- বঙ্গবন্ধু ও ভুট্টোর মধ্যে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল-এ ভুট্টোর কক্ষে দ্বিতীয় দফা রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শুরু হয় বিকাল পৌঁনে পাঁচটায় এবং শেষ হয় ৫টা ৫৫মিনিটে। দীর্ঘ ৭০ মিনিটকাল আলোচনার পর তা আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবী রাখা হয়। জাতীয় পরিষদ অধিবেশনের তারিখ নির্ধারণ সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না এ প্রশ্নের জবাবে ভুট্টো বলেন, “আমাদের আলোচনার ক্ষেত্র বিশাল--তার কিছু আমরা আলোচনা করেছি আর বহু বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো।”
- অপর এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, “জাতীয় সকল সমস্যা নিয়ে আমরা আলোচনা করছি।” তাঁদের আলোচনা সন্তোষজনক বলে জানা গেছে। তবে তাঁরা কি আলোচনা করেছেন তা প্রকাশ পায়নি।
- পূর্ব পাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম(হাজারভী)-এর সভাপতি পীর মোহসেন উদ্দিন আহমদ (দুদুমিয়া) এক বিবৃতিতে মুজিব-ভুট্টো বৈঠকের সাফল্য কামনা করেছেন বলে এ পি পি’র খবরে প্রকাশ।
- তুরস্কের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এহসান সাবরী কাগলায়াঙ্গীল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন।
- মওলানা ভাসানী ফেনীতে এক জনসভায় বক্তৃতাকালে বলেন, কেবলমাত্র লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই পশ্চিমাঞ্চলীয়দের সকল প্রকার শোষণ বন্ধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, পাক-ভারত উপমহাদেশের ১০ কোটি মুসলমানের প্রতিনিধি উক্ত প্রস্তাবে সম্মতি দান করেন। তিনি লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠনের দাবী জানান এবং বাঙালীরা যাতে সব রকমের শোষন থেকে মুক্তি পেতে পারে তার জন্য তিনি লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের দাবী জানিয়ে আসছেন। ৭ কোটি বাঙালির আশা আকাঙ্খা পূরণ করার জন্য তিনি নবনির্বাচিত এম এন এ’দের প্রতি আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধুর প্রতি আশীর্বাদ জ্ঞাপন করে তিনি বলেন, খোদা যেন শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশের অশুভ শক্তির মোকাবেলা করার মতো শক্তি দান করেন। আওয়ামী লীগের সাথে সংঘর্ষে না আসার জন্য তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দেন। নব-নির্বাচিত এম এন এ’দের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মওলানা ভাসানী বলেন, তাঁরা বাংলার জনগণের দাবী পূরণ না করলে বাঙালিরা তাঁদের ক্ষমা প্রদর্শন করবে না।
- ইরানের সফররত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরদেশীর জাহেদী সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ভুট্টোর সাথে এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর ধানমন্ডিস্থ বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন। জাহেদী ভুট্টোর সাথে ৭০ মিনিট এবং বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রায় আধা-ঘন্টা অতিবাহিত করেন বলে এ পি পি, ও এনা পরিবেশিত খবরে প্রকাশ।
- সিন্ধুর গভর্নর লে. জেনারেল রাখমান গুল একদিনের সফরে এসে শুক্কুর রেল স্টেশনে সাংবাদিকদের কাছে মন্তব্য করে বলেন, ভাষা এমন একটি সমস্যা নয়, যা নিয়ে এস্তরে একটি আন্দোলন যুক্তিযুক্ত হতে পারে।এ ধরনের আন্দোলনের কোন কারণ আমি খুঁজে পাই না, যদি না এর পিছনে কোন মতলব থাকে। গভর্নর বলেন, ভাষা সমস্যাটি গণতান্ত্রিকভাবে নিষ্পতি করা যেতে পারে। আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করেছি, এই প্রতিনিধিরা আইন পরিষদে বসে গণতান্ত্রিকভাবে এই সমস্যাটির নিষ্পতি করতে পারেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ভাষা সমস্যার মতো সমস্যাগুলো সাধারণত পরিষদেই নিষ্পতি হয়ে থাকে বলে তিনি জানান।
- ঢাকার হাইকোর্টের ৩২ জন আইনজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে ঘূর্ণিদুর্গদের সাহায্যে এ যাবৎ প্রাপ্ত অর্থ ও সাহায্য দ্রবাদি যেখানে যা ব্যয় করা হয়েছে তা-সহ সমুদয় প্রাপ্ত রিলিফের পূর্ণ হিসাব প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান। তাঁরা একই সঙ্গে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রদত্ত বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ যেসব এলাকায় যে যে শর্তে ব্যয় করা হয়েছে তা-সহ প্রাপ্ত সকল বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণের পূর্ণ হিসাব প্রকাশের জন্যও পাকিস্তান সরকারের কাছে দাবী জানান।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook