০১ নভেম্বর, ১৯৭১
- ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী একদল পাকসেনাকে বেলছড়ি নামক স্থানে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত ও ৫ জন আহত হয়।
- মুক্তিবাহিনী যশোর জেলার নোয়াপাড়ায় পাকবাহিনীর একদল সৈন্যকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর ৬ জন সৈন্য নিহত ও ৪ জন আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
- সিলেটে ‘জেড’ ফোর্সের যোদ্ধারা মিত্রবাহিনীর দুই ব্যাটালিয়ান সৈন্যসহ পাকসেনাদের ধলাই বিওপি এবং ফ্যাক্টরী ঘাঁটির ওপর প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর ৩০তম ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের ২ কোম্পানী সৈন্য (প্রায় ২০০ জন) নিহত ও অনেক সৈন্য আহত হয়।
- ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনী একদল যোদ্ধা কাহুর নামক স্থানে পাকসেনাদের একটি দলকে এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর ২ জন সৈন্য নিহত ও ৩ জন আহত হয়।
- ময়মনসিংহ জেলায় মুক্তিবাহিনীর একটি এ্যামবুশ দল বিড়িসিড়ি- বিজয়পুর সড়কে মাইন পুঁতে ওৎ পাতে। পাকসেনাদের একটি দল এ্যামবুশ এলাকায় এলে মাইন বিস্ফোরণে ১ জন পাকসেনা নিহত হয়।
- লন্ডনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের মধ্যে বাংলাদেশ প্রশ্ন নিয়ে দুই ঘন্টাব্যাপী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান লন্ডনের ‘ডেইলী মেইল’-এর সাথে সাক্ষাৎকারে বলেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ আসন্ন। ভারত-পাকিস্তান আক্রমণ করলে চীন তা সহ্য করবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থ কেবল পাকিস্তান খন্ড-বিখন্ড নয়, সেই সাথে হবে ভারতীয় ইউনিয়নের অবসানের সূচনা।
- প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার কৃষি ও পূর্ত উপদেষ্টা এম.এইচ. সূফী সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশে দুর্ভিক্ষের আশংকা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন কেননা পূর্ব পাকিস্তানে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই।
- জাতিসংঘের মহাসচিব উ’থান্টের সঙ্গে সাধারণ পরিষদে পাকিস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতা মাহমুদ আলী সাক্ষাৎ করেন।
- নির্বাচন কমিশন জানায়, আরো ৩ জন উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াতে জাতীয় পরিষদে মোট নির্বাচিতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৫ জন। অর্থাৎ মাত্র ২৩টি আসনে নির্বাচন হবে।
- ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী লন্ডনে ভারতীয়দের এক সমাবেশে বলেন, তিনি বৃটেনকে তার প্রভাব বিস্তার করে বাংলাদেশ প্রশ্নের একটি রাজনৈতিক মিমাংসা ও উদ্বাস্তু সমস্যার একটি সুষ্ঠু সমাধানের জন্য পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছেন। যুদ্ধ বাধুক ভারত তা কখনো চায় না। কিন্তু এ জন্য ভারত তার জাতীয় স্বার্থকে কখনো ক্ষুন্ন হতে দিতে পারে না। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের দ্রুত একটি নিষ্পত্তি করতে হবে। সীমান্ত পরিস্থিতি দেখে মনে হতে পারে বাংলাদেশ থেকে দলে দলে লোক চলে আসার ফলে এটা হয়েছে কিন্তু বাংলাদেশ সমস্যা এর চেয়েও জটিল।
- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জাতি চাইলে বেআইনী আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির প্রশ্নটি তিনি বিবেচনা করে দেখতে পারেন। তিনি বলেন, বর্তমানের বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিকে তিনি আর বিস্তৃত করতে চান না, তবে ভারত যদি পাকিস্তানের এলাকা দখলে দুস্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) অস্ত্রশস্ত্র ও মদদ দান অব্যাহত রাখে এবং ক্রীড়নক বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তবে যুদ্ধ বাধবে।
- নুরুল আমিন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। সন্ধ্যায় তিনি বিমান বন্দরে সাংবাদিকদের জানান, খসড়া শাসনতন্ত্রে পিডিপি-র ৮ দফা মেনিফেস্টো অন্তর্ভুক্ত করার দাবী তিনি প্রেসিডেন্টের কাছে জানাবেন।
তথ্যসূত্রঃ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook