১৮ মে, ১৯৭১
- গোপালগঞ্জ
শহর মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ক্যাপ্টেন জামাল ১৫০ জন যোদ্ধা নিয়ে শহরের
পশ্চিমদিকে ঘোরেচর গ্রামে, কমান্ডার ওমরের নেতৃত্বে একটি দল শহরের
পূর্বদিকে বেদ গ্রামে ও নওশের আলী ৩০ জন যোদ্ধা নিয়ে মানিকদাহ থেকে শহরের
দক্ষিণে নবীনবাগে অবস্থান নেয়।
- কুমিল্লার
সিঙ্গারবিল এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদারবাহিনীর সৈন্যদের অবস্থান
আক্রমণ কর। এ অভিযানে পাকবাহিনীর ৬ জন সৈন্য নিহত হয়।
- বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বেতার ভাষণে বলেন,
সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার বহু বিদেশী রাষ্ট্রের
স্বীকৃতি লাভ করবে।
- অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বলেন, মুক্তিফৌজের কঠোর প্রতিরোধ ও তীব্র পাল্টা
আক্রমণে পাকিস্তান বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে অভাবিত
ত্যাগ স্বীকার করেছে। লাখ লাখ লোক ইয়াহিয়ার বর্বর বাহিনীর গুলিতে প্রাণ
দিয়েছে। গৃহহারা হয়ে পথের ভিখিরি হয়েছে। সন্তানহারা মায়ের অশ্রুতে বাংলার
আকাশ বাতাস আজ ভারাক্রান্ত। শহীদের রক্তে বাংলাদেশের পথ-প্রান্তর আজ
রক্তগঙ্গা। তবু জাতি সংগ্রামী মনোবল হারায়নি।
- তিনি আরো বলেন, সাড়ে সাত কোটি বাঙালির ত্যাগ বৃথা যেতে পারে না এবং তা
বৃথা যেতে দেয়া হবে না। বাঙালির এই অশ্রু একদিন তাদের মুখে হাসি ফোটাবেই।
- তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের বৃহত্তম গণহত্যার ঘটনায় মুসলিম রাষ্ট্রবর্গের
নীরবতা অবলম্বনে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন। পশ্চিমা সামরিক বাহিনীর সহযোগী
বিশ্বাসঘাতকদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মুক্তিসংগ্রাম বিরোধী
ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। ধর্ম,বর্ণ ও মতাদর্শ নির্বিশেষে
দেশের প্রতিটি মানুষকে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হযে মুক্তির
লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করার আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, জয় আমাদের সুনিশ্চিত।
কোনো শক্তিই তা ঠেকাতে পারবে না।
- ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, পূর্ববঙ্গ থেকে ক্রমবর্ধমান
উদ্বাস্তু আগমনের মুখে তার জাতীয় স্বার্থে ব্যবস্থা গ্রহণ করাতে বাধ্য হবে।
আমাদের ওপর কোনো পরিস্থিতি চাপিয়ে দেয়া হলে তার মোকাবেলা করতে ভারত
পুরোপুরি প্রস্তুত।
- সিনেটর ফ্রাঙ্ক চার্চ মার্কিন সিনেটে এক বিবৃতিতে বলেন, পাকিস্তানের
গৃহযুদ্ধে সত্যিই যদি নিরপেক্ষ থাকতে হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে পশ্চিম
পাকিস্তানে সামরিক ও অর্থনৈতিক সাহায্য সরবরাহ বন্ধ করতে হবে।
- তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রদত্ত অস্ত্রশস্ত্র পাকিস্তান তার নিজের
জনগণের ওপর ব্যবহার করছে। নির্বাচিত নেতৃবর্গকে হত্যা ও পূর্ব বাংলার
জনসাধারণের ওপর অত্যাচার চালানোর ঘটনা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগের
বিষয় নয় বলে পাকিস্তান সামরিক সরকার যে যুক্তি দেখিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র
সরকারের অবশ্যই উচিত তা বাতিল করে দেয়া।
- চিফ সেক্রেটারি, বিবাগীয় কমিশনার, পুলিশের আই.জি বেশ কিছু জেলা প্রশাসক ও
এসপিসহ প্রাদেশিক সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাকে পশ্চিম পাকিস্তানে বদলি করে
তাদের স্থলে পশ্চিম পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের নিয়োগ করা হবে মর্মে সামরিক
কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
- পিডিপির মৌলভী ফরিদ আহমদ আওয়ামী লীগ সদস্যদের প্রকাশ্য বিচার দাবি করে
বলেন, পাকিস্তানের সংহতির স্বার্থে তা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ
পাকিম্তানকে ধ্বংস করার জন্য ১৯৪৭ সাল থেকেই চক্রান্তে লিপ্ত ছিল।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook