১৭ জানুয়ারি, ১৯৭১
- পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেন, তাঁর দল জনগণের কাছ থেকে অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন এবং দৃঢ়ভাবে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পক্ষে ম্যান্ডেট লাভ করেছে। তিনি তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন, নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে উল্লেখযোগ্য সমঝোতায় আসতে তাঁর দল চেষ্টার কসূর করবে না। টেলিভিশনে ন্যাশনাল আওয়অমী পার্টির খান আবদুল ওয়ালী খান, কাইয়ুম মুসলিম লীগের সভাপতি মিয়া মমতাজ মোহাম্মদ খান দৌলতানাসহ অন্যান্য দলীয় নেতারও নির্বাচনোত্তর সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়।
- প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দুই দিনব্যাপী লারকানা সফরের উদ্দেশ্যে করাচী থেকে মহেঞ্জোদারো বিমানবন্দরে পৌঁছার পর সাংবাদিকদের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। তিনি তাঁর দৃঢ় অবস্থার পুনরুল্লেখ করে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শসিনতন্ত্র প্রণয়ন সমাপ্ত হবে। আলোচনাকালে প্রেসিডেন্ট বরেণ, তিনি ইচ্ছা করে শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকিস্তানের ভাবি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নামকরণ করেননি। কিন্তু তিনি তাই পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা এবং পার্লামেন্টারী পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাই প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকেন। যাই হোক , শেখ মুজিব প্রধানমন্ত্রী নাও হতে পারেন। আমি তাঁকে জোর করতে পারি না বলে তিনি উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য প্রেসিডেন্ট লারকানা সফরকালে ভুট্টো সাথে বৈঠক করবেন। ভুট্টোর পর আর কোনো নেতার সাথে বৈঠকে বসবেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সব গোপন কথা বলে দেব না, এ ব্যাপারে কিছু করার সময় হয় নি। প্রেসিডেন্টকে ভুট্টোর সাথে বৈঠক সম্পর্কে বলতে অনুরোধ করলে তিনি বলেন, আমি জনাব ভুট্টোর অতিথি। তিনিই আগে কিছু বলবেন, আমি পরে কিছু বলতে পারি। এসময় ভু্ট্টো যোগ দিয়ে বলেন, রাষ্ট্রপ্রধানই বলার বিষয় ঠিক করবেন।
- ভুট্টোর লারকানাস্থ বাসভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও ভুট্টো এক দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হন। তাদের দু’জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয় সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। তবে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের কাছে ভুট্টো সন্ধ্যার দিকে প্রেরিত এক বাণীতে বলেন, আজ সংবাদপত্রের জন্য বলার কিছু নেই। আগামীকাল কিছু বলা যাবে। অবগত মহলের মতে বৈঠক ভুট্টো ও প্রেসিডেন্টের মধ্যে বেশীরভাগ সময় সীমাবদ্ধ থাকে। তবে কিছুক্ষণের জন্য সেনাবাহিনীর চীফ অব স্টাফ জেনারেল আবদুল হামিদ খান ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গী লে. জে. পীরজাদা বৈঠকে যোগ দেন।
- আজ থেকে প্রদেশব্যাপী ‘১১দফা সপ্তা’ শুরু। পূর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ১১-দফার শহীদদের মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণের মাধ্যমে প্রথম দিনের অনুষ্ঠানের সূচনা করবে। ১১-দফা সপ্তাহের প্রতিটি কর্মসূচিকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্য ছাত্র ইউনিয়ন সকল ছাত্র-ছাত্রী ও জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগও ১১-দফা সপ্তাহ পালনে সকাল সাতটায় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কালো পতাকা উত্তোলন ও কালো ব্যাজ ধারণের মাধ্যমে প্রথম দিনের কর্মসূচি পালন করবে।
- মওলানা ভাসানী পাঁচবিবিতে তাঁর নিজ বাসভবনে এক সাক্ষাৎকারে লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ়তা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, পূর্ব পাকিস্তান সব সময় শোষিত হয়েছে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের কায়েমী স্বার্থবাদী মহল ও শাসক শ্রেণী দ্বারা নিপীড়িত হয়েছে। এই শোষণ নিপীড়ন লাহোর প্রস্তাব বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বন্ধ হতে পারে বলে তিনি দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন। ভাসানী অধিকৃত- কাশ্মীরে শেখ আবদুল্লাহ ও তাঁর সহযোগীদের উপর কাশ্মীরে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা করেন। তিনি এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবী জানান। দ্রব্যমুল্র বৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে দোষীদের গ্রেফতার করার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানান। তিনি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলিতে অনিয়মিত ট্রেন চলাচলের সমালোচনা করে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত দাবি করেন।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook