- লে. হুমায়ুনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদল কুমিল্লা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কে পাকসেনাদের সাইদাবাদ (কামান ঘাঁটি) অবস্থানের পিছনদিক থেকে অনুপ্রবেশ করে অতর্কিতে আক্রমণ চালায়। কয়েক ঘন্টা যুদ্ধের পর পাকসেনারা তিনটি জঙ্গী বিমানের সহায়তায় পাল্টা আক্রমণ জোরদার করে। আক্রমণ শেষে মুক্তিযোদ্ধাদল গ্রামের গোপন পথে মেঘনার দিকে পশ্চাদপসরণ করে। এ যুদ্ধে ৫০/৬০ জন পাকসেনা হতাহত হয় ও তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
- কুমিল্লার মুক্তিবাহিনীর কৈখোলা অবস্থানের ওপর পাকসেনারা গোলন্দাজ বাহিনীর সাহায্যে প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে কৈখোলা পাকসেনাদের দখলে চলে যায়। রাতে মেজর সালেক চৌধুরীর নেতৃত্বে চতুর্থ বেঙ্গলের 'এ' কোম্পানি কৈখোলায় অবস্থানরত পাকসেনাদের আক্রমণ করে। এছাড়া হাবিলদার সালামের প্লাটুন শিবপুরের দিক থেকে এবং সুবেদার আবদুল হক ভুঁইয়ার প্লাটুন দক্ষিণ দিক থেকে শত্রুসেনাদের অবস্থানের ভিতর অনুপ্রবেশ করে। দুঘন্টা ব্যাপী তীব্র যুদ্ধের পর পাকসেনারা কৈখোলা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ করে এবং মুক্তিবাহিনী কৈখোলায় তাঁদের দখল পুনঃস্থাপন করে। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন জেসিওসহ ৩১ জন সৈন্য হতাহত হয় । মুক্তিযোদ্ধারা অনেক অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধ সরঞ্জাম দখল করে।
- মিয়াবাজারের দক্ষিণে মুক্তিবাহিনীর এক প্লাটুন যোদ্ধা পাকসেনাদের দুটি বাঙ্কারের ওপর আক্রমণ চালায়। এ আক্রমণে ৭ জন পাকসেনা নিহত হয়।
- কুমিল্লায় একদল মুক্তিযোদ্ধা খিলা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে পাকসেনাদের একটি জিপকে এ্যামবুশ করে। এ অভিযানে ৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।
- দিনাজপুর জেলার ঠনঠনিয়াপাড়ায় পাক অবস্থানের ওপর মুক্তিবাহিনী বড় রকমের হামলা চালায়। আধঘন্টা ভয়াবহ সম্মুখ যুদ্ধের পর পাকসেনারা পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ঠনঠনিয়া মুক্তিবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ যুদ্ধে পাকবাহিনীর ১৫ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়। অপরদিকে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও ২ জন আহত হয়।
- মুক্তিবাহিনীর লে. ইমামুজ্জামানের কোম্পানি বেলোনিয়ার চিতলিয়া অবস্থানের ওপর পাকিস্থান বাহিনী হেলিকপ্টারযোগে ব্যাপক হামলা চালায়। এতে মুক্তিযোদ্ধারা অন্যত্র সরে পড়ে।
- বাগেরহাট সদরের কান্দাপাড়া বাজারে পাকবাহিনীর নৃশংস গণহত্যার লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে। এখানে পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররা ১৮ জন যুবক, ৩ জন বৃদ্ধ ও ২ জন শিশুকে জবাই করে মাথাগুলো বিচ্ছিন্ন করে লাশের বুকের ওপর রেখে রাস্তায় সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখে।
- মৌলভীবাজারে পাকবাহিনীর জুড়ি অবসাথানের ওপর মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর ২৫ জন সিপাই নিহত হয় এবং ৯ জন মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়।
- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল দেশত্যাগী পাকিস্তানির প্রতি স্বদেশ ফিরে আসার আবেদন জানান।
- প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হামিদুল হক চৌধুরী, বিচারপতি নূরুল ইসলাম, ডেমোক্রেটিক পার্টির সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. কাজী দীন মোহাম্মদ 'পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি' হিসেবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে রাওয়ালপিন্ডিতে সাক্ষাৎ করেন।
- পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক গোলাম আজম লাহোরে বলেন, "কার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে? ক্ষমতা গ্রহণের জন্য দরকার একটি জাতীয় পরিষদ। আমাকে বলুনতো দেশে জাতীয় পরিষদ আছে কি? কোনোমতেই বেআইনী ঘোষিত ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে ক্ষমতা দেয়া যাবে না।" তিনি আরো বলেন, দুষ্কৃতকারীরা (মুক্তিযোদ্ধা) এখনো ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত রয়েছে। নকশালী ও কমিউনিস্টদের দ্বারা পরিচালিত এসব দুষ্কৃতকারীরা জনগণের মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করে বিশৃঙ্খল অবস্থা দীর্ঘায়িত করতে চায়।"
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook