২৯ জানুয়ারি, ১৯৭১
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভুট্টোর প্রাথমিক আলোচনা ঢাকায় শেষ হয়েছে। তাঁরা শাসনতন্ত্র প্রণয়নসহ বিভিন্ন জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আলোচনায় কেউ মতৈক্যে পৌঁছতে পারেন নি। উভয়েই আরও আলোচনার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। ভুট্টো আওয়ামী লীগের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করবেন। তিনি ঢাকা ত্যাগের আগে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তৃতা করবেন এবং সেখানে ব্ঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর আলোচনার ধরন সম্পর্কে আভাস দিবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
- বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে ১৫ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বানের পরামর্শ দিয়েছেন বলে এ পি পি পরিবেশিত খবরে প্রকাশ। বঙ্গবন্ধু ভুট্টোর সাথে আজ তৃতীয় ও শেষ দফা বৈঠকের পর সাংবাদিকদের জানান, তিনি ভু্ট্টোকেও একথা বলেছেন যে,শাসনতন্ত্র প্রণয়ণের জন্য এবং একটি বেসামরিক সরকার গঠন তরান্বিত করার জন্য অবিলম্বে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহূত হওয়া দরকার।
- ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকা সফরকালে ভুট্টো সমবেত জনতার উদ্দেশে ভাষণদানকালে বলেন, কিছু সংখ্যক লোক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও জনপ্রতিনিধিদের ক্ষমতায় যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। পিপলস পার্টির নেতা ডা. মোবাশির আলী ভুট্টোর সাথে উপদ্রুত এলাকা সফর শেষে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য প্রকাশ করেন। ভুট্টো তাঁর দলের সাতজন সদস্য প্রাদেশিক রিলিফ কমিশনার আসাদুজ্জামান ও জনৈক সামরিক অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে একটি সামরিক বিমানে করে ঘূর্ণি উপদ্রুত এলাকা সফর করেন। পটুয়াখালীতে একটি আইনজীবী প্রতিনিধিদল ভুট্টোর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
- সিন্ধু জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন ও বেলুচ জাতীয় ছাত্র ফেডারেশন যৌথভাবে আইনগত কাটামো আদেশ(এল এফ ও) বাতিল এবং পাকিস্তানের সকল ফেডারেটিং ইউনিটের পূর্ণ প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবী জানান। সিন্ধু জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মেহের হোসেন শাহ এবং বেলুচিস্তান জাতীয় ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি নাসির বালুচ করাচীতে ডাউ মেডিক্যাল কলেজ ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই মর্মে যৌথভাবে অভিমত প্রকাশ করেন যে, পাকিস্তান একটি বহু ভাষাভাষী দেশ। তারা সিন্ধী, পাঞ্জাবী, পাখতুন ও বেলুচী ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দানের দাবী জানান।
- চট্টগ্রামে লালদীঘি ময়দানে বজলুস সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বক্তৃতাদানকালে বলেন, “বাংলার জনগণ অবশ্যই স্বাধীন ও সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করবে। এ জন্য বাঙালিরা যে কোন মূল্যদান এমনকি চরম ত্যাগ করতে হলেও পশ্চাদপদ হবে না।” তিনি বলেন, একমাত্র সমাজতন্ত্রই বাংলার মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারে। সমাজতন্ত্র অনুসরণ ছাড়া ফেরেস্তাও যদি ক্ষমতা গ্রহণ করেন তথাপি বাংলার কৃষক ও শ্রমিকের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না।
- কৃষক শ্রমিক রাজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিপ্লব অপরিহার্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এছাড়া সাধারণ মানুষের সর্ববিধ মঙ্গল সাধিত হতে পারে না । এই পর্যায়ে জনসভায় দলীয় কর্মীগণ শ্লোগান দেন—‘মুক্তির একই পথ বিপ্লব বিপ্লব’। তিনি জয়বাংলা শ্লোগানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা না করার জন্য নব-নির্বাচিত আইন পরিষদ সদস্যদের হুঁশিয়ার করে দেন। জনসভায় তিনি লাহোর প্রস্তাব ব্যাখ্যা করেন এবং গত ২৩ বছর যাবৎ পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অবিচারের কাহিনীও বর্ণনা করেন।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook