২৯ জুলাই, ১৯৭১
- ১১নং সেক্টরের আফছার ব্যাটালিয়নের কোম্পানী কমান্ডার চাঁন মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা দল পারুলদীয়া বাজারে পাকবাহিনীর গুপ্তচরদের এ্যামবুশ করে। এই এ্যামবুশে পাকবাহিনীর ৩ জন সহযোগী নিহত হয়।
- কুমিল্লায় লেঃ হেলাল মুর্শেদের নেতৃত্বে এক কোম্পানী যোদ্ধা পাকবাহিনীর মুকুন্দপুর-হরশপুর রেলস্টেশন ঘাঁটি আক্রমণ করে। এই আক্রমণে পাকসেনাদের বেশ ক্ষতি হয়। আক্রমণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদে নিজ ঘাঁটিতে ফিরে আসে।
- সুনামগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা ইপিআর আব্দুল হাই, জগৎজ্যোতি দাস ও মুজাহিদ মিয়ার নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর তিনটি দল পাকবাহিনীর সাচনা ও জামালগঞ্জ ঘাঁটি আক্রমণ করে। মুক্তিবাহিনীর ত্রিমুখী আক্রমণে পাকসেনারা তাদের সাচনা ও জামালগঞ্জ ঘাঁটি পরিত্যাগ করে দুর্লভপুর অভিমুখে পলায়ন করে। মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধা সিরাজ সাচনা বাজার যুদ্ধক্ষেত্রে পাকবাহিনীর গুলিতে শহীদ হন।
- ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সরদার শরণ সিং নয়াদিল্লীতে বলেন, নিরাপত্তা পরিষদে বাংলাদেশ সমস্যা উত্থাপণ করার কোনো ইচ্ছা বর্তমানে ভারতের নেই। তিনি জানান, বাংলাদেশ সঙ্কট সম্পর্কে বিবেচনা করার উদ্দেশ্যে জাতিসংঘ মহাসচিব উ‘থান্ট নিরাপত্তা পরিষদের কোনো আনুষ্ঠানিক বা ঘরোয়া বৈঠক আহ্বানের পরামর্শ দেননি।
- পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচীর প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
- পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রশাসক ও গভর্নর টিক্কা খান মুক্তিবাহিনীর মোকাবেলা করার জন্যে পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রতি মুজাহিদ বাহিনী গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
- জামায়াতে ইসলামীর প্রাদেশিক আমীর গোলাম আজম ভবিষ্যৎ বংশধরদের খাঁটি পাকিস্তানি করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তক থেকে অবাঞ্ছিত অংশ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে লেঃ জেনারেল টিক্কা খানকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, জাতীয় আদর্শভিত্তিক নতুন সিলেবাস ভবিষ্যৎ নাগরিকদের খাঁটি মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক হবে।
- যুগান্তর পত্রিকার রায়গঞ্জ সংবাদদাতার প্রতিবেদন : দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়,বোদা, তেতুলিয়া এবং দেবীগঞ্জ এখন বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর সম্পূর্ণ দখলে। এসব অঞ্চলের সরকারি ও বেসরকারি ভবনে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে।
- স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত কথিকামালা বিশ্বজনমত:
আমেরিকার বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক ‘নিউজ উইক’ পত্রিকার 'The Bengali's strike back' শীর্ষক নিবন্ধে বলা হয়, ‘ইয়াহিয়ার জন্যে দুঃখ হয়, কেননা তিনি যা দাবী করেছেন প্রকৃত ঘটনা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। সমগ্র বাংলাদেশে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ অভিযান ক্রমেই জোরদার হচ্ছে। এ অভিযান গোড়া থেকেই পরিচালিত হচ্ছে এবং উন্নত সমরসজ্জায় সজ্জিত পাকিস্তান সামরিক বাহিনী চরমভাবে ঘায়েল হচ্ছে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চল সফরকারী নিউজউইক-এর সংবাদদাতা লোরেন জেনকিন্স এখানে মুক্তিবাহিনীর হাতে দু‘জন দালালের ‘লালরঙা চিঠি’ প্রাপ্তি ও কড়া সামরিক পাহাড়াধীন থেকেও শোচনীয় মৃত্যুর খবর জানান।
‘লন্ডন টাইমস’ পত্রিকার সংবাদদাতা মাইকেল হর্নসবি জানান, বাংলাদেশে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী অহরহ মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদের দ্বারা আক্রান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশের সকল শহরে বিশেষ করে ঢাকা শহরে গেরিলা বাহিনীর আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রতিহিংসাপরায়ণ পাকবাহিনী আশপাশের এলাকার বেসামরিক বাসিন্দাদের ওপর উৎপীড়ন করে থাকে।
Post a Comment Blogger Facebook