১১ ডিসেম্বর, ১৯৭১
- লে. জেনারেল নিয়াজী ঢাকা বিমান বন্দর পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি বিমান বিধ্বংসী কামানের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। নিয়াজী বলেন, কোনক্রমেই শত্রুকে কাছে ঘেঁষতে দেয়া চলবে না। তিনি আশা প্রকাশ করেন, পাকবাহিনী তাদের ঐতিহ্যকে আরো উজ্জ্বল করবে। পরে বিমানবন্দরে তিনি বিদেশী সাংবাদিকদের সঙ্গে সর্বশেষ যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেন।
- জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্থাপিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবার জন্য জোর দাবি জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র রোনাল্ড জিগলার বলেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রস্তাব মেনে নেয়া ভারত-পাকিস্তান উভয়ের জন্যই অত্যাবশ্যক। তিনি জানান, প্রেসিডেন্ট নিক্সন এ-ব্যাপারে নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা কিসিঞ্জারের সাথে পরামর্শ করেছেন।
- মুক্তিবাহিনী দেশের বিস্তীর্ণ এলাকা মুক্ত করে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা অব্যাহত রাখে। হিলি সীমান্তে মিত্রবাহিনী প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়। পাকবাহিনীর সাথে তুমুল লড়াই অব্যাহত থাকে। সন্ধ্যায় সম্মিলিত বাহিনী বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের মধ্যবর্তী গোবিন্দগঞ্জে শক্তিশালী পাকঘাঁটির ওপর সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। সারারাত যুদ্ধের পর পাকবাহিনী ভোরের দিকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।
- জামালপুর গ্যারিসন সম্মিলিত বাহিনীর কাছে অস্ত্র সমর্পণ করে। জামালপুরের পূর্বে হালুয়াঘাট এলাকায় প্রচন্ড সংঘর্ষের পর পাকবাহিনীর আর একটি বিগ্রেড প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে অস্ত্র গোলাবারুদ ফেলে টাঙ্গাইলের দিকে পালিয়ে যেতে শুরু করে। পলায়নের সময় শত্রুবাহিনী রাস্তার সমস্ত বড় বড় সেতু ধ্বংস করে দিয়ে যায়। অপরদিকে ময়মনসিংহে অবস্থানরত শত্রুবাহিনীর আর একটি বিগ্রেড শহর ত্যাগ করে টাঙ্গাইলে তাদের প্রতিরক্ষামূলক ঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সম্মিলিত বাহিণী রাতে বিনা প্রতিরোধে জামালপুর দখলে নেয়।
- জাতিসংঘের অনুরোধে মিত্রবাহিনীর বিমান হামলা সকালে সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়। উদ্দেশ্য বিদেশী নাগরিকদের ঢাকা ত্যাগের ব্যবস্থা করার জন্য বিমানবন্দর মেরামতের সুযোগ করে দেয়া। সন্ধ্যায় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী যুদ্ধ বিরতি ও পাকিস্তানীদের ঢাকা থেকে অপসারণের ব্যবস্থা করার জরুরি আবেদন জানান।
- ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, যদিও পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধাবস্থা খুব ভালো নয় তারপরও আমাদের আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না।
- এদিকে ঢাকায় বিকাল তিনটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সান্ধ্য আইন জারী করা হয়।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.