![]() |
এখন ট্রাংকল পেয়ে খবরটা লিলিবুকে দেবার জন্য বেরোলাম। ওখানে খানিকক্ষণ বসে মা'র বাসা গেলাম।
সর্দি সারানোর দেশী টোটকা কাঁচাপেঁয়াজ কুচি, শুকনো মরিচ পোড়া আর খাঁটি সর্ষের তেল গরম ভাতে মেখে খেলাম।
এত হাঙ্গামা করে এতবড় লেবু গাছটা এনে এত কষ্ট করে পুঁতলাম, কিন্তু কোনো কাজ দিল না। আজ দেখছি, এর পাতাগুলো মরতে শুরু করেছে। রুমী বললো, "যে কেউ দেখে বুঝে ফেলবে এর তলায় কিছু লুকোনো আছে। গাছটা তুলে ফেলে দিতে হবে।"
এতবড় গাছ তুলে ফেলা কি চাট্টিখানি কথা? ডালগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে, কান্ডটাও টুকরো করে কেটে গোড়াটা তুলে ফেলা হলো। তারপর গাড়ির বুটিকে নিয়ে দুরের একটা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসা হলো। খুব কষ্ট লাগল গাছটা এভাবে কসাইয়ের মতো টূকরো করে কাটতে। ছোটবেলা থেকে জেনে আসছি- ফলের গাছ নষ্ট করতে নেই। কিন্তু কি করবো, জান বাঁচানোর তাগিদে গাছ কেটে ফেলে দিতে হলো। এখন আবার নতুন করে চিন্তা করো- আর কোথায় কিভাবে গহনা লুকিয়ে রাখা যায়।
আজ সর্দিটা খুব বেড়ে গেছে। জ্বরটাও যেন। সর্দি সারার একমাত্র ওষুধ বিছানায় ওয়ে বিশ্রাম। দুটো নোভালজিন গিলে শুয়ে রইলাম। একটু পরেই রেবার ফোন : টাট্টু আমাদের বাসায় এসেছে কি না!
কি ব্যাপার!
খুব উদ্বেগেও রেবার গলা সহজে কাঁপে না। রাগ হলেও সে চেচিঁয়ে কথা বলতে পারে না। খুবই ঠান্ডা মেজাজের মেয়ে। কিন্তু আজ ফোনে তার গলায় কাঁপন বুঝতে পারলাম।
দুপুরে আরো দুটো নোভলজিন খেয়ে জ্বরটা দাবালাম। বিকেল হতে না হতেই রুমী, জামী, শরীফসহ গুলশানের দিকে ছুটলাম। গিয়ে দেখি রেবা একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছে, চারপাশে তার আত্মীয়স্বজন বিষণ্ন বদনে বসে আছে। মিনিভাই, রেবা ও জাহিরের মুখে টুকরো টুকরো করে পুরো ঘটনাটা শুনলাম : সকালে টাট্টু দেরি করে ঘুমোয়। নাশতা হলে ডেকে তুলতে হয়। আজো ডাকাডাকি হচ্ছিলো, কিন্তু আজ আর তার সাড়া পাওযা যায় না। শেষে রেবা ঘরে ঢুকে দেখে মশারি ফেলাই আছে কিন্তু টাট্টু ভেতরে নেই। প্রথম দিকে হৈচৈ না করে টাট্টুর বড় ভাই জাহির খুব সন্তপর্ণে টাট্টুর বন্ধুদের কাছে খবর নেয়। না, টাট্টু তাদের কারো কাছে যায় নি। তবে টাট্টুর দুই বন্ধুকেও তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাওয়া যায় নি। জাহির একটু আধটু আঁচ পেত- টাট্টু কিছু একটার সাথে জড়িত আছে। কিন্তু টাট্টু কোনোদিন খোলাখুলি বড় ভাইয়ের সাথে এ নিয়ে কোনো আলোচনা করে নি। তরে সবাই ধারণা করছেছে টাট্টু লুকিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেছে। আবার ভয়ও হচ্ছে, পথে কোথাও খানসেনাদের হাতে ধরা পড়ল কি না? ধরা পড়লেওতো জানবার কোন উপায় নেই।
আজ স্বাধীন বাংলা বেতারেও তেমন মন লাগাতে পারলাম না। সেই কে যেন, আজো 'চরমপত্র' পড়লেন। রোজই পড়েন। কে পড়ছে নাম জানার জন্য প্রথম কদিন কান খাড়া করেছিলাম। কিন্তু না, কোনো নাম বলা হয় নি।
ঘুরেফিরে খালি টাট্টুর কথাই মন এলোমেলো করছে। জামীর মুখ চুন। টাট্টু তাকেও কিছু বলে নি। বন্ধুর এই 'বিশ্বাসঘাতকতায়' জামী খুবই মর্মাহত। আমি হঠাৎ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বললাম, "চল নিচে যাই। মুড়ির মোয়া বানাব।" একটা কিছু কাজ করা দরকার।
- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.