেশ্যে পিপলস পার্টি প্রধান ভুট্টো করাচী থেকে ঢাকা আগমন করেন। ঢাকা বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা কামরুজ্জামান, তাজউদ্দিন আহমদ ও জহীরুদ্দিন। পিপলস পার্টির কর্মী, সমর্থকগণ বিভিন্ন শ্লোগান সহকারে বিমানবন্দরে ভুট্টোকে অভ্যর্থনা জানায়। ঢাকা পৌঁছার পর ভুট্টো বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মরণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পরিদর্শন করেন।
- ভুট্টো তেজগাঁও বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ভি আই পি লাউঞ্জে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। আলোচনাকালে আওয়ামী লীগ যদি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করে তাহলে তাঁর মনোভাব কি হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে আমি শ্রদ্ধা করি।” তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের পক্ষে সরকার গঠন এবং পরিচালনা করা সম্ভব, কিন্তু একটি ফেডারেল রাষ্ট্র কাঠামোর শাসনতন্ত্র প্রণয়নের ব্যাপারে “ঐকমত্যই হচ্ছে গণতন্ত্রের সারবস্তু।” ভুট্টো আওয়ামী লীগের ৬-দফা পড়ে দেখেছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনি কি মনে করেন আমি আমার ঘরের পড়াশুনা করি না।”
- ৬-দফার প্রথম দফাটি তিনি যেখানে মেনে নিয়েছেন, সেখানে বাকি ৫টি দফা সম্পর্কে তাঁর মনোভাব কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, পাঁচটি দফা আলোচনা করা হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আর কিছু বলবেন না। কারণ এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে এবং আওয়ামী লীগের সাথে তাঁর আলোচনা বিঘ্নিত হতে পারে।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুট্টো শাসনতন্ত্র বিষয়ে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তান সময় সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে এবং শেষ হয় ৮টা ২৫ মিনিটে। ৭৫ মিনিট স্থায়ী এই বৈঠকে তাঁদের সাথে কোন সহযোগী ছিলেন না। বৈঠক শেষে ভুট্টো প্রথমেই অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা বহু বিষয়ে আলোচনা করেছি।” বঙ্গবন্ধু বলেন, “আমরা সবেমাত্র আলোচনা শুরু করেছি এবং তা অব্যাহত রাখবো।” বঙ্গবন্ধু এবং ভুট্টো যখন বৈঠক চালাচ্ছিলেন তখন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, কামরুজ্জামান প্রমুখ আওয়ামী লীগ নেতা এবং পিপলস পার্টির অন্যান্য নেতা অপর একটি কক্ষে অপেক্ষা করছিলেন। আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম একবার বৈঠক কক্ষে কয়েক মিনিটের জন্য ঢুকে বের হয়ে আসেন।
- পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস এডমিরাল এস.এম. আহসান ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পূর্ব পাকিস্তান পুলিশ বাহিনীর বার্ষিক কুচকাওয়াজে বক্তৃতাকালে পুলিশ বাহিনীকে জনসাধারণের জন্য ন্যায়বিচার ও নিরপেক্ষতার সাথে কর্তব্য পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। গভর্নর পুলিশ বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন এবং সাহসিকতার জন্য কায়েদে আজমপুলিশ পদক ও প্রেসিডেন্টের পুলিম পদক বিতরণ করেন। গভর্নর বিগত নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, স্থিতিশীল সমাজব্যবস্থা ছাড়া দেশের অগ্রগতি হতে পারে না। কাজেই পুলিশ বাহিনীকে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য গুরুত্ব পূর্ণ ভুমিকা পালন করতে হবে।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook