image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিনঃ ২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১ ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ২/৩ শ‘ গেরিলার একটি দল পালং থানায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। চা...
২১ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
  • ২নং সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর ২/৩ শ‘ গেরিলার একটি দল পালং থানায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। চার ঘন্টা সম্মুখযুদ্ধের পর পাকবাহিনীর সদস্যরা ঘাঁটি ছেড়ে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে ৫০ জন পাকসেনা, রাজাকার ও পাকপুলিশ নিহত হয়। মুক্তিবাহিনীর গেরিলাদল সম্পূর্ণ এলাকা দখল করে।
  • কুমিল্লায় পাকবাহিনীর ৩৩-বেলুচের ‘বি’ এবং ‘ডি’ কোম্পানী মেজর দূররানির নেতৃত্বে চাঁদলা থেকে নৌকায় করে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান আক্রমণের উদ্দেশে মন্দভাগের দিকে অগ্রসর হয়। এ খবর পেয়ে ক্যাপ্টেন গাফফারের দল ও সুবেদার ওহাবের নেতৃত্বে এক প্লাটুন যোদ্ধা শালদা নদীর ওপর অবস্থান নেয়। পাকসেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের কাছাকাছি এলে তাদের ওপর মুক্তিযোদ্ধরা প্রচন্ড আক্রমণ চালায়। প্রায় ছয় ঘন্টা ব্যাপী এই যুদ্ধে পাকবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেনসহ ২৬ জন পাকসৈন্য নিহত ও অনেক আহত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।
  • পাকহানাদার বাহিনী হরিরামপুর থানার বল্লা গ্রামে লুটপাট করতে এলে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা তাদের প্রতিহত করে। এতে দুইজন পাকসেনা নিহত হয়। হানাদার বর্বররা কাপুরুষেরমত নিরস্ত্র গ্রামবাসীর ওপর এর প্রতিশোধ নেয়। পাকহানাদারদের পৈশাচিক নির্যাতনে ১৬ জন নিরীহ গ্রামবাসী নিহত হয়।
  • মুক্তিবাহিনী বরগুনা জেলার পাথরঘাটা অঞ্চলে পাকহানাদারদের অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে ৫ জন পাকসেনা নিহত ও ৩ জন আহত হয়।
  • নির্বাচন কমিশন ইতিপূর্বের ঘোষিত সময়সূচি বাতিল করে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের শূন্য আসনে উপ-নির্বাচনের নতুন তারিখ ঘোষণা করেন। পুনর্বিন্যাস্ত সময়সূচি অনুসারে ভোট গ্রহণ ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়ে ২৩ ডিসেম্বর শেষ হবে।
  • ‘বাংলার বানী’ পত্রিকায় ‘বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় কি দেখিলাম-’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় :
অতি সম্প্রতি ‘বাংলার বানী’-র একজন প্রতিনিধি বাংলাদেশের অধিকৃত অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা সফর করিয়া ফিরিয়া আসিয়াছেন। সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে আমাদের প্রতিনিধি যে বিবরণ লিপিবদ্ধ করিয়াছেন তাহারই শেষ অংশ এখানে ছাপা হইল। 
অধিকৃত এলাকায় পাকসেনারা যথেচ্ছাভাবে স্থানীয় অবাঙ্গালী কুলি-কামিন এবং চোর-ডাকাত, গুন্ডা-বদমায়েশদের লইয়া বদর, রাজাকার ও মুজাহিদ বাহিনী গঠন করিয়া চালয়াছে। তাহাদের সহিত কিছু মুসলিম লীগ ও জামায়াতের গুন্ডা-পান্ডাও জুটিয়াছে। তাহারা পাকবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় থাকিয়া যে ঘৃন্য কেলেঙ্কারীর ইতিহাস সৃষ্টি করিয়া চলিয়াছে তাহা বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না। পাকবাহিনী নিজেরা যে কোন সম্মুখ সমরে গাঁ বাঁচাইয়া চলিয়া প্রায়শঃহ ইহাদিগকে মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ঠেলিয়া দেয়। 
হাট বাজারঃ অধিকৃত এলাকায় হাট-বাজার প্রায় সবই কোনমতে চলিতেছে। এবং জিনিসপত্রের দাম আগুন হইয়া উঠিয়াছে। অতি সম্প্রতি সেখানে লবণ প্রতিসের দুইটাকা হিসাবে এবং কিছুদিন আগে কেরোসিন তেল প্রতি টিন ৪৫ ঠাকা হইতে ৫২ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হইয়াছে ।
শহরের পথ-ঘাটঃ শহরের পথচারী প্রতিটি মানুষের চোখে মুখে আতঙ্কের ভাব পরিস্পূট। শহরের প্রায় বড় বড় দোকানগুলি তালাবদ্ধ হইয়াছে। রাতারাতি শহরের সকল সাইনবোর্ড ও মোটরগাড়ী, রিকশার নম্বর প্লেট বাংলা হইতে উর্দুতে লিখিতে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। আওয়ামী লীগ ও জামায়াত মুসলিম সমর্থকদের মধ্যে নামমাত্র মূল্যে বিক্রী করা হইয়াছে।
  • ‘বাংলার বানী’ পত্রিকায় ‘আজ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বৈঠক/মাতৃভূমির বক্তব্য পেশের বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নিউইয়র্ক যাত্রা’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় :
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত বাংলাদেশের দশ দিগন্তে হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদস্যুদের হিংস্র বর্বর গণহত্যাযজ্ঞের কালিমালিপ্ত পটভূমিতে আজ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হইতেছে। এই অধিবেশনকালে বঙ্গবন্ধুর পক্ষ হইতে, স্বাধীন বাংলার পক্ষ হইতে, ১৬ সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল বিশ্বের দরবারে জননী বাংলার দুঃখ ও বেদনার কাহিনী,সংগ্রাম ও বিক্রমের কাহিনী পেশ করিবেন।
এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব করিবেন লন্ডনস্থ বাংলাদেশ মিশনের প্রধান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বিচারপতি জনাব আবু সাইদ চৌধুরী। 
প্রতিনিধিদলের ১১ জন সদস্য আজ মুজিবনগর হইতে নিউইয়র্কের পথে নয়াদিল্লী রওয়ানা হইয়া গিয়াছেন। প্রতিনিধিদলের বাকী ৫ জন সদস্যের সবাই বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।
এই প্রতিনিধিদল জাতিসংঘকে সুস্পষ্টভাবে জানাইয়া দিবেন যে, একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিনাশর্তে মুক্তিদান, বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দান, হানাদার পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং জঙ্গী বর্বরতায় ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দানের পরই বিবেচনা হইতে পারে জঙ্গীশাহীর সঙ্গে কোন আপোষ মীমাংসার প্রশ্ন আলোচনা করা যায় কি না।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top