![]() |
রোজ তিন-চারটে খবরের কাগজ না দেখলে আমার ভালো লাগে না। ওদের মিথ্যে বানোয়াট খবরের ভেতর থেকে আসল খবর বের করে আনতে আমার খুব মজা লাগে। যেমন গত পরশুর কাগজে দেখলাম: ‘খ’ অঞ্চলের সামরিক শাসনকর্তা অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এম.এ.জি ওসমানীকে ২০ মে’র মধ্যে এক নম্বর সেক্টরের উপসামরিক শাসনকর্তার সমীপে হাজির হবার নির্দেশ দিয়েছে।
তার মানে, কিছুদিন থেকে যে স্বাধীন বাংলা বেতারে মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এম.এ.জি ওসমানীর নাম শোনা যাচ্ছে, তারই সমর্থনে পূর্ব পাকিস্তানি কাগজে এই খবর!
‘কাজে যোগদান সংক্রান্ত সামরিক আদেশের ব্যাখ্যা’ এখনো কাগজে প্রকাশিত হয়ে চলছে! ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ সর্বত্র অফিস-আদালতে, কলে-কারখানায় নাকি সব দলে দলে যোগ দিয়ে দৈনন্দিন কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সে সবের ছবিসহ খবরও অনেক ছাপা হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তাহলে এখনও কাজে যোগদান সংক্রান্ত বিষয়ে এত আদেশ- আবার সে আদেশের ব্যাখ্যা এসব কেন? বোঝাই যাচ্ছে সিকিভাগ লোক ওরা মেরে ফেলেছে, সিকিভাগ বর্ডার পেরিয়ে গেছে, আরেক ভাগ গ্রামেগঞ্জে লুকিয়ে আছে, বাকি সিকিভাগ লোক নিয়ে অফিস-আদালত কল-কারখানা ভরাতে ওদের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সান্ধ্য আইনের মেয়াদ আরো হ্রাস করা হয়েছে। এখন রাত বারোটা থেকে ভোর চারটে পর্যন্ত।
ক’দিন আগে শরীফ খবর এনেছে টাইম নিউজউইক-এর কয়েকটা কপি নাকি কোন বিদেশীর ব্রিফকেসে আত্মগোপন করে, এয়ারপোর্টে কাস্টমসের শকুনদৃষ্টি এড়িয়ে ঢাকা এসেছে। তাতে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিকজান্তার বর্বরতা সম্বন্ধে অনেক খবর উঠেছে। শরীফ চেষ্টা করছে কপিগুলো যোগাড় করার। আমরাও সবাই উদগ্রীব হয়ে আছি একনজর দেখার জন্য। খুব গোপনে, খুব সাবধানতার সঙ্গে কপিগুলো হাতে হাতে ঘুরছে। আমাদের হাতে আসতে কতদিন লাগবে, কে জানে!
- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.