রামপাল তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে নানা ধরণের অপপ্রচার
চালানো হচ্ছে। এর মধ্যে কিন্তু বেশ কিছু শুভঙ্করের ফাঁকি লুকিয়ে আছে।
সেগুলোর এক এক করে জবাব দেয়া হবে এই পোস্টে। এখানে প্রমানসহ বিভিন্ন লিঙ্ক
দেয়া হবে যাতে কেউ অন্তত এইটা বলতে না পারে যে এইটা চিঙ্কুদের মিথ্যাচার।
প্রথমত,
যখন আমরা দাবী করলাম যে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন ও পরিবেশের
জন্য ক্ষতিকর, তখন বলা হলো বিশ্বের ২৬% বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় কয়লাভিত্তিক
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। এবার দেখে নেয়া যাক শুভঙ্করের ফাঁকিটা আসলে
কোথায়।
|
IEA/OECD এর পরিসংখ্যান |
IEA/OECD অনুসারে দেখা যাচ্ছে ২০০৮ সালেও সারা বিশ্বের বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার হার ছিলো ৪১%
[1]। প্রশ্ন হলো, এই ৫
বছরে সেটা এত কমে যাবার কারণ কী? এর ব্যাখ্যা কি তারা দিতে পারবেন?
বিশ্বব্যাংকের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে বিশ্বের বেশীরভাগ দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার শতকরা হার দিন দিন কমছে
[2]।
এবার দেখি গ্রীনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের তুলনামূলক চিত্রঃ
|
2011 IPCC aggregated results |
2011 IPCC aggregated results
থেকে দেখা যাচ্ছে কয়লাতে এত বেশি গ্রীণহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হয় যে সেটা তার
নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ন্যাচারাল গ্যাস থেকে দ্বিগুণেরও বেশি। যেখানে
দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমানও তৃতীয় স্থানে থাকা সৌরশক্তি
থেকে ১০ গুণেরও বেশি
[3]।
|
২০০৮ সালের Benjamin K. Sovacool এর গবেষণা |
২০০৮ সালের Benjamin K. Sovacool এর গবেষণা অনুযায়ীও কয়লার গ্রীণহাউজ গ্যাস নির্গমনের পরিমান অন্যান্য উৎসের তুলনায় বেশি
[4]।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে এসিড বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
US Geologic
Survey Analysis অনুযায়ী গাড়ির ধোয়া নয়, বরং কয়লাভিত্তিক
শিল্পই এসিড বৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী
[5]। Union of Concerned Scientists এর গবেষণা অনুসারে,
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সালফার ডাইওক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও
মার্কারীর মতো ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ করে
[6]। Greenpeace International এর গবেষণা অনুসারে, ৫০০ মেগাওয়াটের
একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন টন কার্বন ডাইঅক্সাইড
নিঃসরণ করে
[7]।
|
সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ১০০ টা দেশ |
এবার দেখা যাক বিশ্বের সবথেকে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ কোনগুলো।
উপরের চিত্রে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ১০০ টা দেশের নাম দেয়া আছে
[8]। দেখে নেয়া যাক এই দেশগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনের অবস্থা।
প্রথমে আসি চায়নার কথায়। চায়না পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ।
IEA Key World Energy Statistics অনুসারে চায়নাতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার শতকরা হার নিম্নরূপ
[9] -
|
চীনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার হার |
বারবারই এমন প্রচার চালানো হচ্ছে যে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ
চায়নাতে মোট বিদ্যুতের ৭০% হচ্ছে কয়লাভিত্তিক। এখানেও রয়েছে শুভঙ্করের
ফাঁকি। উপরের ছকে দেখা যাচ্ছে এই হার ২০১০ সালেও ৭৮% ছিলো এবং ২০০৭ সালে
ছিলো ৮১%। ৬ বছরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের শতকরা হার ১১% কমে গেল কেন তারা
কি এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন?
চায়নাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে জনমত বাড়ছে। WRI insights
এর মতে, চায়নাতে নতুন যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিকল্পনা নেয়া
হচ্ছে তার বেশিরভাগই সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানির সংকট তৈরি করবে
[10]। তাহলে চিন্তা করুন সুন্দরবনের মতো ম্যানগ্রোভ বন, যেটা পুরোটাই পানির
উপর নির্ভরশীল সেখানে এধরণের তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প কি ধরণের বিরূপ প্রভাব
ফেলতে পারে।
আমরা দাবী করছি কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিবেশের দুষণ ঘটায়।
এখানেও তারা সেই ২৬% এর কথাই টেনে নিয়ে আসছেন। চীনের বিষয় নিয়ে আসছেন। তাহলে দেখে নেয়া যাক পৃথিবীর সবচেয়ে দুষিত শহর কোথায়।
|
Curiosity Aroused এর গবেষণা অনুসারে পৃথিবীর সবথেকে দুষিত শহর |
Curiosity Aroused এর গবেষণা অনুসারে দেখা যাচ্ছে পৃথিবীর সবথেকে দুষিত শহর
গুলোর মধ্যে প্রথম দুইটিই চায়নার। এবং যে শহরটি সবথেকে দুষিত সেটার কারণও
কয়লা
[11]। তাহলে কিভাবে সুন্দরবনের মত জায়গায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কোনও ক্ষতির কারণ হবে না?
চায়নার পরিবেশ দুষণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানুন উইকিপিডিয়া থেকে
[12]। এখানে বলা হচ্ছে, ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাংকের জরীপ অনুযায়ী বিশ্বের সবথেকে দুষিত ২০ টা শহরের মধ্যে ১৬ টিই চায়নার
[13]।
New York Times এর সাংবাদিক Joseph Kahn এবং Jim Yardley এর প্রতিবেদনে দেখা যায় -
- চায়নার স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় এর মতে শিল্পকারখানার দুষণের কারণে চায়নায় ক্যান্সার হচ্ছে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ।
- শুধুমাত্র বায়ু দুষণের কারণেই সেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার লোক মারা যায়।
- চায়নার ৫০০ মিলিয়ন মানুষ নিরাপদ ও সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত।
- চায়নার ৫৬০ মিলিয়ন শহরবাসীদের মধ্যে মাত্র ১% মানুষ এমন বাতাসে নিঃশ্বাস নেয়, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিরাপদ বলে অনুমোদন দেয়।
- চায়নার সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের ফলে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউল ও জাপানের টোকিওতেও এসিড বৃষ্টির ঘটনা ঘটেছে।
- ২০০৩ সালে Chinese Academy of Environmental Planning এর অপ্রকাশিত
রিপোর্ট অনুসারে প্রতি বছর ৩,০০,০০০ লোক বায়ু দুষণ জনিত কারণে মারা যায় যার
মধ্যে অধিকাংশই হার্টের সমস্যা ও ফুসফুসের ক্যান্সারে।
- ২০০৫ সালে চীনা পরিবেশবিজ্ঞানীদের আরেকটি রিপোর্টে তারা এই মৃতের
সংখ্যা ২০১০ নাগাদ ৩,৮০,০০০ ও ২০২০ নাগাদ ৫,৫০,০০০ এ পৌছানোর আশঙ্কা করছেন।
সেখানে আরও বলা হচ্ছে, যে এ দুষণ সেখানকার জনগণের উপর একটা বিরাট বোঝা হতে চলেছে
[14]।
24/7 Wall St. এর গবেষণা অনুসারে বলা হচ্ছে বিশ্বের সবথেকে দুষিত বাতাসের
১০ টি শহরের মধ্যে চায়নার শহর ৩ টা যার মধ্যে ১ নম্বরে আছে বেইজিং। এ
ছাড়াও এখানে আছে মঙ্গোলিয়ার একটি শহর ও হংকং
[15]।
উল্লেখ্য, বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় ঢাকার নাম থাকলেও দুষিত শহর কিংবা
দুষিত বায়ুর শহরের তালিকায় প্রথম ১০টা শহরের মধ্যে ঢাকা নেই। যারা ঢাকায়
থাকেন তারা নিশ্চয়ই জানেন বুড়িগঙ্গার দুষণ এবং গাড়ি ও কলকারখানার ধোয়ার কারণে
সেখানে কি নারকীয় পরিবেশ বিরাজ করে। চিন্তা করুন তাহলে তালিকায় যেসব শহর
আছে সেখানে কি পরিবেশ বিরাজ করছে। এরপরেও কি বলা হবে যে এই প্রকল্প
পরিবেশের কোনও ক্ষতি করবে না?
এবার আসি তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা আমেরিকার কথায়। চলুন আগে দেখে নিই সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিভিন্ন উৎসের শতকরা হার কেমন -
|
২০০৯ সালে আমেরিকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন উৎসের শতকরা হার |
Duke University এর গবেষণা অনুসারে দেখা যাচ্ছে ২০০৯ সালে কয়লা থেকে ৪৪%
বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে এটা ১৯৯০ সালের তুলনায় ৮% কম।
কারণ পরিবেশগত কারণে তারা ধীরে ধীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে
দিচ্ছে
[16]।
এটা হল ২০০৯ সালের কথা। Greentech Media অনুসারে দেখা যাচ্ছে যে ২০১১ সালে
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম হয়েছে
[17]। এছাড়াও U.S. Energy Information Administran reports অনুসারে, বলা
হচ্ছে, ২০১১ সালে গত ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের শতকরা হার
৪০% এর নিচে নেমে এসেছে
[18]। ২০১২ সালে U.S. Energy Information Administration এর রিপোর্ট অনুসারে
দেখা যাচ্ছে যে, কয়লার উৎপাদন ১ বছরে ১৯% কমে গেছে যাতে কয়লাভিত্তিক
বিদ্যুৎ উৎপাদনও ৩৬% এ নেমে এসেছে
[19]।
|
আমেরিকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের শতকরা হার দিন দিন কমছে |
এই চিত্রে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের শতকরা হার দিন দিন কমছে।
|
আমেরিকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে |
চিত্রে দেখা যাচ্ছে আমেরিকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
|
আমেরিকায় ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে শুধুমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎই কমে গেছে |
চিত্রে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায় ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে শুধুমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎই কমে গেছে।
Environmental and
clean water groups এর একটি কোয়ালিশনের গবেষণা অনুসারে
দেখা যাচ্ছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো আমেরিকার পানি দুষণের সবচেয়ে
বড় কারণ
[20]।
American Lung Association এর গবেষণা অনুসারে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকায়
প্রতিবছর ২৪০০০ মানুষ মারা যায় শুধুমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের
দুষণের কারণেই
[21]।
এমনকি আমেরিকাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনও হচ্ছে
[22]। আমেরিকার টেক্সাসে প্রস্তাবিত ৮ টি কোল প্ল্যান্ট বাতিল হয়ে গেছে
[23]।
এবার আসি তৃতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ জাপানের দিকে। চলুন দেখে নিই তাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা হার
[24]।
|
জাপানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন উৎসের শতকরা হার |
কয়লা যে ধীরে ধীরে কমছে তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
এবার আসি রাশিয়ার দিকে । এটি চতুর্থ বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী দেশ। এবার দেখে নেয়া যাক তাদের বিদ্যুতের উৎস -
|
রাশিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন |
IEA এর পরিসংখ্যান অনুসারে দেখা যাচ্ছে রাশিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ১৯%
[25]। অথচ দাবী করা হচ্ছে ৬৮%। এখানে দেখা যাচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতের
পরিমান বাড়ছে। তাহলে দেখে নেয়া যাক তাদের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেমন -
|
রাশিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের শতকরা হার |
চিত্রে দেখা যাচ্ছে, মোট শতকরা উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
এবার দেখি জার্মানির অবস্থা।
|
২০০৫ সালে জার্মানির বিদ্যুৎ উৎপাদন |
European Nuclear Society এর গবেষণা অনুসারে ২০০৫ সালে লিগনাইট ও হার্ড কোল
মিলিয়ে জার্মানিতে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতের শতকরা হার ৪৬.৭%
[26]। এবার দেখি ২০১১ সালের চিত্র -
|
২০১১ সালে জার্মানীর বিদ্যুৎ উৎপাদন |
একই প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় ২০১১ সালে লিগনাইট ও হার্ড কোল মিলিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ এর শতকরা হার হয় ৪৩%, যা ২০০৫ থেকে ৩.৭% কম
[27]।
এমনকি যে ভারতের কোম্পানি এই কাজ করছে সেখানেও কিন্তু কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠছে
[28]। সেখানে মধ্যপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে পরিবেশগত কারণেই
[29] [30]। ভারতের একটা গ্রামের গ্রামবাসী বাঘ বাঁচানোর জন্য নিজেদের গ্রাম পর্যন্ত অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন
[31]।
বলা হচ্ছে, কয়লা থেকেই নাকি সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। আসলে কি তাই? চলুন দেখে আসি।
|
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ১০ টি বিদ্যুতকেন্দ্র |
সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ১০ টি প্ল্যান্টের নাম দেখে নিন
[32]। এর একটিও কিন্তু কয়লাভিত্তিক নয়। এবার দেখি কয়লাভিত্তিক সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো।
|
কয়লাভিত্তিক সবচেয়ে বড় ৬ টি বিদ্যুতকেন্দ্র |
দেখা যাচ্ছে, সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক প্ল্যান্টের ক্যাপাসিটি ৫.৭৮০
মেগাওয়াট, যেখানে দশম বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি ৬.১৩৯ মেগাওয়াট।
|
পৃথিবীর বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান সব উৎস মিলিয়ে ১৫ নম্বরে |
পৃথিবীর বৃহত্তম কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের স্থান সব উৎস মিলিয়ে ১৫ নম্বরে
[33]।
বলা হচ্ছে, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ নাকি তুলনামুলক কম। আসলে কি
তাই? চলুন দেখে নিই বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তুলনামুলক খরচ।
|
বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিভিন্ন উৎসের তুলনামূলক খরচ |
US Energy Information Administration এর রিপোর্ট অনুসারে গ্যাস, বায়ু ও পানি ভিত্তিক বিদ্যুতের খরচ কয়লার তুলনায় তুলনামুলক কম
[34]।
এবার চলুন দেখে নিই এসব দেশের বনভূমি কত ভাগ -
|
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বনভূমীর পরিমান |
দেখা যাচ্ছে, চায়নাতে বনভূমি ১৮.২১%, আমেরিকায় ৩০.৮৪%, জাপানে ৬৭%, রাশিয়ায় ৪৫.৪০%,
জার্মানিতে ৩১.৭০% ও ভারতে ২৩.৬৮% ; কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে বনভূমি মাত্র
৬.০৫%
[35]। এই সামান্য পরিমান বনও কি আমরা ধ্বংস করে দেব?
বলা হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দুরত্ব নাকি ১৮ থেকে ২২
কিলোমিটার। কেউ কেউ আবার বলছে ৭০ কিলোমিটার। ম্যাপ দেখার আগে চলুন
Environment Impact Assessment (EIA) report দেখে আসি
[36]।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে যে সকল ধাপ অনুসরণ করতে হয়,
তা খোদ সরকারি ইআইএ রিপোর্টে কীভাবে আছে দেখে নিই। ইআইএ রিপোর্টের ৯৭
পৃষ্ঠায় ধাপগুলো লেখা হয়েছে এভাবে –
5.8
Project activities
Pre construction phase
a) Selection of candidate sites
b) Environmental and feasibility study
c) Selection of site
d) Land acquisition & site establishment
অর্থাৎ সিকোয়েন্সটি হওয়া উচিত এ রকম: সম্ভাব্য একাধিক স্থান শনাক্তকরণ->
পরিবেশগত সমীক্ষা-> কোনো একটি স্থান চূড়ান্তকরণ-> জমি অধিগ্রহণ।
বাস্তবে এই প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়নি। আগে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তারপর
পরিবেশ সমীক্ষা করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ শুরু করা হয়েছে ২০১০ সালে। আর
মতামতের জন্য ইআইএ ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে।
১) এই রিপোর্ট অনুযায়ী, রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৮৩৪ একর কৃষি, মৎস চাষ ও
আবাসিক এলাকার জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে যদিও ভারতে একই আকারের একটি
প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৭৯২ একর যার বেশির ভাগটাই এক ফসলি
কিংবা অনুর্বর পতিত জমি
[37] ।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্ট অনুসারে প্রস্তাবিত প্রকল্প
এলাকার (১৮৩৪ একর) ৯৫ শতাংশই কৃষি জমি ও চারপাশের ১০ কিমি ব্যাসার্ধের
এলাকার (স্টাডি এলাকা) ৭৫ শতাংশ কৃষি জমি যেখানে নিম্নোক্ত হারে চিংড়ি অথবা
ধান সহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন করা হয় (পৃষ্ঠা ১৩৫, ১৯৪, ১৯৭, ১৯৮, ২০৪) :
- বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ৬২,৩৫৩ টন এবং প্রকল্প এলাকায় ১২৮৫ টন ধান উৎপাদিত হয়;
- ধান ছাড়াও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০ ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ১,৪০,৪৬১ টন অন্যান্য শস্য উৎপাদিত হয়;
- প্রতি বাড়িতে গড়ে ৩/৪টি গরু, ২/৩টি মহিষ, ৪টি ছাগল, ১টি ভেড়া, ৫টি হাস, ৬/৭টি করে মুরগী পালন করা হয়;
- ম্যানগ্রোভ বনের সাথে এলাকার নদী ও খালের সংযোগ থাকায় এলাকাটি
স্বাদু ও লোনা পানির মাছের সমৃদ্ধ ভান্ডার। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা খাল ও
নদীর নেটওয়ার্ক জৈব বৈচিত্র ও ভারসাম্য রক্ষা করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১০
কিমি ব্যাসার্ধের মধ্যে বছরে ৫২১৮.৬৬ মেট্রিক টন এবং প্রকল্প এলাকায় (১৮৩৪
একর) ৫৬৯.৪১ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদিত হয়।
EIA রিপোর্টে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য প্রকল্প এলাকায় (১৮৩৪
একর) ধান, মাছ, গৃহপালিত পশুপাখি ইত্যাদির উৎপাদন ধ্বংস হবে স্বীকার করে
আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে, সঠিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা হলে এর
বাইরের ১০ কিমি এলাকার মধ্যে কোন ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না (!)। যদিও বিভিন্ন
ধরণের নির্মাণ কাজ, ড্রেজিং, বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক ও তৈল নি:সরণ
ইত্যাদির ফলে পশুর ও মাইদারা নদী, সংযোগ খাল, জোয়ার-ভাটার প্লাবণ ভূমি
ইত্যাদি এলাকার মৎস আবাস, মৎস চলাচল ও বৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে বলে
আশংকাও প্রকাশ করা হয়েছে। (পৃষ্ঠা ২৬৬, ২৬৭)
২) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মালামাল ও যন্ত্রপাতি সুন্দরবনের ভেতর
দিয়ে নদী পথে পরিবহন করা হবে। এর ফলে বাড়তি নৌযান চলাচল, তেল নি:সরণ,
শব্দদূষণ, আলো, বর্জ্য নি:সরণ ইত্যাদি পরিবেশ আইন অনুসারে নিয়ন্ত্রণ না
করা গেলে সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ,
ডলফিন, ম্যানগ্রোভ বন ইত্যাদির উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে বলে ইআইএ রিপোর্টে
আশংকা করা হয়েছে। (পৃষ্ঠা ২৬৮)
৩) প্রকল্পের জন্য ব্যবহ্রত যন্ত্রপাতি, যানবাহন, জেনারেটর, বার্জ
ইত্যাদি থেকে তেল পুড়িয়ে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাই
অক্সাইড নির্গত হবে। এই কার্বন ও নাইট্রোজের পরিমাণ কি হবে ও ক্ষীতকর
প্রভাবই বা ৪/৫ বছরের নির্মাণ পর্যায়ে কিরুপ হবে তার কোন পর্যালোচনা ইআইএ
রিপোর্টে করা হয় নি।
৪) নির্মাণ কাজের যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ব্যাবহারের ফলে শব্দ দূষণ হবে।
এক্ষেত্রেও নির্মাণ পর্যায়ে শব্দ দূষণের মাত্রা এবং সুন্দরবন ও প্রকল্পের
চারপাশের পরিবেশের উপর কি প্রভাব পড়বে তা যাচাই করা হয় নি ইআইএ রিপোর্টে।
৫) নির্মাণ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কঠিন বর্জ্য তৈরী হবে যা সঠিক পরিবেশ
ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা না হলে পরিবেশ এর উপর ক্ষতিকর
প্রভাব ফেলবে বলে আশংকা করা হয়েছে;
৬) নির্মাণস্থলের নিকটবর্তি নদী-খালের পানিতে নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও যানবাহনের তেল নি:সরিত হয়ে পানি দূষণ ঘটাতে পারে।
৭) ড্রেজিং এর ফলে নদীর পানি ঘোলা হবে। ড্রেজিং সঠিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ
করা না হলে তেল গ্রীজ ইত্যাদি নি:সৃত হয়ে নদীর পানির দূষিত হবে।
৮) পশুর নদীর তীরে যে ম্যানগ্রোভ বনের সারি আছে তা নির্মাণ পর্যায়ে
জেটি নির্মান সহ বিভিন্ন কারণে কাটা পড়তে পরবে। নদী তীরের ঝোপঝাড় কেটে
ফেলার কারণে ঝোপ ঝাড়ের বিভিন্ন পাখি বিশেষ করে সারস ও বক জাতীয় পাখির বসতি
নষ্ট হবে। (সূত্র: রামপাল ইআইএ, Impacts: pre-construction and construction stages , পৃষ্ঠা ২৬৩-২৬৮)
এই রিপোর্টের ২৭৮ পৃষ্ঠায় চোখ রাখলেই দেখা যাবে :
“The concentration of SO2 in the ambient air near Sundarbans region
is found 8 to 10 μg/m3 (field monitoring data, see Table 6.5). Hence, it
is found that the resultant concentration (24 hr average after emission
contribution and only during November to February) from the power
plant) of SO2 in the ambient air may be maximum 53.4 μg/m3 (see Table
8.3c) which is much below the MOEF’s standard (ECR 1997), 80 μg/m3 for
residential and rural area.
Therefore, the concentration of emitted SO2 is very insignificant to have any impact on
Air quality of Sundarbans.”
অর্থাৎ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত SO2 এর কারণে নভেম্বর থেকে
ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময়ে সুন্দরবনের বাতাসে SO2 এর ঘনত্ব প্রতি
ঘনমিটারে ৮ মাইক্রোগ্রাম থেকে বেড়ে ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রাম হবে যা পরিবেশ আইন
১৯৯৭ (ECR 1997) অনুযায়ী আবাসিক ও গ্রাম্য (residential and rural) এলাকার
জন্য নির্ধারিত মাত্রা প্রতি ঘনমিটারে ৮০ মাইক্রোগ্রাম এর থেকে অনেক কম।
দেখা যাচ্ছে এখানে পরিবেশ আইন ১৯৯৭ এর কথা বলা হয়েছে এবং সুন্দরবন এলাকার জন্য আবাসিক ও গ্রাম্য এলাকার মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে!
কিন্তু প্রশ্ন হল, সুন্দরবন কি আবাসিক বা গ্রাম এলাকা, নাকি
পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর একটি এলাকা? তাহলে সুন্দরবনের মতো পরিবেশগত
স্পর্শকাতর একটি এলাকার মানদণ্ড হিসেবে আবাসিক ও গ্রাম এলাকার জন্য
নির্ধারিত মানদণ্ড বেছে নেওয়া হল কেন?
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন- ১৯৯৭ ঘাঁটলে যে কেউই কারণটা বুঝতে পারবেন। এই আইন
অনুসারে পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার বাতাসে SO2 ও NO2 এর ঘনত্ব প্রতি
ঘনমিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম (30 μg/m3) এর চেয়ে বেশি থাকা যাবে না।
[38]
যেহেতু পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডের (30 μg/m3)
সঙ্গে তুলনা করলে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প কোনোভাবেই জায়েজ করা যাবে
না, সেজন্য পরিকল্পিতভাবেই রিপোর্টজুড়ে সুন্দরবনের বাতাসে বিষাক্ত গ্যাসের
ঘনত্বের মানদণ্ড হিসেবে আবাসিক ও গ্রাম এলাকার জন্য নির্ধারিত মানদণ্ড
ব্যবহার করা হয়েছে!
|
রামপাল প্রকল্পের অবস্থান |
এই রিপোর্ট অনুসারে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দুরত্ব ১৪ কিলোমিটার। আরও ডিটেইলস ম্যাপ দেখুন।
|
রামপাল প্রকল্প থেকে সুন্দরবনের দূরত্ব |
দেখা যাচ্ছে যে, এই বিদ্যুৎকেন্দ্র
Environmental impact assessment
guidelines অমান্য করছে সেখানে বলা আছে যে, বনভূমির ২৫ কিলোমিটারের মধ্যে
কোন বড় শিল্প স্থাপন করা যাবে না
[39]।
বলা
হচ্ছে, ভারতেও নাকি আইন আছে যে সেখানেও বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের ভিতরে
কোন শিল্পকারখানা বা বনের জন্য ক্ষতিকর কিছু স্থাপন করা যাবে না। ১০ কিমি
দূরত্বের কথা বলে প্রমাণ হিসেবে যে লিংকটি দেয়া হয়েছে,
সেখানে ঢুকলে যে কেউই দেখতে পারবেন, এই গাইড লাইনটি তাপবিদ্যুৎ স্থাপন
সংক্রান্ত নয়, এটি হলো: Guidelines for diversion of forest land for
non-forest purpose অর্থাৎ বনভূমির কত দুরের ভূমি বনায়ন ব্যাতিত অন্যান্য
কাজে ব্যাবহার করা যাবে সে সম্পর্কিত গাইড লাইন। [40]
প্রকৃতপক্ষে,
ভারতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংরক্ষিত বনাঞ্চল, শহর-বন্দর থেকে কত দূরত্বে
স্থাপন করতে হবে সে বিষয়ে আলাদা করে একটি ইআইএ গাইড লাইন আছে যেখানে স্পষ্ট
বলা হয়েছে:
“Locations of thermal power stations are avoided within 25 km of the outer periphery of the following:
– metropolitan cities;
– National park and wildlife sanctuaries;
– Ecologically sensitive areas like tropical forest, biosphere reserve,
important lake and coastal areas rich in coral formation;” [41]
তাহলে, ভারতের পরিবেশ ও বনমন্ত্রণালয়ের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ
সংক্রান্ত গাইড লাইনে যখন স্পষ্ট করে নগর, জাতীয় উদ্যান, বণ্যপ্রাণী
অভয়ারণ্য, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকা ইত্যাদির ২৫ কিমি
সীমার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এড়িয়ে চলার কথা বলা হয়েছে, সেখানে
কি কারণে বনভূমির অবনজ ব্যাবহারের গাইড লাইনটি বেছে নেয়া? জেনে বুঝেই
পাঠককে
বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যেই কি এই কৌশল?
সীসা, পারদ, আর্সেনিক
ইত্যাদি বিষাক্ত ভারি ধাতুসম্পন্ন ছাই দিয়ে ১৪১৪ একর জমি ভরাট করার
তথ্যটিকে সোজা অসত্য বলা হয়েছে! আচ্ছা, তারা কি এই
ইআইএটি আসলেই পড়েছেন নাকি সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি ইআইএ’র অস্তিত্ব আছে? ইআইএর
১০৬ পৃষ্ঠায় তো দেখছি স্পষ্ট লেখা আছে:
“At first phase, only 420
acres of land will be developed for the main plant and township by
dredged material and the rest area (1,414 acres) will be developed
gradually with generated ash.”
অর্থাৎ প্রথম পর্যায়ে কেবল ৪২০
একর জমি মূল প্ল্যান্ট এবং টাউনশিপ এর জন্য ড্রেজিং করা মাটি দিয়ে ভরাট করা
হবে আর বাকি এলাকা (১৪১৪ একর) উৎপাদিত ছাই দিয়ে পর্যায়ক্রমে ভরাট করা হবে।
চলুন এবার দেখি এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা পরিবহণের রুট:
|
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পরিবহনের রুট |
সুন্দরবনে শব্দদুষণের অভিযোগ তুললে বলা হচ্ছে, "সদরঘাটে নির্মাণকাজ চললে সেই শব্দ ১৪ কিলোমিটার দূরে মিরপুরে পৌঁছানোর
ব্যাপারটি কি যৌক্তিক? সেখানে সুন্দরবনের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ৭২
কিলোমিটার দূরে।"
মুশকিল হল, গোটা সুন্দরবনটাই যেখানে পরিবেশগত স্পর্শকাতর এলাকা এবং
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি সুন্দরবন থেকে ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত– সেখানে আলাদা
করে ‘সুন্দরবনের স্পর্শকাতর জায়গাগুলো ৭২ কিলোমিটার দূরে’ বলতে কি বোঝানো হচ্ছে তা বোধগম্য নয়।
যদি সুন্দরবনের স্পর্শকাতর জায়গা বলে ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ
সাইট বোঝানো হয়, তাহলেও বিপদ কমে না। কারণ কয়লাভর্তি বড় বড় জাহাজ চলাচল
এবং কয়লা উঠানো-নামানোর কোল টার্মিনালটি একেবারে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের
পাশেই পড়েছে। ফলে সরাসরি শব্দদূষণসহ অন্যান্য দূষণের শিকার হবে।
কাজেই সদরঘাটের নির্মাণকাজের শব্দ ১৪ কিমি দূরের মিরপুরে না পৌঁছালেও
সেই নির্মাণকাজের মালামাল যদি মিরপুরের মধ্যে দিয়ে পরিবহণ ও লোড-আনলোড করা
হয় তাহলে মিরপর শব্দদূষণের শিকার হবে বৈকি!
সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা পরিবহণের বিপদ সম্পর্কে প্রশ্ন তোলায় বর্তমানে শত শত জাহাজ পশুর নদীর মধ্যে দিয়ে চলাচলের কথা উল্লেখ করে বলা হচ্ছে, "বাড়তি দুটি জাহাজ চলাচলে কোন ক্ষতি হবার সম্ভাবনা নেই।" আরও বলা হচ্ছে, "কয়লাবাহী জাহাজে উত্তাল সমুদ্রের মধ্য দিয়ে খোলা কনটেইনারে করে কয়লা আনা হবে যা থেকে ঝপাৎ ঝপাৎ করে কয়লা পানিতে পড়ে যাবে – এটি শুধু অমূলক দুশ্চিন্তাই নয়, কল্পনাপ্রসূতও বটে।"
মুশকিল হল, ঝপাৎ ঝপাৎ করে কয়লা পানিতে পড়ে দূষণ হওয়া কিংবা কয়লা খোলা অবস্থায় পরিবহণ করার অভিযোগ কারা করেছে আমাদের জানা নেই, যেমন জানা নেই বর্তমানে যে সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে জাহাজ চলাচল করছে তাতে কোনো ক্ষতি হচ্ছে না এ রকম কথা কারা বলছে!
আমাদের বক্তব্য হল, কয়লা যতই ঢেকে পরিবহণ করা হোক কিংবা জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হোক, তাতে জাহাজের কয়লাস্তূপ থেকে চুইয়ে পড়া কয়লা-ধোয়া বিষাক্ত পানি (বিলজ ওয়াটার), অ্যাংকরেজ পয়েন্টে কয়লা লোড-আনলোড করার সময় সৃষ্ট দূষণ, কয়লার গুড়া, জাহাজ-নিঃসৃত তেল-আবর্জনা, জাহাজ চলাচলের শব্দ, ঢেউ, বনের ভেতরে জাহাজের সার্চলাইটের তীব্র আলো, জাহাজের ইঞ্জিন থেকে নির্গত বিষাক্ত সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস ইত্যাদির ক্ষতিকর প্রভাব দূর হয়ে যায় না।
আর বর্তমানে যে জাহাজ চলাচল করছে সেগুলো অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ, কয়েকশো টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। সেগুলোর প্রভাবে ইতোমধ্যেই সুন্দরবনের ক্ষতি হতে শুরু করেছে, সে বিষয়ে পত্রপত্রিকায় রিপোর্টও বেরিয়েছে ।
যেমন ১৫ মার্চ, ২০১৩ প্রথম আলো "সংকটে সুন্দরবন, সেই নৌপথ বন্ধ হয়নি" শীর্ষক রিপোর্টে লিখেছে: "সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে চালু হওয়া নৌপথের কারণে পূর্ব সুন্দরবন প্রাণিশূন্য হতে শুরু করেছে। প্রতিদিন প্রায় ১৫০টি বিশাল আকৃতির নৌযান বনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। এসব নৌযানের ঢেউ, ফেলে যাওয়া বর্জ্য তেল ও শব্দদূষণের কারণে বনের দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃক্ষ, লতা, গুল্ম মরতে শুরু করেছে। সব মিলিয়ে বনের জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হয়ে পড়েছে।"
[42]
সাধারণ নৌযান চলাচলের ফলেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে দুষণকারী কয়লাভর্তি বড় বড় জাহাজ চলাচল করলে কিংবা সেই কয়লাভর্তি জাহাজডুবি হলে সুন্দরবনের কী অবস্থা হবে সেটা কিন্তু আসলেই চিন্তার বিষয়। যেমন অস্ট্রেলিয়াতে ২০১০ সালে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের কাছে কয়লাভর্তি জাহাজডুবিতে এমন ক্ষতি হয়েছে যা পূরণ করতে ২০ বছর লেগে যাবে
[43]।
অস্ট্রেলিয়ার মত উন্নত দেশে যদি এমন অবস্থা হয় তাহলে আমাদের সুন্দরবনে এমন কোন ক্ষতি হলে আমরা কিভাবে পূরণ করবো?
পানি উত্তোলন ও নদীদূষণ সম্পর্কে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে উত্তোলিত পানির পরিমাণ পশুর নদীর মোট পানিপ্রবাহের তুলনায় এতই কম যে, কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই। পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৯১৫০ ঘন মিটার হারে পানি প্রত্যাহারের ফলে পানির লবণাক্ততা, নদীর পলিপ্রবাহ, প্লাবন, জোয়ার-ভাটা, মাছসহ নদীর উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎ ইত্যাদির উপর কেমন প্রভাব পড়বে তার কোনো বিশ্লেষণ করা হয়নি এই যুক্তিতে যে, এই পানি পশুর নদীর শুকনো মৌসুমের মোট পানিপ্রবাহের ১ শতাংশেরও কম।
দুর্ভাবনার বিষয় হল, প্রত্যাহার করা পানির পরিমাণ ১ শতাংশেরও কম দেখানোর জন্য পানিপ্রবাহের যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তা সাম্প্রতিক সময়ের নয়, ৮ বছর আগে, ২০০৫ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক সংগৃহীত। (রামপাল ইআইএ পৃষ্ঠা ২৮৫)
অথচ এই ইআইএ রিপোর্টেই স্বীকার করা হয়েছে, নদীর উজানে শিল্প, কৃষি, গৃহস্থালিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে নদী থেকে দিনে দিনে পানি প্রত্যাহারের পরিমাণ বাড়ছে যার ফলে শুকনো মৌসুমে দিন দিন পানির প্রবাহ কমে যাচ্ছে যা পশুর নদীর জন্যও একটি চিন্তার বিষয় (রামপাল ইআইএ পৃষ্ঠা ২৫০)।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সময় লাগবে সাড়ে ৪ বছর এবং অপারেশনে থাকবে অন্তত ২৫ বছর। তাহলে এই দীর্ঘ সময় জুড়ে পশুর নদীর পানিপ্রবাহ ইআইএ রিপোর্ট অনুসারেই ২০০৫ সালের অনুরূপ থাকার কথা নয়।
ফলে ওই সময়ে পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৪ হাজার মিটার পানি প্রত্যাহার করলে তা পশুর নদীর পানিপ্রবাহের উপর কী কী প্রভাব ফেলবে তার গভীর পর্যালোচনা ছাড়া স্রেফ নদীর হাইড্রোলজিক্যাল বৈশিষ্টের কোনো পরিবর্তন নাও হতে পারে (may not be changed) জাতীয় কথাবার্তা বলে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আর যতই পানি পরিশোধনের কথা বলা হোক, কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন হলে তাতে বিভিন্ন মাত্রায় দূষণকারী উপাদান থাকবেই। যে কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বেলায় ‘শূণ্য নির্গমণ’ বা ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অবলম্বন করা হয়। যে এনটিপিসি রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছে, সেই এনটিপিসি যখন ভারতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে তখন ‘জিরো ডিসচার্জ’ নীতি অনুসরণ করে।
যেমন: ভারতের ছত্তিশগড়ের রায়গড়ের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে: Zero Discharge concepts will be followed
[44]
অথচ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ই্আইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে:
To meet the water demand for plant operation, domestic water, environmental management 9,150 m3/hr (equivalent to 2.54 m3/s) surface water will be withdrawn from the Passur river and after treatment water shall be discharged back to the Passur river at the rate of 5,150 m3/hr
অর্থাৎ "প্ল্যান্ট পরিচালনা, ঘরোয়া ব্যবহার, পরিবেশগত ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজে পশুর নদী থেকে ঘণ্টায় ৯১৫০ ঘনমিটার পানি সংগ্রহ করা হবে এবং পরিশোধন করার পর পানি পশুর নদীতে ঘন্টায় ৫১৫০ ঘনমিটার হারে নির্গমন করা হবে।"
কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পানি নির্গমন করা হলে নির্গত পানির তাপমাত্রা, পানি নির্গমণের গতি, পানিতে দ্রবীভূত নানান উপাদান বিভিন্ন মাত্রায় পানি দূষণ ঘটাবে যা গোটা সুন্দরবন এলাকার পরিবেশের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠবে।
আপনারা কি রামসার কনভেনশনের কথা জানেন? এই কনভেনশন ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসারে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই কনভেনশনে জলাভূমি ও বনাঞ্চল রক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যা ২১ ডিসেম্বর ১৯৭৫ সাল থেকে কার্যকর হয়
[45]।
বাংলাদেশ এতে সই করে ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৯২ সালে
[46]। বাংলাদেশের দুটি স্থান রামসার ওয়েটল্যান্ড এর আওতাভুক্ত হয়। যার একটি হলো সুন্দরবন ও অপর স্থানটি হলো টাঙ্গুয়ার হাওড়
[47]।
জলাভূমি সংরক্ষণ বিষয়ক রামসার কনভেনশনের সচিবালয় থেকে গত ২২ জুন ২০১১ তারিখে বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়। চিঠিতে রামসার সচিবালয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয়ে জানতে চায়:
১) রামসার সাইট সুন্দরবনের পাশে পরিবেশগত সমীক্ষা ছাড়াই কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ব্যাপারে। এ বিষয়ে রামসার সচিবালয় সংবাত পত্রে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে যে, সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১-২ কিমি দূরে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকায় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলে প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন সহ অত্যাধিক ধূলা নির্গত হবে। ফলে ক্রমান্বয়ে ঐ এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণী তথা জীব-বৈচিত্রের উপর বিরুপ প্রভাবের আশংকা রয়েছে। তাই রামসার সচিবালয় সুন্দরবনের উপর সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য ইআইএ সম্পর্কে জানতে চায়।
২) সুন্দরবনের আক্রাম পয়েন্টে কয়লা লোড আনলোডের পরিকল্পনা সম্পর্কে। রামসার কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে ফুলবাড়ী প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে কয়লা রপ্তানির জন্য আক্রাম পয়েন্টে কয়লা উঠা নামা করা এবং জাহাজ চলাচলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ও ভৌত অবকাঠামা নির্মাণের ফলে সুন্দরবনের উপর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানতে চায়।
৩) সুন্দরবনের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমার মধ্যে একটি শীপ ইয়ার্ড ও সাইলো নির্মাণের সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে।
চিঠিটির অনুলিপিঃ
|
রামসারের চিঠি |
অর্থাৎ, রামপালের এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রামসার কনভেনশনেরও সুস্পষ্ট লংঘন।
প্রধান সংরক্ষক ইশতিয়াক উদ্দীন আহমদ গত ২৯ সেপ্টম্বর ২০১১ তারিখে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয় বরাবর চিঠি দিয়ে জানান:
Sundarbans Ramsar Site সুন্দরবনের অংশ যার Legal Custodian বন অধিদপ্তর। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে এবং Landscape Zone এ এমন কোন শিল্প কারখানা স্থাপনা করা যুক্তিযুক্ত হবে না যা সুন্দরবন তথা Sundarbans Ramsar Site এর জীববৈচিত্রের উপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে। কয়লা ভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের Royal Bengal Tiger তথা সমগ্র সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশ Ramsar Conservation এর Signatory থাকায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র রক্ষার বাধ্যবাধকতা আন্তর্জাতিক ভাবেও আরও বেশি দ্বায়িত্বশীল করে। বন সংরক্ষক, খুলন অঞ্চল সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় কয়লা ভত্তিক Power Plant স্থাপন করা হলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। Sundarbans Ramsar Site (World Heritage Site) বিধায় কয়লা ভিত্তিক Power Plant প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টি জীববৈচিত্র সংরক্ষণকে গুরুত্ব দিয়ে পুন:বিবেচনা করার জন্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলো।
চিঠিটি নিম্নরূপঃ
|
প্রধান বন সংরক্ষক এর চিঠি |
এমনকি ভারতের সাথে চুক্তি নিয়েও মিথ্যাচার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে ভারত ৫০:৫০ অনুপাতে টাকা দেবে এবং ৫০:৫০ অনুপাতে বিদ্যুৎ নেবে। আসলে কি তাই? চলুন দেখি এর খুটিনাটি।
রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের EIA রিপোর্টে বলা হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের বিদ্যুৎ এর শেয়ার হবে ৫০:৫০। যেটা দেখিয়েই মুলত বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। কিন্তু কাহিনী কিন্তু এখানেই শেষ নয়।
একই রিপোর্টে এটাও লেখা হয়েছে যে, মোট অর্থায়নের ৭০ শতাংশ আসবে বিদেশী লোন থেকে, যেটা নেবে বাংলাদেশ এবং যেটার পুরোটা শোধ করতে হবে বাংলাদেশকেই। বাকি ৩০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশ বাংলাদেশের পিডিবি ও ১৫ শতাংশ দেবে ভারতের NTPC (Executive Summary, পৃষ্ঠা xxxii)। অর্থাৎ বাংলাদেশকে দিতে হবে ৭০+১৫ = ৮৫ শতাংশ। আর ভারতকে দিতে হবে মাত্র ১৫ শতাংশ। এর মানে দাড়াচ্ছে বাংলাদেশ ৮৫ শতাংশ টাকা দিয়েও বিদ্যুৎ পাবে ৫০ শতাংশ। আর ভারত ১৫ শতাংশ টাকা দিয়েও সেই ৫০ শতাংশই পাবে। সাথে যোগ করুন পরিবেশজনিত ক্ষতি যার পুরোটা বহন করতে হবে বাংলাদেশকেই।
শুধু বাংলাদেশ নয়, একই কথা লেখা হয়েছে খোদ ভারতের সংবাদমাধ্যমেও।
সুন্দরবন মায়ের মতন। একে আমরা ধ্বংস হতে দিতে পারি না। সকল মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। সুন্দরবন রক্ষায় এগিয়ে আসুন। সুন্দরবন ধ্বংস করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চাই না।
(বেশ কিছু তথ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে Kallol Mustafa এর বিভিন্ন স্ট্যাটাস ও নোট থেকে)
রেফারেন্সঃ
- Electricity generation - Wikipedia, the free encyclopedia
- Electricity production from coal sources - The World Bank
- 2011 IPCC aggregated results - Page 10
- Benjamin K. Sovacool, Valuing the greenhouse gas emissions from nuclear power: A critical survey - page 2950.
- Vehicles
Are Not the Cause of Most Acid Rain : New USGS Study Links Ongoing
Nitrate Pollution to Distant Coal-Fired Industry - The Daily Green
- Environmental impacts of coal power: air pollution - Union of Concerned Scientists
- Coal Power Plants - Greenpeace International
- List of countries by electricity production - Wikipedia, the free encyclopedia
- Electricity sector in China - Wikipedia, the free encyclopedia
- Majority
of China’s Proposed Coal-Fired Power Plants Located in Water-Stressed
Regions - Tianyi Luo, Betsy Otto and Andrew Maddocks - WRI Insights
- 10 Most Polluted Cities In The World - Curiosity Aroused
- Pollution in China - Wikipedia, the free encyclopedia
- Air Pollution Grows in Tandem with China's Economy - Louisa Lim - NPR
- As China Roars, Pollution Reaches Deadly Extremes - JOSEPH KAHN and JIM YARDLEY - The New York Times
- Top 10 Cities With the World’s Worst Air - Urbanpeek
- What is the largest fuel source for electricity in the United States ? - Duke University Center for Sustainability and Commerce
- Coal Generation Drops to 30-Year Low - Katherine Tweed - Greentechmedia
- Coal's
share of total U.S. electricity generation falls below 40% in November
and December - U.S. Energy Information Administration
- U.S.
Coal Generation Drops 19 Percent In One Year, Leaving Coal With 36
Percent Share Of Electricity - Stephen Lacey - Climate Progress
- White House Undercuts Coal Power Plant Water Pollution Rule - Environmental News Service
- Statement of Charles D. Connor, President and Chief Executive Officer, American Lung Association
- Stop the Coal Plant
- EDF helps prevent eight coal plants in Texas - Environmental Defense Fund
- Electricity sector in Japan - Wikipedia, the free encyclopedia
- Electricity sector in Russia - Wikipedia, the free encyclopedia
- Power plant output in the Federal Republic of Germany - European Nuclear Society
- Power generation, Germany - European Nuclear Society
- Opposition to coal in India - Sourcewatch
- NTPC’s coal-based project in MP turned down - The Hindu
- Green tribunal suspends environmental clearance for Cuddalore power project
- Indian villages relocate to save Bengal Tiger - The Telegraph
- List of largest power stations in the world - Wikipedia, the free encyclopedia
- The world's 25 biggest power plants - Rediff Business
- Cost of electricity by source - Wikipedia, the free encyclopedia
- List of countries by forest area - Wikipedia, the free encyclopedia
- Final
report on environmental impact assessment of 2x (500-660) MW coal based
thermal power plant to be constructed at the location of Khulna
- Raigarh Coal Fired Thermal Power Plant EIA report, Page E - 1
- The Environment Conservation Rules, 1997 (Page 204)
- Rampal Power Station (Proposed) - Wikipedia, the free encyclopedia
- Guidelines for diversion of forest land for non-forest purpose
- Technical EIA Guidance Manual For Thermal Power Plants - Ministry of Environment and Forest, Government of India (Page 4-9)
- সংকটে সুন্দরবন, সেই নৌপথ বন্ধ হয়নি - প্রথম আলো
- Raigarh Coal Fired Thermal Power Plant EIA report, Page E - 12
- UPDATED: Coal-Carrying Ship Wrecked on Barrier Reef Leaves 2-Mile Scar, 20-Year Damage - Treehugger
- Ramsar Convention - Wikipedia, the free encyclopedia
- List of parties to the Ramsar Convention - Wikipedia, the free encyclopedia
- List of Ramsar wetlands of international importance - Wikipedia, the free encyclopedia