image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: একাত্তরের দিনগুলি: ৭ মে, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
৭ মে, শুক্রবার, ১৯৭১ সকালে নাশতা খাওয়ার সময় রুমী বলল, “আম্মা, আমাকে সেক্রেটারিয়েট সেকেন্ড গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ো। জামী, তুই এয়ারব্যাগ...

৭ মে, শুক্রবার, ১৯৭১

সকালে নাশতা খাওয়ার সময় রুমী বলল, “আম্মা, আমাকে সেক্রেটারিয়েট সেকেন্ড গেটের সামনে নামিয়ে দিয়ো। জামী, তুই এয়ারব্যাগটা আগেই গাড়িতে রেখে আয়। পায়ের কাছে রাখবি, যেন দেখা না যায়।”

নাশতা খেয়ে রুমী তার দাদার পাশে বসে তাঁর হাতটা ধরল। বাবা চোখে দেখেন না, তাই যে-ই আসুক, আগে তার হাত ধরে। হাত ধরতেই বাবা আস্তে বললেন, “কে?”

“আমি রুমী, দাদা।”

খানিক একথা সেকথার পর রুমী বলল, “দাদা, আমি দিনকতকের জন্য বাইরে যাচ্ছি-একসকারসনে।”

“একসকারসনে? কি-তোমাদের কলেজ থেকে?”

“ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ তো বন্ধ । ঠিক কলেজ থেকে নয়; তবে কলেজেরই কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে- মানে, বাড়ি বসে বসে একেবারে ঘেঁতিয়ে গেছি- কোন কাজকর্ম তো নেই, তাই-”

বাবা খানিকক্ষণ চুপ করে থাকলেন, তারপর তাঁর স্বভাবসিদ্ধ মৃদু গলায় থেমে থেমে বললেন, “একসকারসন খুব ভালো জিনিস। আমাদের সময়ও হত; তবে ছুটির সময়। তা সাবধানে থেক, এখন তো সব জায়গায় খুব গোলমাল শুনি।”

“না দাদা, গোলমাল আর নেই । সব জায়গা এখন তো শান্ত—”

“শান্ত? জামীদের স্কুল তাহলে এখনও বন্ধ কেন? তোমার কলেজ খোলে না কেন?”

বাবাকে নিয়ে এই এক সমস্যা। চোখে না দেখলে কি হবে, চিন্তা ও ধারণাশক্তি এখনও টনটনে। সবকিছু জানতে চান, একটু কোথাও উনিশ-বিশ হলেই উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ব্লাড প্রেসার ধাই করে চড়ে যায়। সেই জন্য ওঁকে সবকিছুর খবর বেশ ভালোমত সেন্সার করে বলতে হয়। তবে বাবার একটা পরিমিতিবোধ জন্মে গেছে। আগে যেমন অনেক ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপ করতেন, এখন আর তা করেন না। সবই মেনে নেন।

ক’দিন থেকেই মাঝে-মাঝে বিকেলে ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। লেট কালবৈশাখী। আজ আবার সকাল থেকেই আকাশে মেঘ। ইয়া আল্লা, আজ যেন ঝড়বৃষ্টি না আসে।

জামীকে পাশে বসিয়ে আমি স্টিয়ারিং হুইল ধরলাম। ড্রাইভারকে গতকালই বলে দেওয়া হয়েছে, আজ তাকে লাগবে না। পেছনে শরীফ আর রুমী বসল। শরীফের হাতে খবরের কাগজ। খুলে পড়ার ভান করছে।

রুমী বলল, “সেকেন্ড গেটের সামনে আমি নেমে যাওয়া মাত্র তোমরা চলে যাবে। পেছন ফিরে তাকাবে না।”

তাই করলাম। ইগলু আইসক্রিমের দোকানের সামনে গাড়ি থামালাম। রুমী আধাভর্তি পাতলা ছোট এয়ারব্যাগটা কাঁধে ফেলে নেমে সামনের দিকে হেঁটে চলে গেল। যেন একটা কলেজের ছেলে বইখাতা নিয়ে পড়ভে যাচ্ছে। আমি হুস করে এগিয়ে যেতে যেতে রিয়ারভিউ-এর আয়নায় চোখ রেখে রুমীকে এক নজর দেখার চেষ্টা করলাম। দেখতে পেলাম না, সে ফুটপাথের চলমান জনস্রোতের মধ্যে মিশে গেছে।

- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top