![]() |
সামরিক সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢেকে দেশের সবকিছু স্বাভাবিক দেখাবার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠে-পড়ে লেগেছে। আজকের কাগজে একটা হাস্যকর খবর ছাপা হয়েছে কবি সুফিয়া কামালের ছবিসহ। এক রেডিও কথিকায় পূর্ব পাকিস্তানের বিশিষ্ট কবি ও সমাজকর্মী বেগম সুফিয়া কামাল বলেছেন - যাঁরা তাকে ভালোবাসেন তাঁরা জেনে সুখী হবেন যে তিনি ভালোই আছেন এবং সাহিত্যকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে অতিশয় বিষণ্নবদন কবির সামনে রেড়িও’র মাইক ধরে আছে একটি অদৃশ্য হাত। মাইকটাকে মনে হচ্ছে যেন উদ্যত সঙ্গীন।
ভারতীয় বেতার তাঁর মৃত্যুর খবর বের করেছিল, সেই প্রেক্ষিতে তাঁর এই ফটো তোলা হয়েছে। কবির মুখের ভাব দেখে মনে হচ্ছে তার পিছে যেন বেয়নেট ঠেকানো রয়েছে। কাগজে আরো ফলাও করে বেরিয়েছে:
গতকাল বাংলা একাডেমির ডিরেক্টর কবীর চৌধুরী ঢাকা রেডিও থেকে মুনশি মেহেরুল্লাহ সম্পর্কে এক কথিকা প্রচার করেন।
সম্প্রতি কতিপয় মার্কিন সংবাদপত্রে একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জনাব কবীর চৌধুরীর পরিবারবর্গকে সাহায্যের জন্য আবেদন ছাপিয়ে, তিনি সাম্প্রতিক গোলযোগে মারা গেছেন- একথা বোঝানোর চেষ্টা করা হয়।
গত পরশুর কাগজেও ঠিক এই একই ধরনের খবর ছাপা হয়েছে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যক্ষ ডঃ মফিজুল্লাহ কবির ১ মে শনিবার ঢাকা ঢিভিতে মুসলিম বাংলার দু’জন মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী হাজি শরিয়তউল্লাহ ও দুদু মিয়ার জীবন ও অবদানের বিভিন্ন দিক সম্পর্কিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ইতিহাস বিভাগের রিডার ডঃ মোহর আলী।
ডঃ কবীর সাম্প্রতিক গোলযোগে মারা গেছেন - এই গুজবের অবসানকল্পে তাঁকে টিভিতে হাজির করা হয়েছে।
আমাদের মত অখ্যাত রেডিও টকার ছাড়াও ওরা এখন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত বিখ্যাত লোকদের ধরে ধরে রেডিও-টিভিতে হাজির করে সবাইকে জানাতে চাচ্ছে- ওঁরা সামরিক জান্তার হত্যাযজ্ঞের শিকার হয় নি। খুব ভালো কথা। তা সামরিক জান্তা দর্শন বিভাগের অধ্যক্ষ ডঃ জি. সি. দেব, জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট ডঃ জ্যোতির্ময় গুহঠাকূরতা, স্ট্যাটিস্টিকস বিভাগের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান, ভূতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র লেকচারার জনাব মুকতাদির, সয়েল সায়েন্সের সিনিয়র লেকচারার ডঃ এফ আর খান, গণিত বিভাগের লেকচারার জনাব শরাফত আলী, ফিজিক্স-এর জনাব খাদেম, অ্যাপ্লায়েড ফিজিক্সের মিঃ ভট্টাচার্য, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মিঃ সাদেক ও ডঃ সাদত আলী এঁদেরকেও একে একে এনে রেডিও-টিভিতে হাজির করুক না। বলুক না সারা দুনিয়ার লোককে- এঁদেরকে ওরা ২৫ মার্চের কালরাত্রে গুলি করে মেরে ফেলে নি।
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.