image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিনঃ ২৬ মার্চ, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
২৬ মার্চ, ১৯৭১ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র নিরপরাধ বাঙালির বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করলে-মুক্তি সংগ্র...
২৬ মার্চ, ১৯৭১
  • ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র নিরপরাধ বাঙালির বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করলে-মুক্তি সংগ্রামের সর্বধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন: “পাকিস্তান সেনাবাহিনী অতর্কিতে পিলখানায় ইপিআর ঘাঁটি,রাজারবাগ পুলিশ লাইন আক্রমণ করেছে এবং শহরের লোকদের হত্যা করছে। ঢাকা, চট্টগ্রামের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ চলছে। আমি বিশ্বের জাতিসমূহের কাছে সাহায্যের আবেদন করছি। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা বীরত্বের সঙ্গে মাতৃভূমি মুক্ত করার জন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করছে। সর্ব শক্তিমান আল্লাহর নামে আপনাদের কাছে আমরা আমার আবেদন ও আদেশ দেশকে স্বাধীন করার জন্য শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যান।” কোন আপোষ নাই, জয় আমাদের হবেই। আমাদের পবিত্র মাতৃভূমি থেকে শেষ শত্রুকে বিতাড়িত করুন। সকল দেশ প্রেমিক ও স্বাধীনতা প্রিয় লোকদের এই সংবাদ পৌঁছে দিন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করুন। জয় বাংলা।
  • ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনী বিভীষিকাময় অবস্থার সৃষ্টি করে মেশিনগান মর্টারের গোলায় আর অগুনের লেলিহান শিখায়। অপরদিকে এই রাতে উপ্ত হয় নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। নব সূর্যোদয়ের মধ্যদিয়ে সূচিত হয় নতুন প্রতিজ্ঞার ইতিহাস। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
  • স্বাধীন বাংলার অবরুদ্ধ রাজধানী ঢাকা ছাড়া সমগ্র বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা দিনে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলিত হয়।
  • বন্দর নগরী চট্টগ্রামকে সশস্ত্র যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে দেশের সর্বত্র চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হ্যান্ডবিল আকারে ইংরেজি ও বাংলায় ছাপিয়ে চট্টগ্রামে বিলি করা হয়।
  • আওয়ামী লীগের শ্রম সম্পাদক জহুর আহমেদ চৌধুরী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রামস্থ ইপিআর সদর দফতর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ারলেস মারফত প্রেরণের ব্যবস্থা করেন। চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম.এ.হান্নান দুপুর ২ টা ১০ মিনিটে এবং ২ টা ৩০ মিনিটে চট্টগ্রাম বেতার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন।
  • সকালে ঢাকা সেনানিবাসের অভ্যন্তরের আদমজী কলেজ থেকে বন্দী অবস্থায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে  স্টাফ হাউজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে সারাদিন আটকে রেখে সন্ধ্যায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।
  • পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় দিনরাত কারফিউ দিয়ে দলে দলে রাস্তায় নেমে ভবন, বস্তি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বাসভবনের ওপর ভারি মেশিনগান ও কামানের গোলা নিক্ষেপ করতে থাকে। এলাকার পর এলাকা আগুন লাগিয়ে ভয়ার্ত নর-নারী-শিশুকে অগ্নিদগ্ধ করে এবং গুলি করে হত্যা করে। বিদেশী সাংবাদিকদের হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে আটক রাখা হয়।
  • অবাঙালি নাগরিকদের সহযোগিতায় পাক সেনারা দুপুরে পুরনো ঢাকা আক্রমণ করে এবং মধ্যরাত পর্যন্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। পাক হানাদার বাহিনী দি পিপল, সংবাদ, ইত্তেফাক, বাংলার বাণী অফিসে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ট্যাঙ্কের গোলায় ধ্বংস করে দেয়।
  • বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একাধিক গণকবর খুঁড়ে সেখানে শত শত লাশ মাটি চাপা দিয়ে তার ওপর বুলডোজার চালায়। নগরীর বিভিন্ন স্থানে সারারাত ধরে হাজার হাজার লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়। পুরনো ঢাকায় নিহতদের লাশ বুড়িঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়।
  • সকালে পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভূট্টো কড়া সামরিক প্রহরায় ঢাকা ত্যাগ করেন। করাচী বিমান বন্দরে পৌঁছে তিনি ঢাকায় ২৫ মার্চের সেনাবাহিনীর অপারেশনের প্রশংসা করে বলেন, আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ। সেনাবাহিনী পাকিস্তানকে রক্ষা করেছে।
  • রাত আটটায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান করাচী থেকে এক বেতার ভাষণে বলেন,পূর্ব পাকিস্তান সরকারের ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনীকে আদেশ দেয়া হয়েছে। শেখ মুজিবর রহমান অসহযোগ আন্দোলন করে রাষ্ট্রদ্রোহিতার কাজ করেছেন। জেনারেল ইয়াহিয়া খান বলেন, ‘আমি শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর সহযোগিদের বিরুদ্ধে আগেই ব্যবস্থা নিতে পারতাম। কিন্তু আমি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের পক্ষপাতী বলেই ন্যায় সঙ্গত উপায়ে উদ্ভুত পরিস্থিতির সমাধান চেয়েছি। তিনি বলেন, শেখ মুজিবর শেখ মুজিবর রহমানের একগুঁয়েমি, অনড় মনোভাব থেকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, লোকটি এবং তাঁর দল পাকিস্তানের শত্রু। শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সংহতি ও সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত হেনেছেন। এ অপরাধের জন্য তাঁকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top