বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুন্সী আবদুর রউফ

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioX-InogmB1WVTj4bXoPu5xqegGogNOiCmV3fZRWrJIGLoDbQt5LUCD-CI-qCME_oV1yCPMRvSCCIGlYgqbWPaZ6Fmrz-yvdA6fF2u3neTXrk6lHVHPaVCXxiC110qQvnGHGM6526ymm8/s1600/7bs.jpg" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioX-InogmB1WVTj4bXoPu5xqegGogNOiCmV3fZRWrJIGLoDbQt5LUCD-CI-qCME_oV1yCPMRvSCCIGlYgqbWPaZ6Fmrz-yvdA6fF2u3neTXrk6lHVHPaVCXxiC110qQvnGHGM6526ymm8/s640/7bs.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> মুন্সি আব্দুর রউফ (১ মে ১৯৪৩ - ১৮ এপ্রিল ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ যে সাতজন বীরকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয় তিনি তাঁদের অন্যতম।</div> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiu6ZjiAyp75CkrejHntivKXsInln8gVxxo2e-e4ll7a7Gtphse4JLkC4ggo3iiIr3IXsecEe64foCGEinyj2jIJJjOlLxHe6a07DyuIz3wFrnTjEepQuhO_qH5F4f2v3-5z1g3AgoqNDU/s1600/74.jpg" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="640" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiu6ZjiAyp75CkrejHntivKXsInln8gVxxo2e-e4ll7a7Gtphse4JLkC4ggo3iiIr3IXsecEe64foCGEinyj2jIJJjOlLxHe6a07DyuIz3wFrnTjEepQuhO_qH5F4f2v3-5z1g3AgoqNDU/s640/74.jpg" width="446" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> জন্ম ও শৈশব<br /> <br /> মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ১ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুরে (বর্তমান নাম রউফ নগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মুন্সি মেহেদি হাসান ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাতা মুকিদুন্নেসা। তাঁর ডাকনাম ছিলো রব। তাঁর দুই বোনের নাম ছিল জোহরা এবং হাজেরা। তিনি সাহসী ও মেধাবী ছিলেন, কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি ঝোঁক ছিলো না। শৈশবে তাঁর বাবার কাছে লেখাপড়ার হাতেখড়ি হয়। ছোট চাচা মুন্সি মোতালেব হোসেনের সঙ্গই তাঁর অধিক প্রিয় ছিলো৷ চাচা মুন্সি মোতালেব হোসেন ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের হাবিলদার৷ চাচা যখনই বাড়ি ফিরতেন তখনি তিনি তাঁকে শোনাতেন সৈনিকদের সুশৃঙ্খল ও রোমাঞ্চিত জীবনের গল্প৷</div> <div style="text-align: justify;"> <br /> শিক্ষা ও কর্মজীবন<br /> <br /> ১৯৫৫ সালে তাঁর পিতার মৃত্যুর পর তিনি বেশিদূর লেখাপড়া করতে পারেন নি। মুন্সি আব্দুর রউফের বয়স তখন খুবই অল্প৷ বাবার মৃত্যুর পর বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন ঘটতে থাকে আব্দুর রউফের জীবনাচারে৷ লেখাপড়ার প্রতি মনযোগ বাড়ে৷ এর ফলে মেধাবী বলে তাঁর সুনামও হয়৷ গাঁয়ের প্রাথমিক স্কুল শেষ করার পর ভর্তি হন থানা শহরের হাইস্কুলে৷  মায়ের দুঃখ কষ্ট দেখে তিনি বিচলিত হয়ে পড়তেন৷ চাচার কাছে শুনেছেন সপ্তম শ্রেণী পাশ করতে পারলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবেন৷ অষ্টম পড়া অবস্থায় ১৯৬৩ সালের মে মাসে আব্দুর রউফ যোগ দেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে৷ সেসময় তাঁকে ৩ বছর বেশি বয়স দেখাতে হয়েছিলো চাকুরিটি পাবার জন্য।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> চুয়াডাঙ্গার ইআরপি ক্যাম্প থেকে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষ করে আব্দুর রউফ উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য পশ্চিম পাকিস্তানে যান। ছয় মাস পরে তাকে কুমিল্লায় নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং-এ কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /> মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা<br /> <br /> ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুন্সি আব্দুর রউফ তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে তিনি চট্টগ্রামে ১১ উইং-এ চাকুরিরত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ল্যান্স নায়েক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি মাঝারি মেশিনগান ডিপার্টমেন্টের ১ নং মেশিনগান চালক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি - মহালছড়ি জলপথে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই জলপথ দিয়ে পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনীর চলাচল প্রতিরোধের দায়িত্ব পরে তাঁর কোম্পানির উপর। কোম্পানিটি বুড়িঘাট এলাকার চিংড়িখালের দুই পাড়ে অবস্থান নিয়ে গড়ে তুলে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> যেভাবে শহীদ হন</div> <div style="text-align: justify;"> </div> <div style="text-align: justify;"> নীরব-নির্জন হ্রদের বুক চিরে শান্ত পানিতে অস্থির ঢেউ তুলে এগিয়ে আসতে লাগলো সাতটি স্পিডবোট এবং দুটো লঞ্চ৷ এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুই কোম্পানি সৈন্য৷ তাদের সঙ্গে ছয়টি তিন ইঞ্চি মর্টার আর অনেক মেশিনগান ও ভারী অস্ত্রশস্ত্র৷ এটি ছিলো পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় কমান্ডো ব্যাটালিয়নের কোম্পানি। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কাছাকাছি পৌঁছেই পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ শুরু করে। স্পিডবোট থেকে মেশিনগানের গুলি এবং আর লঞ্চ দুইটি থেকে তিন ইঞ্চি মর্টারের শেল নিক্ষেপ করছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের দিকে। পাকিস্তানি বাহিনীর উদ্দেশ্য ছিলো রাঙামাটি-মহালছড়ির জলপথ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের পিছু হটিয়ে নিজেদের অবস্থান প্রতিষ্ঠা।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /> অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে খুব দ্রুতই পজিশন নিয়ে নেন পরিখায়। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলির তীব্রতায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যায় এবং তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলে। যুদ্ধের এই পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কমান্ডার আব্দুর রউফ বুঝতে পারলেন, এভাবে চলতে থাকলে ঘাঁটির সকলকেই পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে মৃত্যু বরণ করতে হবে। তিনি তখন কৌশলগত কারণে পশ্চাৎপসারণের সিদ্ধান্ত নিলেন। এই সিদ্ধান্ত সৈন্যদের জানানো হলে সৈন্যরা পিছু হটতে লাগল। মুন্সি আব্দুর রউফ দেখলেন, শত্রু এগিয়ে এসেছে খুব কাছে আর এভাবে সকলে একযোগে পিছু হটতে চাইলে একযোগে সকলেই মারা পড়বে৷ কাভার দেওয়ার জন্যে কাউকে না কাউকে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে৷ তিনি পিছু হটলেন না৷ কাভার দেওয়ার জন্য নিজ পরিখায় দাঁড়িয়ে গেলেন মুন্সি আব্দুর রউফ স্বয়ং৷ ল্যান্স নায়েক আব্দুর রউফ এক একটা স্পিড বোটকে লক্ষ্য স্থির করে মেশিনগান দিয়ে অবিরাম গুলি বর্ষণ করতে থাকেন৷ তাঁর প্রচণ্ড গুলিবৃষ্টিতে থমকে গেল শত্রুরা৷ একের পর এক শত্রুসেনা লুটিয়ে পড়তে লাগলো৷ একটি একটি করে সাতটি স্পিড বোটই ডুবে গেলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দুটি লঞ্চ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। লঞ্চ দুটো পিছু হটে রউফের মেশিনগানের গুলির আওতার বাইরে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়। পাকিস্তানি বাহিনী এরপর লঞ্চ থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। মর্টারের গোলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা রউফের একার পক্ষে সম্ভব ছিলো না। শত্রুর একটি মর্টারের গোলা হঠাৎ এসে পড়ে তার বাঙ্কারে৷ মৃত্যুশেলে ঝাঁঝড়া হয়ে যায় তাঁর সমস্ত শরীর৷ থেমে গেলেন তিনি৷ হাত থেকে পাশে ছিটকে পড়ল মেশিনগান৷ কিন্তু তাঁর মৃত্যুর আগে সহযোগী যোদ্ধারা সবাই নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে যেতে পেরেছিলো। সেদিন আব্দুর রউফের আত্মত্যাগে তাঁর কোম্পানির প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> সমাধিস্থল</div> <div style="text-align: justify;"> চির রুদ্রের প্রতীক এই বীরকে সমাহিত করা হয়েছিলো রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের পাশে৷ ১৯৯৬ সালে রাঙামাটিবাসী প্রথম জানতে পারে, এ চিরসবুজ পাহাড়ের মাঝেই ঘুমিয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ৷ ঐ সময় দয়ালন চন্দ্র চাকমা নামে এক আদিবাসী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধিস্থল শনাক্ত করেন৷ শনাক্ত করার পর তাঁর সমাধিস্থলটি সরকার নতুনভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেয়৷ শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের সমাধি পার্বত্য জেলা রাঙামাটির নানিয়ার চরে অবস্থিত। </div> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhVh307fL6rYPWC2Y3E2p6FbhAVEWaCJwrzFmuldyt7iqWVIgIZ4l5JUYqihdW8Glo2C0uYEMHoP0WJfPyzCH96JmENWNgT6CXfc7Qz4Aj-9JtKglr7EroxlsTjOlx59ZfhAcHiLvLJXa8/s1600/Grave_of_Shahid_Lance_Naik_Munshi_Abdur_Rauf_Bir_Shreshtho_at_Burighat%252C_Naniarchar%252C_Rangamati-2.JPG" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEhVh307fL6rYPWC2Y3E2p6FbhAVEWaCJwrzFmuldyt7iqWVIgIZ4l5JUYqihdW8Glo2C0uYEMHoP0WJfPyzCH96JmENWNgT6CXfc7Qz4Aj-9JtKglr7EroxlsTjOlx59ZfhAcHiLvLJXa8/s640/Grave_of_Shahid_Lance_Naik_Munshi_Abdur_Rauf_Bir_Shreshtho_at_Burighat%252C_Naniarchar%252C_Rangamati-2.JPG" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;">এই কবরে মহান এই বীর চিরশায়িত আছেন</td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> সম্মাননা</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> তাঁর অপরিসীম বীরত্ব, সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে সিপাহি মুন্সি আব্দুর রউফকে অনরারি ল্যান্স নায়েক পদে মরণোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে। ২০১৪ সালে পিলখানায় বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ। তাঁর স্মৃতিতে শালবাগান, চট্টগ্রাম - রাঙামাটি সড়ক, সাপছড়ির মধ্যবর্তী স্থানে ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন (ECB-16) একটি স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করেছে। মানিকছড়ি, মুসলিম পাড়া, মহালছড়ি, খাগড়াছড়ি এর একটি উচ্চ বিদ্যালয় তাঁর নামে রাখা হয়েছে। সিলেটের একটি ক্রিকেট স্টেডিয়াম তাঁর নামে রাখা হয়েছে। ফরিদপুর জেলার একটি কলেজ তাঁর নামে রাখা হয়েছে, যেটি সরকারিকরণ করা হয়েছে।<br /> <br /> সংক্ষিপ্ত জীবনী <br /> <br /> নাম : মুন্সি আব্দুর রউফ । <br /> জন্ম : ১ মে, ১৯৪৯ ইং ৷ <br /> জন্মস্থান : ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার সালামতপুর গ্রামে ৷ <br /> পিতা : মুন্সি মেহেদী হোসেন ৷ <br /> মা : মোছাঃ মুকিদুন্নেছা ৷ <br /> কর্মস্থল : ই পি আর ( ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)৷ <br /> যোগদান : ৮ মে ১৯৬৩ সাল৷ <br /> পদবী : ল্যান্স নায়েক ৷ <br /> মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ১ নং সেক্টর ৷ <br /> মৃত্যু : ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল ৷ <br /> সমাধি স্থল : রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারে কেন্দ্রিয় শহীদ মিনারের পাশে।<br /> <br /> ছবি ও তথ্য সূত্র : মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিভিন্ন গবেষনাপত্র।<br /> <br /> এই নিবন্ধটি ইংরেজিতে পড়তে <a href="http://voiceof71english.blogspot.com/2017/04/bir-sreshtho-munshi-abdur-rouf.html" target="_blank">এখানে</a> ক্লিক করুন। </div> </div>

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মুন্সী আবদুর রউফ

মুন্সি আব্দুর রউফ (১ মে ১৯৪৩ - ১৮ এপ্রিল ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্...

Read more »

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioX-InogmB1WVTj4bXoPu5xqegGogNOiCmV3fZRWrJIGLoDbQt5LUCD-CI-qCME_oV1yCPMRvSCCIGlYgqbWPaZ6Fmrz-yvdA6fF2u3neTXrk6lHVHPaVCXxiC110qQvnGHGM6526ymm8/s1600/7bs.jpg" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioX-InogmB1WVTj4bXoPu5xqegGogNOiCmV3fZRWrJIGLoDbQt5LUCD-CI-qCME_oV1yCPMRvSCCIGlYgqbWPaZ6Fmrz-yvdA6fF2u3neTXrk6lHVHPaVCXxiC110qQvnGHGM6526ymm8/s640/7bs.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"><br /></td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭ - এপ্রিল ১৮ ১৯৭১)</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম।</div> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI5A3rCXWi8_bu6ASRGftoz_XVybI3zdgMq9glAJO7tvW23FzUSGpap8WhR7nogOAFOOShj6hf8cnx4c0TJKXepZoi9PCR587k2K8kL5YYqthkJtaYKxKvYujQuKG7pH0j1DgL8N7bxdc/s1600/73.jpg" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="640" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEjI5A3rCXWi8_bu6ASRGftoz_XVybI3zdgMq9glAJO7tvW23FzUSGpap8WhR7nogOAFOOShj6hf8cnx4c0TJKXepZoi9PCR587k2K8kL5YYqthkJtaYKxKvYujQuKG7pH0j1DgL8N7bxdc/s640/73.jpg" width="446" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"><br /></td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> জন্ম ও শিক্ষাজীবন<br /> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মোস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজীপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাবিবুর রহমান সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার ছিলেন। মাতা মালেকা বেগম৷ শৈশব থেকেই দুঃসাহসী হিসেবে খ্যাত ছিলেন। পড়াশোনা বেশিদূর করতে পারেননি। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পর উচ্চ বিদ্যালয়ে দু-এক বছর অধ্যয়ন করেন। <br /> <br /> মোস্তফা কামালের ছেলেবেলা তাঁর পিতার কর্মস্থল কুমিল্লা সেনানিবাসে কেটেছে। গ্রামে হাবিবুর রহমান হাফিজ মিলিটারি নামে পরিচিত৷ সরকারি ছুটিছাটায় হাবিবুর রহমান যখন গ্রামে আসেন তখন তাঁর সাথে নিয়ে আসেন স্ত্রী মালেকা বেগম ও দুই সন্তান মোস্তফা কামাল এবং মোস্তাফিজুর রহমানকে৷ সেনানিবাসের সাজানো গুছানো পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে তাঁর দিন কেটে যায়৷ স্কুল ফাঁকি দিয়ে মোস্তফা কামাল ঘুরে বেড়ান সৈনিকদের ছাউনিতে৷ বিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখার চেয়ে সেনানিবাসে সেনাদের কুচকাওয়াজ, মার্চপাস্ট ইত্যাদি ভাল লাগতো। ক্রমেই তিনি সেনাবাহিনীর একজন সদস্য হবার স্বপ্ন দেখতে থাকেন এবং স্থির করেন সেনাবাহিনীতে যোগ দিবেন। পিতা চাননি তাঁর ছেলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিক৷ ফলে ২০ বছর বয়সে মোস্তফা কামাল একদিন কাউকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান৷ তিনি চুপিচুপি যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। পরে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানের চতুর্থ ইস্ট-বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি চূড়ান্ত হবার পরে তাঁর বাবা-মা সন্ধান পান।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> প্রশিক্ষণ শেষে তাঁকে নিয়োগ করা হয় ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, কুমিল্লায়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কয়েকদিন পূর্বে সিপাহি মোস্তফা কামাল অবৈতনিক ল্যান্স নায়েক হিসেবে পদোন্নতি পান।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা<br /> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> তিনি ছিলেন চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক। ১৯৭১ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে পাঠানো হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়৷ তখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে স্বাধীনতা যুদ্ধের স্ফুলিঙ্গ৷ স্বাধীনতার দাবিতে সারাদেশ উত্তাল৷ প্রতিটি সেনানিবাসে থমথমে অবস্থা৷ বাঙালি সামরিক অফিসারদের চেয়েও অধিক ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ, উদ্বেলিত উত্তেজিত ছিল বাঙালি সিপাহীরা৷ <br /> <br /> সামরিক নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর অবাঙালি অধিনায়কেরা বিভিন্ন বাঙালি রেজিমেন্টকে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে স্থানান্তর করছিল৷ এই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শক্তিশালী করার উদ্দ্যেশেই কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্থানান্তর করা হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে৷ কিন্তু উদ্দেশ্য শেষপর্যন্ত ব্যর্থ হয়৷ মেজর শাফায়েত জামিল কিছুসংখ্যক বাঙালি অফিসারের সহায়তায় ২৭ মার্চের সকালবেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সেসময়ের অবাঙালি অধিনায়ক লে.কর্নেল খিজির হায়াত খান এবং সমস্ত পাকিস্তানি অফিসার ও জওয়ানদের নিরস্ত্র করে বন্দি করে ফেলেন৷ অপরদিকে মেজর খালেদ মোশাররফ অন্য একটি কোম্পানি নিয়ে সিলেটের শমসেরনগর থেকে বিদ্রোহে যোগ দেন এবং নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। এরপর তারা মেজর খালেদ মোশারফের নেতৃত্বে আশুগঞ্জ, উজানিস্বর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার এন্ডারসন খালের পাশ দিয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। ১৪ এপ্রিল পাকিস্তানি বাহিনী হেলিকপ্টার গানশীপ, নেভাল গানবোট ও এফ-৮৬ বিমানযোগে মুক্তিবাহিনীর ৪ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনী কৌশলে পশ্চাদপসরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া - আখাউড়া রেলপথ ধরে চলে এল আখাউড়ায়৷ এই আখাউড়াকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে মোট তিনটি প্রতিরক্ষা ঘাঁটি গড়ে তোলা হলো৷ তিতাস নদীর ব্রিজে, আখাউড়ার দক্ষিণে গঙ্গাসাগরে এবং তার উত্তরে দরুইন গ্রামে।<br /> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ইতিমধ্যেই মোস্তফা কামালের সাহস, বুদ্ধি ও কর্মতৎপরতা মুগ্ধ করে মেজর সাফায়াত জামিলকে ৷ তিনি তাঁকে ২নং প্লাটুনের ল্যান্সনায়েক নির্বাচিত করেন৷ সে অনুসারে মোস্তফা কামাল দশজন সৈন্যের সেকশন কমান্ডার হন৷ এই ২নং প্লাটুনকেই দরুইন গ্রামের প্রতিরক্ষা ঘাঁটির দায়িত্ব দেওয়া হলো৷</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> যেভাবে শহীদ হলেন<br /> <br /> ১৬ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী চতুর্থ ইস্ট বেঙ্গলকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কুমিল্লা-আখাউড়া রেললাইন ধরে উত্তর দিকে এগুতে থাকে। ১৭ই এপ্রিল পরদিন ভোরবেলা পাকিস্তান সেনাবাহিনী দরুইন গ্রামে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর মর্টার ও আর্টিলারীর গোলাবর্ষণ শুরু করলে মেজর শাফায়াত জামিল ১১ নম্বর প্লাটুনকে দরুইন গ্রামে আগের প্লাটুনের সাথে যোগ দেয়ার নির্দেশ দেন। ১১ নম্বর প্লাটুন নিয়ে হাবিলদার মুনির দরুইনে পৌছেন। সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল তার নিকট থেকে গুলি নিয়ে নিজ পরিখায় অবস্থান গ্রহণ করেন।<br /> <br /> সকালটা একরকম নির্বিঘ্নেই কাটল৷ পাকিস্তানি বাহিনী কোনোরকম গোলাবর্ষণই করল না৷ শুধু কয়েকটা হেলিকপ্টার উড়ে গেল উজানীস্বর পুলের দিকে৷</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> বেলা ১১ টার দিকে শুরু হয় শত্রুর গোলাবর্ষণ। সেই সময়ে শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। সাড়ে ১১টার দিকে মোগরা বাজার ও গঙ্গা সাগরের শত্রু অবস্থান থেকে গুলি বর্ষিত হয়। মোগরা বাজারের একটি উঁচু দালানের ছাদে শত্রুরা বসাল একটি মেশিনগান৷ আর এ থেকেই মারাত্মকভাবে দরুইনের ঘাঁটিতে গোলাবর্ষণ করে যাচ্ছিল৷ ১২ টার দিকে আসে পশ্চিম দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ। প্রতিরক্ষার সৈন্যরা আক্রমণের তীব্রতায় বিহ্বল হয়ে পড়ে। কয়েক জন শহীদ হন। মোস্তফা কামাল মরিয়া হয়ে পাল্টা গুলি চালাতে থাকেন। দুপুরের পর পাক হানাদারের আক্রমণ আরও তীব্রতর আকার ধারণ করল৷ মুক্তিযোদ্ধারা সামান্য হতবিহ্বল হয়ে পড়েন৷ তবে সেকশন কমান্ডার মোস্তফার অবিচলিত মনোভাব ফের তাঁদের আত্নবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে৷ তাঁর পূর্ব দিকের সৈন্যরা পেছনে সরে নতুন অবস্থানে সরে যেতে থাকে এবং মোস্তফাকে যাবার জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু মোস্তফা কামাল স্থির করলেন তিনিই কাভারিং ফায়ার দেবেন৷ তাদের সবাইকে নিরাপদে সরে যাওয়ার সুযোগের জন্য মোস্তফা পূর্ণোদ্যমে এল এম জি থেকে গুলি চালাতে থাকেন। তাঁর ৭০ গজের মধ্যে শত্রুপক্ষ চলে এলেও তিনি থামেননি। মোস্তফা কামালকে দুর্গের মধ্যে রেখেই বাকিরা খুব সাবধানে পিছু হটতে লাগলেন৷ মোস্তফা অনবরত গুলি চালাতে লাগলেন শত্রুদের ওপর৷ তাঁর গুলির তোড়ে হানাদার বাহিনী এগোতে গিয়ে থামতে বাধ্য হলো৷ ক্রমাগত গুলি চালাতে লাগলেন শত্রুর ওপর৷ কিন্তু একসময় তাঁর গুলি ফুরিয়ে গেল৷ হানাদার বাহিনী ত্রিমুখী আক্রমণে তাঁকে ঘিরে গুলি চালাতে লাগল৷ গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল মোস্তফার শরীর৷ নিজের পরিখাতেই ঢলে পড়েন তিনি৷</div> <div style="text-align: justify;"> <br /> দরুইন গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধারা আখাউড়া চলে যান৷ গঙ্গাসাগর ও দরুইন অধিকার করে একসময় পাকবাহিনী এলাকা ছেড়ে যায়৷ পরবর্তীতে দরুইনের স্থানীয় লোকেরা বুলেটে ঝাঁঝরা, বেয়নেটবিদ্ধ মোস্তফা কামালের লাশ খুঁজে পান৷ হানাদার বাহিনী যখন ট্রেঞ্জে প্রবেশ করে তখনও হয়ত মোস্তফার দেহে প্রাণ ছিল৷ বর্বর হানাদাররা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়েই হয়তো তাঁকে হত্যা করেছে৷<br /> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> পুরস্কার ও সম্মাননা</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> দরুইন গ্রামের জনগণ মোস্তফা কামালকে তাঁর শাহাদাতের স্থানের পাশেই সমাহিত করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে। এছাড়া তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত কলেজ প্রাঙ্গণের একটি কোণে ভোলা জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল লাইব্রেরি ও জাদুঘর নির্মাণ করা হয়। মোস্তফা কামালের নামানুসারে গ্রামের নাম মৌটুপীর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে কামালনগর৷<br /> <br /></div> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgqdkaGqzCEVn2ODuBhc0dHgC6XTEYoEY2nNkWXuuhxH_8lD-SAgEjtdVsEQRwDb8ugJO1CMFqOYimUo42_zshyphenhyphenfjlxoaM0O26U80uVG8aBJ11ZKyDyzWfU1-3vp7nWpG_ohAL_ARBXixI/s1600/Mostafa_Kamal_Tomb.jpg" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="480" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgqdkaGqzCEVn2ODuBhc0dHgC6XTEYoEY2nNkWXuuhxH_8lD-SAgEjtdVsEQRwDb8ugJO1CMFqOYimUo42_zshyphenhyphenfjlxoaM0O26U80uVG8aBJ11ZKyDyzWfU1-3vp7nWpG_ohAL_ARBXixI/s640/Mostafa_Kamal_Tomb.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;">বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধীসৌধ</td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> সংক্ষিপ্ত জীবনী <br /> <br /> জন্ম : ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৪৭ সাল। <br /> জন্মস্থান : ভোলা জেলার দৌলতখান থানার পশ্চিম হাজিপুর গ্রামে৷ <br /> পিতা : হাবিবুর রহমান মণ্ডল ৷ <br /> মা : মোসাম্মৎ মালেকা বেগম ৷ <br /> কর্মস্থল : সেনাবাহিনী৷ <br /> যোগদান : ১৯৬৮ সাল৷ <br /> পদবী : সিপাহী৷ <br /> মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৮ নং সেক্টর৷ <br /> মৃত্যু : ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ সাল৷ <br /> সমাধি স্থল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার দরুইন গ্রামে৷ <br /> <br /> ছবি ও তথ্য সূত্র : মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, উইকিপিডিয়া, ইন্টারনেট, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বিভিন্ন গবেষনাপত্র।<br /> <br /> এই লেখাটি ইংরেজিতে দেখতে <a href="http://voiceof71english.blogspot.com/2017/04/sipahi-mostofa-kamal.html" target="_blank">এখানে</a> ক্লিক করুন।</div> </div>

বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোস্তফা কামাল

মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল (১৬ ডিসেম্বর ১৯৪৭ - এপ্রিল ১৮ ১৯৭১) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। বাংলা...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ১ এপ্রিল, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <br /> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <b>১ এপ্রিল, ১৯৭১, বৃহষ্পতিবার</b><br /> <br /> <div style="text-align: justify;"> সরকার এখন সবকিছু স্বাভাবিক দেবাবার চেষ্টা করছে। ২৭ তারিখ সকাল থেকে প্রতিদিন রেডিওতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে-সবাই যেন নিজ নিজ অফিসে কাজে যোগ দেয়। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ সত্ত্বেও ২৭ তারিখে ঢিভি চালু করা হয়েছে।<br /> <br /> কিন্তু অনুষ্ঠান দেখে মনে হচ্ছে ভুতুড়ে। অনুষ্ঠান ঘোষক-ঘোষিকা, সংবাদ পাঠক-পাঠিকা সব যেন ভৌতিক অবয়ব।<br /> <br /> টেলিফোন ঠিক হয়েছে। এটাও বোধ হয় জীবনযাপন স্বাভাবিক দেবাবার প্রয়োজনেই করা হয়েছে। কিন্তু এখন যেন টেলিফোন ঘোরাবার আগ্রহ আর নেই। বরং সময় গেলেই এখন খালি রেডিও’র নব ঘোরাচ্ছি। পরশুদিন সামনের বাসায় হুমায়ুন বলল, স্বাধীন বাংলা রেডিও নাকি কে শুনেছে। সে শোনে নি। তারপর থেকে মিনিভাই, লুলু, রঞ্জু অনেককেই জিগ্যেস করছি, কেউই এ পর্যন্ত নিজের কানে শোনে নি, তবে অন্যের মুখে শুনেছে।<br /> <br /> রুমী-জামীকে গতকাল গুলশান থেকে নিয়ে এসেছি। ওরা থাকতে চায় না। তাছাড়া অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে-এখন যেহেতু সরকার সব স্বাভাবিক দেখাতে চায়, তাতে অন্তত এখনই ঘরে ঘরে ছেলেছোকরাদের টানাটানি করবে না। তবে রাস্তায় বেরোনো তরুণ ছেলেদের সম্বন্ধে যেসব ভয়াবহ খবর শুনছি, তাতেও তো বুক হিম হয়ে হাত-পা অবশ হয়ে পড়ছে। লুলু, রঞ্জু-আরো কয়েকজনের মুখে শুনলাম-ওরা দেখেছে ত্রিপল ঢাকা ট্রাক, যার পেছনটা খোলা থাকে, সেই ট্রাকে অনেকগুলো জোয়ান ছেলে বসা, তাদের হাত পেছনে বাঁধা, চোখও বাঁধা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে। এই নিয়ে শহরে ক’দিন হুলুস্থুল। যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তার মুখেই এই কথা। ভয়ে রুমি-জামীকে একা বেরোতে দিচ্ছি না, রুমীকে গাড়িও চালাতে দিচ্ছি না। ড্রাইভার না থাকলে আমি চালাচ্ছি, রুমী-জামীকে পেছনে বসিয়ে। মহিলা চালক দেখলে রাস্তায় আর্মি  কিছু বলে না। ওদের যত রাগ উঠতি বয়সের ছেলেদের ওপর। রাস্তার একপাশ দিয়ে মাথা নিচু করে চলা নিরীহ পথচারীও যদি অল্প বয়সী হয়, তাহলেও রক্ষে নেই। টহলদার মিলিটারি লাফ দিয়ে তার ঘাড় ধরে হয় ট্রাকে তুলবে, না হয় রাইফেলের দু’ঘা লাগিয়ে দেবে।<br /> <br /> রাস্তায় বহু দোকানে উর্দু নেমপ্লেট। এলিফ্যান্ট রোডের ছোট ছোট দোকানপাটের বেশ কয়েকটার সাইনবোর্ড পালটে উর্দুতে লেখা হয়েছে। দোকানে জিগ্যেস করলাম- “সাইনবোর্ড পাল্টেছেন কেন?” দোকানী জবাব দিল, “এখন থেকে বাড়িতে, দোকানে, গাড়িতে, সবখানে উর্দু নামধাম নম্বর লিখতে হবে । ওপর থেকে হুকুম এসেছে।”<br /> <br /> এরপর যাকেই জিগ্যেস করি, সে-ই বলে হ্যাঁ, তাইতো শুনছি। এলিফ্যান্ট রোডের দুটো ছোট সাইনবোর্ড লেখার দোকানের সামনে গাড়ির লাইন লেগে থাকে, দোকানের ভেতরে সাইনবোর্ড লেখার টিন-প্লেটের স্তুপের জায়গা হয় না, দোকানের সামনের ফুটপাত পর্যন্ত উপচে এসেছে।<br /> <br /> মন বিদ্রোহী হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত বাড়ির সামনে, গাড়িতে নাম ও নম্বর-প্লেট উর্দুতে লিখতে হবে? এই বাংলাদেশে? আমাদেরকে?<br /> <br /> শরীফকে বললাম, “এই যে ওপর থেকে হুকুম এসেছে, এই হুকুমটার উৎস বের করা যায় না? দু’এক জায়গায় ফোন করে দেখ না। মোর্তুজা ভাই তো আগে এয়ারফোর্সে ছিলেন, ওঁকে জিগ্যেস কর না। তোমার বন্ধু আগা ইউসুফের সঙ্গে তো অনেক আর্মির লোকের জানাশোনা আছে, ওঁকে বল না কাউকে ফোন করে ব্যাপারটা জানতে।”<br /> <br /> শরীফ বলল, “দেখি, ক্লাবে দেখা হলে জিগ্যেস করব। এসব কথা ফোনে বলা ঠিক হবে না।”<br /> <br /> আমি গোঁয়ারের মত বললাম, “আমি কিন্তু এখনিই নাম-নম্বর-প্লেট বদলাবো না। কাগজে যদি মার্শাল ল’ অর্ডার হয়ে বেরোয়, তখন দেখা যাবে। তার আগে নয়।”<br /> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ১ এপ্রিল, ১৯৭১

১ এপ্রিল, ১৯৭১, বৃহষ্পতিবার সরকার এখন সবকিছু স্বাভাবিক দেবাবার চেষ্টা করছে। ২৭ তারিখ সকাল থেকে প্রতিদিন রেডিওতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ৩১ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <b>৩১ মার্চ, ১৯৭১, বুধবার</b><br /> <div style="text-align: justify;"> <br /> সকালে শরীফ নিজেই বেরোলো মা’র বাজার করার জন্য। অজিত নিয়োগীও বাড়িতে আছে, একটু বেশি করে বাজার করে দিয়ে আসবে।<br /> <br /> শরীফ বেরিয়ে যাবার একটু পরেই দেখি, ওমা! মা নিজেই রিকশা করে এসে হাজির! কি ব্যাপার?<br /> <br /> মা বললেন, আমি যদি অজিত নিয়োগীর দু’বেলার খাবারটা রান্না করে পাঠাই, তাহলে খুব ভালো হয়। কারণ একটাও কাজের লোক নেই, মা’র শরীর অশক্ত। নিজেরা অনেক সময় এক তরকারি দিয়ে খেয়ে নেন। নিয়োগীকে তো সেভাবে দেওয়া যাবে না।<br /> <br /> আরেকটা কাজ বাড়ল। তাতে কোনো ঝামেলা নেই, সমস্যা হল রোজ দু’বেলা টিফিন-ক্যারিয়ারে খাবার নেওয়ার সময় ও বাড়ির সামনে কেউ দেখে না ফেলে। এ বাড়িতেও বারেক-কাসেমরা যেন বুঝতে না পারে কোথায় খাবার যাচ্ছে। ওদের বলা হল হাসপাতালে অসুস্থ আত্মীয়ের জন্য খাবার পাঠানো হচ্ছে।<br /> <br /> ৩১ তারিখে আরো দুটো পত্রিকা বেরিয়েছে-দৈনিক পাকিস্তান ও পূর্বদেশ। চারটে পত্রিকাতেই ইস্ট পাকিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হওয়া পথে-এ কথা ফলাও করে লেখা হয়েছে। পূর্বদেশের লেখার মাঝখানে একটা লাইন একেবারে বুকে এসে ঘা মারল: ‘শান্তিপ্রিয় বেসামরিক নাগরিকদের যেসব সশস্ত্র দুষ্কৃতকারী হয়রানি করছিল, তাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়,তা সাফল্যের সঙ্গে সমাপ্ত হয়েছে।’<br /> <br /> মর্নিং নিউজ হেডলাইন দিয়েছে: ইয়াহিয়াজ স্ট্যান্ড টু সেভ পাকিস্তান প্রেইজড।- পাকিস্তান রক্ষায় ইয়াহিয়ার দৃঢ় সংকল্প প্রশংসিত।<br /> <br /> ইয়াহিয়া লডেড ফর রাইট স্টেপস টু সেভ কান্ট্রি-দেশরক্ষায় সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ইয়াহিয়া নন্দিত।<br /> <br /> অক্ষম রাগে আর অপমানে ফালাফালা করে ছিঁড়ে ফেললাম কাগজ দুটো। এছাড়া আর কিইবা করার ক্ষমতা আছে আমাদের।</div> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div>

একাত্তরের দিনগুলি: ৩১ মার্চ, ১৯৭১

৩১ মার্চ, ১৯৭১, বুধবার সকালে শরীফ নিজেই বেরোলো মা’র বাজার করার জন্য। অজিত নিয়োগীও বাড়িতে আছে, একটু বেশি করে বাজার করে দিয়ে আসবে। ...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ৩০ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <br /> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <b>৩০ মার্চ, ১৯৭১, মঙ্গলবার</b><br /> <br /> <div style="text-align: justify;"> সুফিয়া কামাল আপা, নীলিমা ইব্রাহিম আপা বেঁচে আছেন। কলকাতা রেডিওতে ভুল খবর দিয়েছে। খবরটা জেনে মনটা খুব ভালো হল।<br /> <br /> ইংরেজি বিভাগের জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা ও তার স্ত্রী বাসন্তীদির খবর নেবার জন্য চৌত্রিশ নম্বর বিল্ডিংয়ে গেলাম। পাঁচদিন পরেও সামনের ছোট বারান্দায় পুরু হয়ে জমাট-বাঁধা রক্ত শুকিয়ে কালচে হয়ে আছে। হাসিন জাহানদের ফ্ল্যাটে এখনো তালা ঝুলছে। বাসন্তীদির ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নাড়লে একজন বুড়োমত লোক বেরিয়ে এসে বলল, কেউ বাড়ি নেই। কোথায় গেছেন জিগ্যেস করাতে বলল, জানে না। জ্যোতির্ময় দাদাবাবুকে কোন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে তাও সে জানে না। নিরাশ হয়ে ফিরে এলাম। একা একা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ করতে সাহস হল না।<br /> <br /> একটা একটা করে দিন যাচ্ছে, আর লোকমুখে পাকিস্তানী আর্মির বর্বরতার নতুন নতুন খবর কানে এসে মনমানসিকতা সব অসাড় করে দিচ্ছে। দিনরাত কি এক দুঃস্বপ্নের ঘোরে কাটছে। আর গুজবই যে কত। একটা করে গুজব শুনি আর ভয়ে আঁতকে উঠে হুটোপুটি লাগিয়ে দিই। যেমন আজকে এগারোটার দিকে মিনিভাই এলেন রুমী জামীকে নিয়ে। রুমী-জামী আর থাকতে চায় না গুলশানে। মনে হচ্ছে ভয়ের আর কারণ নেই। ড্রয়িংরুমে বসে গল্পগুজব হচ্ছে। বারেককে মোড়ের দোকানে পাঠিয়েছি চা-পাতা কিনতে। খানিক পরে সে ফিরে এসে ভয়ার্ত মুখে বলল, “আম্মা ঐ মোড়ের দোকানে একজন বিহারি জিগাই ছিল রুমী ভাইয়া বাসায় আছে কি না।”<br /> <br /> ব্যস অমনি তাড়াহুড়ো লেগে গেল। রুমী-জামীকে তক্ষুণি মিনিভাইয়ের সঙ্গে গাড়িতে তুলে আবার গুলশানে রওনা করিয়ে দিলাম।<br /> <br /> আড়াইটার সময় হঠাৎ একটা সুটকেস হাতে অজিত নিয়োগী এসে হাজির। আমরা হতবাক। নিয়োগী দাদার মুখে চার/পাঁচ দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখ টকটকে লাল, কাপড়-চোপড় ময়লা, কুঁচকানো, গাল বসে গেছে, চুল জট পাকিয়ে গেছে। অবাক ভাবটা কাটার পর আমি হঠাৎ পাগলের মত হাসতে লাগলাম। “কি নিয়োগী দাদা। রক্তস্রোত নাকি অল্পের জন্য এড়াতে পারা গেছে?”<br /> <br /> শরীফ মৃদুস্বরে ধমক দিল, “পাগল হলে নাকি? ওঁকে সুস্থির হতে দাও। বসুন মিঃ নিয়োগী।” শরীফ ওর হাত থেকে সুটকেসটা নিল।<br /> <br /> “কোথায় ছিলেন এ কয়দিন।”<br /> <br /> সিদ্ধেশ্বরীর এক লোকের গোয়ালঘরের পাশের এক ঘুপচি টিনের ঘরে এ ক’দিন কাটিয়েছেন। মশারি ছিল না, অসম্ভব মশায় ঘুমোতে পারেন নি। খাওয়া-দাওয়া প্রায় জোটে নি বললেই চলে-চা একদমই না। অথচ দিনে ১৫/২০ কাপ চা খাওয়ার অভ্যেস তাঁর।<br /> <br /> প্রথমেই ওঁকে দোতলায় রুমীদের ঘরে নিয়ে গেলাম। নিচে রাখতে সাহস পেলাম না-যদি হঠাৎ ‘কেউ’ এসে পড়ে। ওঁকে গোসল করে কাপড় বদলাতে বলে নিচে এলাম খাবারের ব্যবস্থা করতে। খাওয়ার পর এককাপ চা ওঁর হাতে দিয়ে শরীফ ও আমি ওঁর সামনেই আলোচনা করলাম-এ পাড়ার যা অবস্থা, ওঁকে এ বাড়িতে রাখা নিরাপদ হবে না। ‘কেউ’ এসে ওঁকে দেখে চিনে ফেললেই বিপদ। ধানমণ্ডি ছয় নম্বর রোডে মা ও লালু থাকেন, সেখানে তিনতলার রুমটিতে উনি সবচেয়ে নিরাপদে থাকবেন। কাকপক্ষীও টের পাবে না, কারণ মা’র কাজের লোকজন নেই। বদিউজ্জামানরা নিচতলায় থাকে বটে, কিন্তু তারা এমনভাবে দরজা জানালা সেঁটে নিঃশব্দে বাসার ভেতর থাকে যে, বাইরে থেকে কারো বোঝার সাধ্যি নেই-ও বাসার ভেতর অতগুলো লোক থাকে। বদির পরিবার, তার শ্বশুরের পরিবার, কে.জি. মোস্তফার পরিবার।<br /> <br /> সাড়ে তিনটের সময় ওঁকে নিয়ে মায়ের বাসায় গেলাম। গাড়িটা একেবারে বাড়ির সামনে নিলাম না। কি জানি, বদিরা কেঊ হঠাৎ যদি কোনো কাজের দরজা খুলে বেরিয়ে আসে! আমি প্রথমে বাড়ির সামনে গিয়ে দেখে নিলাম একতলার সব দরজা- জানালা বন্ধ আছে কিনা। তখন মার কলিং বেল টিপলাম। লালু এসে দরজা খোলার পর আমার ইশারা পেয়ে শরীফ নিয়োগী দাদাকে নিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। আব্বাজানের পুরনো বন্ধু অজিত নিয়োগী-মা ও লালু খুশি মনেই ওঁকে রাখলেন।<br /> <br /> ওখান থেকে গেলাম ভুতের গলিতে, ভাস্তে কলিম, আর চাচাত দেবর নজলু ও হুদাদের বাসায়। ওরা কে কেমন আছে খোঁজখবর নেয়ার জন্য।<br /> <br /> আজ সকালে এক পাতার মর্নিং নিউজ বেরিয়েছে। উল্টো পাতাটি সাদাই রয়ে গেছে। বিদেশের দু’একটা খবর ছাড়া পূর্ব বাংলার খবর মাত্র দুটি: ‘মুজিব ওয়ান্টেড সেপারেশান রাইট ফ্রম সিক্সটি সিক্স।’ ১৯৬৬ সাল থেকেই মুজিব বিচ্ছিন্নতা চেয়ে আসছেন। এবং ‘পাকিস্তান সেভড, সেইজ ভুট্টো।’ ভুট্টো বলেছেন: পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।<br /> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ৩০ মার্চ, ১৯৭১

৩০ মার্চ, ১৯৭১, মঙ্গলবার সুফিয়া কামাল আপা, নীলিমা ইব্রাহিম আপা বেঁচে আছেন। কলকাতা রেডিওতে ভুল খবর দিয়েছে। খবরটা জেনে মনটা খুব ভালো...

Read more »

শহীদ শাফী ইমাম রুমীঃ তুমি রবে সরবে

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiai6u5XwBvhO3v8NtrcvOT1tInzVD5-7m5WyujHxHVh0vK5nbcLBrN8CwiHJK51oGR9SA1D7XP1yd5m8wHnk1pXhaUT60SyhKEdZ5NiSgVxVue9YPciBP3ueeczAZBHhZvVa8-vhQkl5c/s1600/sr.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEiai6u5XwBvhO3v8NtrcvOT1tInzVD5-7m5WyujHxHVh0vK5nbcLBrN8CwiHJK51oGR9SA1D7XP1yd5m8wHnk1pXhaUT60SyhKEdZ5NiSgVxVue9YPciBP3ueeczAZBHhZvVa8-vhQkl5c/s640/sr.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> </div> </div> <div style="text-align: justify;"> "যদি চলেও যাই, কোন আক্ষেপ নিয়ে যাবোনা", এমন তীব্র উচ্চারণ ছিলো যে মানুষটির, তিনি শহীদ রুমী বীরবিক্রম। ক্র্যাক প্লাটুন খ্যাত ঢাকা কেন্দ্রিক গেরিলা যোদ্ধাদের মাঝে উজ্জ্বল নক্ষত্র।<br /> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> কিছু মানুষ ইতিহাসের অনুষঙ্গ হয়ে নয়, বরং ইতিহাস গড়ে ওঠে তাঁদেরকে উপজীব্য করেই। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, স্বাধীনতার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে হারিয়ে যাওয়া প্রকৌশলী শরীফ ইমাম, স্বয়ং শহীদ রুমী এবং তাঁর অনুজ সাইফ ইমাম জামী ভাই, এলিফ্যান্ট রোড ও একটি বাড়ী 'ক্ষণিকা' সেই ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> টীম গেরিলা ১৯৭১, শহীদ শাফী ইমাম রুমী'র ৬৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে উন্মোচন করছে তাঁর অত্যন্ত বিরল সব ছবি দিয়ে বানানো এই এ্যালবামটি। ইতিহাস হোক উন্মুক্ত অবারিত। বিস্মরণের কালো ছায়া থেকে বেড়িয়ে আসুক আমাদের সকল গৌরব। কয়েকদিন থেকে শুরু করে ১৯ বছর বয়েস পর্যন্ত ক্রমানুসারে সাজানো হয়েছে এ্যালবামটি। ক্যাপশন ব্যবহার করা হয়নি ইচ্ছে করেই। ছবির মানুষগুলোকে না জানার কোন হেতু নেই ও থাকতে পারেনা বলে আমরা বিশ্বাস করি। ছবিগুলোর জন্য আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি শ্রদ্ধেয় সাইফ ইমাম জামী ভাইয়া এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি যাদুঘরের কাছে। </div> <br /> <span style="text-align: justify;">পেইজ লিংকঃ </span><a href="https://www.facebook.com/Guerrilla1971/?fref=ts" style="text-align: justify;">https://www.facebook.com/Guerrilla1971/?fref=ts</a> <style type="text/css"> .slider-box { background: none repeat scroll 0 0 #FAFAFA; border-radius: 5px 5px 5px 5px; box-shadow: 0 0 3px #333333; margin: 0 auto; width: 400px; overflow: hidden; } #slider-wrapper { margin: 0 auto; padding: 10px; } #jslider-container { border: 2px solid #FFFFFF; max-width: 400px; position: relative; text-align: center; z-index: 90; } </style> <link href="http://project.dimpost.com/image-slider/wowslider/css/wow-slider.css" rel="stylesheet" type="text/css"></link> <script src="https://code.jquery.com/jquery-1.12.0.min.js" type="text/javascript"></script> <br /> <div class="slider-box"> <div id="slider-wrapper"> <div id="jslider-container"> <div class="jslider_images"> <ul> <li> <a href="https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=7927371738348582085#"> <img src="http://s20.postimg.org/rcuxkfia5/image.jpg" title="" /> </a> </li> <li> <a href="https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=7927371738348582085#"> <img src="http://s20.postimg.org/9pd4m88ct/image.jpg" title="" /> </a> </li> <li> <a href="https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=7927371738348582085#"> <img src="http://s20.postimg.org/9bbsmmo99/image.jpg" title="" /> </a> </li> <li> <a href="https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=7927371738348582085#"> <img src="http://s20.postimg.org/4lh9ka7v1/image.jpg" title="" /> </a> </li> <li> <a href="https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=7927371738348582085#"> <img src="http://s20.postimg.org/qtl8xf1hp/image.jpg" title="" /> </a> </li> <li> <a href="https://www.blogger.com/blogger.g?blogID=7927371738348582085#"> <img src="http://s20.postimg.org/c9462l6j1/image.jpg" title="" /> </a> </li> </ul> </div> </div> </div> </div> <script src="http://dimpost.googlecode.com/files/wow-slider.js" type="text/javascript"></script> </div>

শহীদ শাফী ইমাম রুমীঃ তুমি রবে সরবে

"যদি চলেও যাই, কোন আক্ষেপ নিয়ে যাবোনা", এমন তীব্র উচ্চারণ ছিলো যে মানুষটির, তিনি শহীদ রুমী বীরবিক্রম। ক্র্যাক প্লাটুন খ্...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ২৯ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <br /> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <b>২৯ মার্চ, ১৯৭১, সোমবার</b><br /> <br /> <div style="text-align: justify;"> রেডিও আজ একচোটেই বলে দিয়েছে আটটা-পাঁচটা কারফিউ থাকবে না।<br /> <br /> সকালেই গেলাম গুলশানে রুমী-জামীকে বাড়ি নিয়ে আসতে। আজ রুমীর জন্মদিন, অন্তত দুপুরে কিছু রান্না করে খাইয়ে দিই। গিয়ে দেখি কিটি ওখানে বেড়াতে গেছে। গুলশানে বেশির ভাগ বাড়িতে বিদেশীদের বাস-সেখানে চলাফেরার একটু সুবিধে, আর্মির উৎপাতও একটু কম।<br /> <br /> ফিরতে ফিরতে ভাবছিলাম, কাঁচাবাজার সব পুড়ে নিশ্চিহ্ন, কিছুই পাওয়া যায় না-আজও কি ডাল আলু দিয়ে খাওয়া হবে? হঠাৎ চোখে পড়ল এয়ারপোর্ট রোডের সার সার বন্ধ দোকানের মাঝে ছোট্ট একটা গোশতের খোলা দোকানে মাত্র একটি খাসির রান ঝুলছে। তক্ষুণি গাড়ি থামিয়ে রানটা কিনে নিলাম। বললাম, “রুমী তোর কপালে পেয়ে গেলাম।”<br /> <br /> বাড়ি পৌছে দেখি চিংকু আর কায়সার বসে আছে। বললাম, “ভালোই হল তোমরা এসেছ। আজ রুমীর জন্মদিন। তোমরা দুপুরে ওর সঙ্গে খেয়ে যাও।”<br /> <br /> তারপর তিনটে চুলো ধরিয়ে কাসেম,বারেক দু’জনকে খাটিয়ে নিজেও দ্রুত খেটে তৈরি হল পোলাও, কোর্মা আর চানার হালুয়া। গুলশান থেকে আসার সময় রেবা তার বাগানের কিছু টম্যাটো তুলে দিয়েছিল। সেটা দিয়ে সালাদ বানানো হল।<br /> <br /> খাওয়ার পর ঢেকুর তুলে জামী বলল, “ভাইয়ার জন্মদিনের খাওয়াটা ভালোই হল। এমন দুর্দিঁনে এর বেশি আর কি চাই?”<br /> <br /> খাওয়া-দাওয়ার পর রুমী জামীকে আবার গুলশানে রেখে এলাম।<br /> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ২৯ মার্চ, ১৯৭১

২৯ মার্চ, ১৯৭১, সোমবার রেডিও আজ একচোটেই বলে দিয়েছে আটটা-পাঁচটা কারফিউ থাকবে না। সকালেই গেলাম গুলশানে রুমী-জামীকে বাড়ি নিয়ে আসতে...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ২৮ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> ২৮ মার্চ, ১৯৭১, রবিবার<br /> <div style="text-align: justify;"> <div style="text-align: justify;"> <br /> গত রাতেও ঘুমোতে পারি নি। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে গোলাগুলি চলেছে প্রায় ভোর পর্যন্ত।<br /> <br /> কাল বিকেলেই কারেন্ট এসেছে, কিন্তু ফোন এখনো খারাপ। কারেন্ট না এসে যদি ফোনটা ঠিক হত, তাহলে বেশি স্বস্তি পেতাম। শরীফকে বললাম, “আজ যে করেই হোক, ফোনটা ঠিক করাতেই হবে। তোমার বন্ধু লোকমানকে বল না।”<br /> <br /> শরীফ বিরক্ত হয়ে বলল, “তুমি কি পাগল হলে? মিলিটারি যেখানে সারা ঢাকায় সব ফোন কেটে দিয়েছে, সেখানে তোমার একটা ফোন সারবে কোন ম্যাজিকে?”<br /> <br /> আটটায় কারফিউ উঠতেই কাসেম বারেক দু’জনকেই পাঠালাম-যে করেই হোক, যত টাকা কবুল করেই হোক, মেথর একটা ধরে আনতেই হবে। <br /> <br /> জামী ধরে বসেছে কাল সে বাসায় ছিল, অতএব আজ তাকে বাইরে যেতে দিতেই হবে। <br /> <br /> বললাম, “ঠিক আছে, যাবি। তবে একা নয়। রুমীর সঙ্গে।”<br /> <br /> রুমী প্রতিবাদ করে উঠল, “আমার অন্য কাজ আছে।” <br /> <br /> আমি রেগে রুমীকে কিছু বলতে গেলাম, তার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল। জামী খুলে দিতেই কিটি উদভ্রান্তের মত এসে ঢুকল। তার সঙ্গের মিঃ চাইল্ডার দরজার বাইরে বারান্দাতেই দাঁড়িয়ে রইল। <br /> <br /> “কিটি!” বলে আমি এগিয়ে যেতেই সে ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। ধরেই রইল প্রায় দু’মিনিট, আর ছাড়ে না। তার বুকে যেন ঢেঁকির পাড় পড়ছে, আমি টের পাচ্ছি। একটু পরে জলেভরা চোখ তুলে কিটি অস্ফুট স্বরে বলল, “তোমরা কেমন আছ, দেখবার জন্য এসেছি।”<br /> <br /> তিন মিনিটে শরীফ, রুমী, জামী-সকলের কুশল নিয়ে কিটি তক্ষুণি আবার মিঃ চাইল্ডার সঙ্গে গাড়িতে উঠে চলে গেল। <br /> <br /> একটু পরে মিনিভাই এলেন গুলশান থেকে। তাঁর কাছে জানা গেল শেখ মুজিব বেঁচে আছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করে ‘আননোন ডেস্টিনেশানে’ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা, ছাত্রনেতারা, প্রায় সকলেই পালিয়ে যেতে পেরেছেন।<br /> <br /> শরীফ বলল, “চলুন ঢাকা ক্লাব ঘুরে আসি একবার।” <br /> <br /> রুমী বলে উঠল, “আব্বু, আমি গাড়িটা নিয়ে যাই একটু।”<br /> <br /> আমি বললাম, “আজ কিন্ত বারোটায় কারফিউ শুরু মনে থাকে যেন।”<br /> <br /> “কেন? কাল তো বিকেল চারটে পর্যন্ত খোলা ছিল?”<br /> <br /> “বোধ করি, গতকাল লোকজনের অত চলাফেরা দেখে আর্মি আজ সময় কমিয়ে দিয়েছে।” <br /> <br /> জামী বলল, “আব্বু, আমি তোমার সঙ্গে ঢাকা ক্লাবে যাই?” <br /> <br /> মিনি ভাইয়ের গাড়িতে শরীফ আর জামী ঢাকা ক্লাবে গেল। আমি রুমীকে বললাম, “আমাকে পাঁচ মিনিটের জন্য একবার হাসপাতালে ঘুরিয়ে এনে দিয়ে তারপর তুই তোর কাজে যাস। ইমন আর শেলীর জন্য একটু খাবার দিয়ে আসব।” <br /> <br /> হাঁড়িপানা মুখ করে রুমী আমাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হল। বললাম, “শহীদ মিনারের সামনের রাস্তা ধরে যাবি। ফেরার পথে বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে আসবি। একাডেমির দেয়াল নাকি গোলার ঘায়ে ভেঙে গেছে। আর রেসকোর্সের কালীবাড়িও নাকি নেই?”<br /> <br /> শহীদ মিনারের সামনের রাস্তায় এসে রুমী গাড়ির গতি কমিয়ে চালাতে লাগল। ডাইনে তাকিয়ে দেখলাম, গতকাল শহীদ মিনারের যে ভাঙা উর্ধ্বাংশ দেখেছিলাম, আজ সেটাও নেই। গত রাতের তান্ডবে সব অদৃশ্য হয়ে শুধু গোড়া তিনটে রয়েছে। ওগুলো আর ওপড়াতে পারেনি। একটু জোরেই বলে উঠলাম, “শহীদ মিনার। তোমার এই অপমানের প্রতিশোধ নেবই নেব।”<br /> <br /> রুমীর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। সে ঠোঁটে ঠোঁট টিপে শহীদ মিনার পেরিয়ে হাসপাতালের গেটে ঢ়ুকে গেল।<br /> <br /> রুমী এলিফ্যান্ট রোডে গলির মুখে আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল। গেটের কাছাকাছি আসতে দেখা হল হোসেন সাহেবের সঙ্গে। উনি চিন্তিত মুখে বললেন, “শুনলাম পাড়ায় কোন বাড়িতে কতো জোয়ান ছেলে আছে, তার লিস্ট হবে।” <br /> <br /> শুনে চমকে গেলাম। মনে পড়ল মেইন রোডের উত্তরদিকের একটা গলিতে কয়েকটা অবাঙালি ছেলে থাকে, যাদের সঙ্গে কয়েক মাস আগে রুমীর ঝগড়া হয়েছিল। ওদের দৌলতে লিস্টে রুমী-জামীর নাম নিশ্চয় প্রথমে বসবে।<br /> <br /> বাড়ি ঢ়ুকে রেডিও খুলে রেখে অসহায়ের মত বসে রইলাম। শরীফ রুমী না ফেরা পর্যন্ত করার কিছু নেই। <br /> <br /> হঠাৎ জানালা দিয়ে কি যেন ঝপ করে মেঝেয় পড়ল। চমকে দেখি খবরের কাগজ। দৌড়ে জানালার কাছে গিয়ে ডাক দিলাম, “বদরুদ্দিন, তুমি বেঁচে আছ?”<br /> <br /> বদরুদ্দিন সে-ই ১৯৫৬ সাল খেকে আজিমপুরের বাসায় থাকার সময় থেকে আমাদের কাগজ দেয়। বদরুদ্দিন রোগা মুখে করুণ হেসে বলল, “আল্লার রহমত আর আপনাদের দোয়া।”<br /> <br /> “আর কোন কাগজ বেরোয় নি?” <br /> <br /> “না, এই একটাই।”<br /> <br /> “যেদিন যতগুলো কাগজ বেরোবে সব দিয়ে যাবে কেমন?” <br /> <br /> “আচ্ছা।” বলে বদরুদ্দিন চলে গেল। কাগজ পড়ার উত্তেজনায় বদরুদ্দিনকে জিগ্যেস করতে ভুলে গেলাম এ কয়দিন তার কেমন কেটেছে।<br /> <br /> ২৫ তারিখ রাতের মহামারণযজ্ঞের পর এই প্রথম কাগজ বেরোল– পাকিস্তান অবজারভার। দুই পাতা মাত্র। আট কলাম জুড়ে দুই ইঞ্চি চওড়া হেডলাইন: ইয়াহিয়া ব্রডকাস্টস। ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণ। ইয়াহিয়ার ২৬ তারিখ সন্ধ্যার বেতার বক্তৃতার পুরো বিবরণ। তার নিচে বাকি পাতা জুড়ে মার্শাল ল অর্ডারসমূহের নম্বর ধরে ধরে বিবরণ। একপাশে ছোট্ট হেডিংয়ে খবর: মুজিব অ্যারেস্টেড- মুজিব গ্রেপ্তার।<br /> <br /> সকালে রেডিওতে ঘোষণা করা হয়েছিল আটটা-বারোটা কারফিউ থাকবে না। অথচ এখন পৌনে বারোটায় সেটা বাড়িয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত করা হল। এতে আমাদের সুবিধেই হয়েছে। রুমী-জামীকে মিনি ভাইয়ের বাসায় দিয়ে আসা সম্ভব হবে। মিনিভাই বলেছেন গুলশানের বাড়িগুলো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ।<br /> <br /> জামী ঢাকা ক্লাব থেকে ফিরেছে খুব বিচলিত হয়ে। ঢাকা ক্লাবেও আর্মি ঢুকেছিল, কয়েকজন বেয়ারার লাশ আজ সকাল পর্যন্তও পড়েছিল। জামীর জীবনে বোধ হয় এই প্রথম এরকম ফুলে পচে ওঠা দু’তিনটে লাশ এভাবে দেখা। ভালোই হল, গুলশানে টাট্টুর সঙ্গে থাকলে ও সামলে উঠতে পারবে।<br /> <br /> দুপুরে খেয়েই রুমী জামীকে নিয়ে গুলশাল চললাম আমি ও শরীফ। রাস্তাঘাট গৎকালের তুলনায় বেশ  নির্জন। বারোটায় কারফিউ শুরু হবে, সেটা সকালেই জেনে লোকজন সেইভাবে বাড়ি দৌড়েছে। শেষ মুহুর্তে সময় বাড়ালেও জনশূণ্য রাস্তাঘাট আর ভরে ওঠে নি।<br /> <br /> রুমী-জামীকে গুলশানে রেখে ফেরার পথে আজিমপুর গেলাম একরাম ভাই লিলিবুর বাসায়।<br /> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div> </div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ২৮ মার্চ, ১৯৭১

২৮ মার্চ, ১৯৭১, রবিবার গত রাতেও ঘুমোতে পারি নি। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে গোলাগুলি চলেছে প্রায় ভোর পর্যন্ত। কাল বিকেলেই কারেন্ট এ...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ২৭ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"><br /></td></tr> </tbody></table> <b>২৭ মার্চ, ১৯৭১, শনিবার</b><br /> <div style="text-align: justify;"> <br /> গতকালও সারারাত জাগা। গোলাগুলির শব্দ, আগুনের স্তম্ভ, ধোয়াঁর কুন্ডলী। সকালের দিকে গোলাগুলির শব্দটা খানিক্ষণের জন্য বন্ধ হল। তখন সব বাড়ি থেকে মুখ বাইরে উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। বারেক-কাসেম সাহস করে গেটের বাইরে দাঁড়াল। একটু পরেই দৌড়ে এসে বলল, “আম্মা, রাস্তায় লোকজন, গাড়ি-ঘোড়া চলতাছে।”<br /> <br /> সেকি! রেডিওতে তো কারফিউ তোলার কথা বলেনি। এখন সকাল সাড়ে সাতটা। রেডিও’র ভল্যুম বাড়িয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি টেবিলের নশতা দিতে বলে কাপড় বদলাতে গেলাম। সাড়ে আটটায় রেডিওতে কারফিউ তোলার ঘোষণা দেওয়ামাত্র আমি আর রুমী গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। কামাল বিদায় নিয়ে চলে গেল তার ভাইয়ের বাড়িতে। জামী থাকল বাসায় বাবার কাছে। শরীফ বলল, “আমি রিকশা নিয়ে বাঁকার ওখান খেকে ঘুরে আসি।”<br /> <br /> এলিফ্যান্ট রোডে উঠে বললাম, “প্রথম মায়ের বাসায় চল। তারপর হাসপাতালে।”  <br /> <br /> রুমী বলল, “আম্মা, আমাকে কিন্তু গাড়িটা দিতে হবে ঘন্টা দুয়েকের জন্য।”<br /> <br /> “দেব। আগে দরকারি কাজ সেরে নিই।”<br /> <br /> নিউ মার্কেট কাঁচাবাজারের সামনে পৌছেই রুমী হঠাৎ “ও গড!” বলে ব্রেক কষে ফেলল। সামনেই পুরো কাঁচাবাজার পুড়ে ছাই হয়ে রয়েছে। এখনো কিছু কিছু ধোয়াঁ উঠছে। আমি চেচিঁয়ে উঠলাম, “মানুষও পুড়ছে। ওই সে পোড়া চালার ফাঁক দিয়ে-” <br /> <br /> রুমী জোরে গাড়ি চালিয়ে-“আম্মা, তাকায়ো না ওদিকে” বলে ডানদিকে মিরপুর রোডে মোড় নিল। <br /> <br /> ঢাকা কলেজের কাছ পর্যন্ত পৌছুতে দেখা গেল উল্টোদিক থেকে ওয়াহিদ আসছে হনহন করে হেঁটে, চারিদিকে তাকাতে তাকাতে। জুবলী ভাইয়ের ছেলে ওয়াহিদ। রুমীর চেয়ে দু’তিন বছরের বড় হলেও তার বন্ধু। রুমী গাড়ি থামিয়ে ওকে তুলে নিল, “কোথায় যাচ্ছ বাবু ভাই?”<br /> <br /> “জেবিসদের বাসায়। ওরা বেঁচে আছে কি জানিনা। থাকলে ওদেরকে নিয়ে আসব আমাদের বাড়িতে। ধানমন্ডি এলাকা খানিকটা নিরাপদ।”<br /> <br /> আমি বললাম, “আগে ছয়  নম্বর রোডে গিয়ে মাকে একটু দেখে আসি? তারপর আমরাও যাব জুবলীদের বাসায়।”<br /> <br /> ধানমন্ডির দিকে তেমন তান্ডব হয় নি, তবু দু’নম্বর রোডের ই.পি. আর থেকে যে শব্দ এসেছে, তাতেই মা আর লালুর রাত-জাগা চেহারা উদ্ভ্রান্ত। দ্রুত স্বরে ওঁদের কুশল জিগ্যেস করে, বাজার-সদাই কিছু লাগবে কিনা জেনে নিয়ে, আবার রাস্তায় নামলাম। নীলক্ষেত ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টার্সের পঁচিশ নম্বর বিল্ডিঙয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম থাকে। ওয়াহিদের ফুফা। আমাদের পরিবারের সঙ্গেও ওদের খুব ঘনিষ্ঠতা। ওদের ফ্ল্যাট ঢোকামাত্র খোঁচা খোঁচা দাড়ি, রক্তাভ চোখ, উস্কখুস্ক চুল নিয়ে রফিক দৌড়ে এলো আমাদের দিকে, ফোঁপানোর মত করে বলল, “বুবু, বুবু, আমরা আর নেই! শিগগির নিয়ে যান আমাদের এখান থেকে।”<br /> <br /> রফিকের স্ত্রী জুবলী, ওদের ছেলেমেয়ে বর্ষণ ও মেঘলা-সকলেরই বিদ্ধস্ত অবস্থা। পঁচিশ নম্বর বিল্ডিংয়ের পেছনেই ইকবাল হল। অতএব শেল, মর্টারের ছিটকানো টুকরা হেভি মেশিনগানের গুলি, সব এসে বাড়ি খেয়েছে পঁচিশ নম্বর বিল্ডিংয়ের দেয়ালে, জানালার কাচে। জানালা ভেদ করে এ পাশের দেয়ালে পর্যন্ত গেঁথে গেছে গুলি। রফিকরা সবাই দু’রাত একদিন খাটের নিচে মেঝেতে মাথা গুজে পড়ে থেকেছে। <br /> <br /> জুবলী ওয়াহিদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে, ওয়াহিদ বলল, “কেঁদ না জেবিস, তোমাদেরকে এক্ষুণি আমাদের বাসায় নিয়ে যাব।”<br /> <br /> আমি বললাম, “জুবলী তোমরা তাড়াতাড়ি একটা দুটো সুটকেস গুছিয়ে নাও। হাসপাতালে আমাদের দেওরের মেয়ে আছে। ওকে দেখে এসেই তোমাদেরকে তুলে বাবুর বাসায় নিয়ে আসব।”<br /> <br /> পঁচিশ নম্বর থেকে বেরিয়ে হাসপাতালে যাবার পথে লক্ষ্য করলাম, দলে দলে লোক বাক্স-বোঁচকা ঘাড়ে-মাথায় নিয়ে চলেছে। সমস্ত রিকশা লোকজন-বাক্স-পেটরা বোঝাই হয়ে ছুটে চলেছে। একটাও খালি রিকশা চোখে পড়ল না। পথযাত্রীরা মাঝে-মাঝে প্রাইভেট গাড়ি থামানোর জন্য হাত তুলছে। দু’তিনটি বাচ্চাসহ একটি পরিবার আমাদের গাড়ি থামিয়ে বলল, “আমাদের একটু মালিবাগে নামিয়ে দিবেন? একটাও রিকশা পাচ্ছি না।”<br /> <br /> আমি আমতা আমতা করে বললাম, “আমাদের নিজেদেরই আত্মীয়স্বজন আনা-নেওয়া করতে হবে। হাসপাতালে আমাদের আগুনে-পোড়া রুগী আছে। আমাদের সময় নেই। মাফ করবেন ।” <br /> <br /> না পেরে খুব খারাপ লাগল। কিন্তু এখন মালিবাগে যাবার সময় নেই আমাদের।<br /> <br /> হাসপাতালের আউটডোর গেটে ঢোকার আগে রুমী আরেকবার “ও গড!” বলে ব্রেক কষে ফেলল। পাশেই শহীদ মিনারের স্তম্ভগুলো গোলার আঘাতে ভেঙে দুমড়ে মুখ থুবড়ে রয়েছে। আমার দু’চোখ পানিতে ভরে গেল। একি করেছে ওরা! শহীদ মিনারের গায়ে হাত? চারদিকে ইতস্তত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথায় জাল-দেয়া হেলমেট পরা সৈন্য। আমি চাপাস্বরে বললাম, “রুমী, ভেতরে ঢোক। সময় নেই বেশি।”<br /> <br /> গাড়ি পার্ক করে আমরা ছুটলাম আউটডোরের লম্বা করিডোর দিয়ে ভেতরে। পুরো হাসপাতাল লোকে লোকারণ্য। কেউ এসেছে আহত আত্মীয়-বন্ধু নিয়ে। কেউ এসেছে নিখোঁজ আত্মীয় বন্ধুর খোঁজ করতে। ভয়ে পালিয়ে এসে আশ্রয় নিয়েছে বহু লোক। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠবার মুখে বাধা পেলাম। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যক্ষ হাই স্যারের স্ত্রী আনিসা বেগম, মেয়ে  হাসিন জাহান, ওর বড় ভাই ও ভাবী এবং বাড়ির অন্য সবাই করিডোরে দাঁড়িয়ে। আনিসা ভাবী ও হাসিন জাহান দু’জনেই আমাকে ধরে কেঁদে ফেললেন। হাই স্যার কয়েক বছর আগে ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেলেও তাঁর পরিবার এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্ল্যাটেই বাস করছেন। ওঁদের চৌত্রিশ নম্বর বিল্ডিংটা শহীদ মিনারের ঠিক উল্টোদিকেই। আমি স্তম্ভিত হয়ে শুনলাম হাসিন জাহান কাঁদতে কাদঁতে বলছে, “খালাম্মা, আমাদের বিল্ডিংয়ে আর্মি ঢুকে মেরে-ধরে সব একাকার করেছে, মনিরুজ্জামান স্যার মরে গেছেন, জ্যোতির্ময় স্যার গুরুতর জখম-”<br /> <br /> আমি আঁতকে উঠলাম, “আমাদের মনিরুজ্জামান স্যার?”<br /> <br /> “না, বাংলা নয়। স্ট্যাটিস্টিকসের। খালাম্মা গো, আমাদের বিল্ডিং রক্তে ভেসে গেছে।”<br /> <br /> “তোমাদের ফ্ল্যাটে ঢোকেনি তো?”<br /> <br /> “আমরা বাইরের দরজার তালা ঝুলিয়ে সব খাটের তলায় চুপ করে পড়েছিলাম। অনেক ধাক্কাধাক্কি করেছে কিন্তু আমরা টু শব্দটি করি নি। তাই ভেবেছে কেউ নেই। তাই আমরা বেঁচে গেছি। আজ কারফিউ ওঠামাত্রই এককাপড়ে হাসপাতালে এসে আশ্রয় নিয়েছি।”<br /> <br /> ওদের সঙ্গে দু’চার মিনিট কথা বলে ছুটলাম তিনতলার নিউ কেবিনে। এতবড় হাসপাতালের সব তলার প্রশস্ত করিডোরগুলো ভীড়, সন্ত্রস্ত, ক্রন্দনরত লোকের ভীড়ে ঠাসা। দু’হাতে লোক ঠেলে এগোতে হচ্ছে। ইমনের কেবিনে ঢুকে দেখলাম আনোয়ার ইতমধ্যেই সেখানে পৌছে গেছেন। ইমন আধ-মরার মত বিছানায় শুয়ে আছে। ইমনের মা শেলী বরাবরই ধীর, স্থির, শান্ত-সব সময় হাসে। আজও তার স্থিথধী ভাব দেখে আবাক হলাম। এতবড় ধকলের ছাপ তার রাত-জাগা চোখে, এলোমেলো চুলে, কুঁচকানো শাড়িতে অবশ্যই আছে, কিন্তু মুখের হাসিটা অন্তর্হিত হয় নি। হাসপাতালে লাইট নেই, পানি নেই, খাবার নেই, শহীদ মিনারের ওপর ক্রমাগত শেলিংয়ে হাসপাতাল বিল্ডিংয়ের ওই দিকটা প্রায় বিধ্বস্ত। একটা জানালারও কাচ নেই। দেয়ালগুলো গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা। বহু ডাক্তার সপরিবারে হাসপাতালে এসে আশ্রয় নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, “এই রুগী সামাল দিলে কি করে? তুমি খেয়েছ কি এই ক’দিনে?” ক্লান্ত মুখে একটু হেসে শেলী বলল, “কোনমতে রুটি, বিস্কুট, ডাবের পানি দিয়ে চালিয়েছি। আর, ডাক্তারের অভাব ছিল না বলে তেমন ঘাবড়াই নি।”<br /> <br /> মনে মনে শেলীকে ধন্য ধন্য করে বেরিয়ে এলাম।<br /> <br /> বাইরে এসে রুমী বলল, “আম্মা একবার সাদের বাসা যেতে চাই। সাদ আন্দালিব রুমীর একমাত্র বন্ধু-যে রুমীর চেয়ে বয়সে বড় নয় এবং একই ক্লাসে পড়ে। <br /> <br /> “রফিকদের আগে বাবুর বাসায় পৌছে দিই। কিছু বাজার-সদাই করে তোর নানীকে পৌছে দি, তারপর তুই গাড়ি নিয়ে যাস।”<br /> <br /> রুমী আমাকে বাড়িতে নামাবার জন্য গেটে গাড়ি ঢোকাতেই দেখি বদিউজ্জামান আমাদের পোর্চে সাইকেল থেকে নামছে। <br /> <br /> বদিউজ্জামান বাংলা একাডেমিতে চাকরি করে। বহু বছর থেকে আমাদের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। তার শ্বশুর আবদুল কুদ্দুস ভুঁইয়ার বাড়ি রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পাশেই। বদিউজ্জামানের স্ত্রী কাজল দু’মাসের বাচ্চা নিয়ে বাপের বাড়িতে ছিল। বদিউজ্জামান ছিল এলিফ্যান্ট রোডে তার চাচার বাড়িতে। আজ সকালে কারফিউ উঠলে সে শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে শোনে গত দু’রাত একদিনে সেখানে কি তান্ডব হয়ে গেছে।<br /> <br /> রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশরা পাক আর্মির সঙ্গে মরণপণ যুদ্ধ করার সময় ভুঁইয়া সাহেবের বাড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি বাড়িতেও পজিসান নেয়। পালাবার সময় তারা সারা বাড়িতে অস্ত্র, ইউনিফর্ম সব ফেলে ছড়িয়ে গেছে। এখন ওঁদের আর ঐ বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়। তাই বদিউজ্জামান অন্য নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়েছে। প্রথমে ওদের আত্মীয়, সাংবাদিক কে.জি. মোস্তফার আজিমপুরের বাসায় যায়। কিন্তু কে.জি.মোস্তফার কারণেই তার বাড়ি নিরাপদ নয়। বরং তারই অন্যত্র সরে যাওয়া উচিত। বদিউজ্জামান তার আরেক পরিচিত মিসেস মেহের দেলোয়ার হোসেনের বাড়িতেও গিয়েছিল। এঁর ছেলেমেয়েদের বদি কিছুদিন পড়িয়েছিল। উনি শুধু কাজলকে বাচ্চাসহ রাখতে পারবেন বলেছেন। এখন বাকিদের ব্যবস্থা করা দরকার।<br /> <br /> আমি বললাম, “মা’র বাড়ির একতলাটা খালি পড়ে আছে। ওখানে তোমরা সবাই স্বচ্ছন্দে থাকতে পারবে।” <br /> <br /> অতএব বদিকে নিয়ে আবার মা’র বাড়ি! মা’র সাথে কথা বলে বদিউজ্জামানদের ওখানে থাকার ব্যবস্থা করে বাসায় ফিরে এলাম। <br /> <br /> মিকির লাশের কথা সবাই ভুলে গেছি। ভুলব না-ই বা কেন? যা উদভ্রান্ত অবস্থায় সারা সকাল ছুটোছুটি করেছি। সারা ঢাকা জুড়ে সবাই ছুটোছুটি করছে। পরিচিত যার সঙ্গেই দেখা হচ্ছে দু’ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে যে যা শুনেছে, পরস্পরকে জানিয়ে যাচ্ছে। যত জানছি ততই মন জগদ্দল পাথরের চাপে বসে যাচ্ছে। এর মধ্যে রুমী অস্থির হয়ে উঠেছে। আমাকে কোনমতে বাড়িতে নামিয়ে আবার ছুটবে বন্ধু-বান্ধবের খোঁজ নিতে।<br /> <br /> যখন খেয়াল হয়েছে- তখন কারফিউ শুরু হতে আর ত্রিশ-চল্লিশ মিনিট বাকি আছে। এর মধ্যে দৌড়োদৌড়ি করে মেথর খুঁজে আনা অসম্ভব ব্যাপার। তবু শেষ মুহূর্তে বারেক-কাসেমকে পাঠালাম, পইপই করে বলে দিলাম বেশি দূরে না যেতে। কারফিউ শুরু হলে রাস্তায় দেখলেই মিলিটারি গুলি করবে। সেই ভয়ে তারা দশ মিনিট পরেই ছুটে বাড়ি ফিরে এসে বলল, “কোথাও মেথর নেই।” <br /> <br /> এই আরেকটি মস্ত দুশ্চিন্তা চাপল মাথায়। কালকের আগে আর মিকির লাশ সরানো যাবে না-এর মধ্যে পচে দুর্গন্ধ ছড়াবে। একে বিভিন্ন দুঃসংবাদে মন বিধ্বস্ত তার ওপর এই ঝঞ্ঝাট।<br /> <br /> শরীফ বাঁকার বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে গাড়িতে বহু জায়গায় ঘুরে অনেক খবর যোগাড় করে এনেছে। রুমীও বন্ধুদের বাড়ি চরকি ঘুরোন দিয়ে অনেক খবর জেনে এসেছে।<br /> <br /> ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী মধুর ক্যান্টিন আর নেই। পুড়ে ছাই হয়েছে। মধুদাও নেই। পাকসেনার গুলিতে মরেছে। স্ট্যাটিস্টিকসের মনিরুজ্জামান সাহেব ছাড়াও আরো অনেক শিক্ষককে পাক আর্মি মেরে ফেলেছে। ডঃ জি.সি.দেব, ডঃ এফ.আর.খান, মিঃ এ.মুকতাদির। কলকাতা রেডিওতে নাকি বলেছে, ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম ও বেগম সুফিয়া কামাল পাক আর্মির গুলিতে মারা গেছেন। নীলিমা আপা আর সুফিয়া কামাল আপার কথা শুনে আমি কেঁদে ফেললাম।  <br /> <br /> রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্রচন্ড যুদ্ধের পর বাঙালি পুলিশরা বেশিরভাগ প্রাণ দিয়েছে। অল্প কয়েকজন পালাতে পেরেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইন এখন পাকসেনার গুলিতে ঝাঁঝরা।<br /> <br /> পাক আর্মি ‘দি পিপল’ অফিস পুড়িয়েছে, পুড়িয়েছে ইত্তেফাক অফিস। ঢাকায় যত বাজার আছে, বস্তি আছে, সব জায়গা আগুনে পুড়ে ছাই-ছাই হয়েছে রায়েরবাজার, ঠাটারী বাজার, নয়াবাজার, শাঁখারি পট্টি।<br /> <br /> শরীফ প্রত্যক্ষদর্শীর খবর এনেছে বাঁকার কাছ থেকে। বাঁকার বাড়ির দুটো বাড়ি পরেই ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস-এর হেড কোয়ার্টার্স। রাত দুপুরে সেখানে গোলাগুলি শুরু হলে বাঁকা আর তার সম্বন্ধী কাইয়ুম ছাদে গিয়ে ব্যাপার দেখার ও বোঝার চেষ্টা করেন। সেখানে খুব গুলিগোলা চলছে বোঝা যায়, তবে ট্রেসার হাউই ও ছিটকে আসা গুলির জন্য ওঁরা বেশিক্ষণ ছাদে থাকতে পারেন নি। গোলাগুলির শব্দে ওঁদের বাড়িটা কেঁপে কেঁপে উঠছিল। বাঁকারা সবাই সিঁড়ির নিচে জড়ো হয়ে বসেছিলেন। ভোর চারটের দিকে কয়েকজন ই.পি.আরের লোক পালিয়ে বাঁকাদের বাড়িতে ঢোকে। ওঁদের গ্যারেজের পেছনে মাটির নিচে একটা ঘর আছে, সেই ঘরে আশ্রয় দেয়া হয় লোকগুলোকে। কিন্তু ই.পি.আর হেড কোয়ার্টার্সের এত কাছে লুকিয়ে থাকতেও তাদের ভরসা হয় নি বোধহয়। তাই সকালের আলো পরিষ্কার হবার আগেই তারা ওখান থেকেও পালিয়ে অন্যত্র চলে যায়।<br /> <br /> বাঁকার বাসার ছাদের পতাকা নামানোর কথা কারো খেয়াল ছিলনা। ২৬ তারিখের  সকালে পাকিস্তান আর্মির মেশীনগান ফিট করা ট্রাক ধানমন্ডির রাস্তায় রাস্তায় টহল দিতে দিতে বাঁকার ছাদে পতাকা  দেখে বাসার দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকে। বাঁকারা প্রথমে বুঝতে পারেন নি কেন তাঁদের বাসার দিকে গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। পরে বুঝতে পেরে প্রাণ হাতে নিয়ে বুকে হেঁটে অনেক কষ্টে পতাকা নামিয়ে আনেন।<br /> <br /> সবচেয়ে দুঃখজনক খবর ডাঃ খালেকের ভায়রাভাই কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে পাক আর্মি মেরে ফেলেছে। সায়েন্স ল্যাবরেটরি রোডে কারমো ফোমের মস্ত সাইনবোর্ড আঁটা তিনতলা বিল্ডিংয়ের দোতলায় তার বাসা ছিল। সাধারণত রাতে তিনি বাড়িতে থাকতেন না, কারণ আগরতলা মামলার অন্যতম ‘আসামী’ এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোয়াজ্জেমের ওপর আগে থেকেই আর্মির নজর ছিল। মোয়াজ্জেমের দুর্ভাগ্য, ঐ রাতটা তিনি বাড়িতে ছিলেন। মৃত্যু তাকে টেনেছিল, তাই বোধহয়। শুনে খুব কষ্ট হয়। মাত্র তিনদিন আগে ২৩ মার্চ তার সঙ্গে দেখা হল। কি হাসিখুশি, প্রাণবন্ত, আশাবাদী যুবক। তাঁর এই পরিণতি।<br /> <br /> শেখ মুজিবের কথা কেউ ঠিক করে বলতে পারছে না। কেউ বলছে তাঁকে মেরে ফেলেছে, কেউ বলছে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা কে মরেছেন, কে পালাতে পেরেছেন কিছুই ঠিক করে কেউ বলতে পারছে না। ফোন বিকল, নইলে যারা বলতে পারত এমন লোকের কাছে ফোন করে জানা যেত।<br /> <br /> মাথা ঝিমঝিম করছে। উপরে উঠে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়তে লাগল। খানিক পরে রুমী এসে বসল পাশে। গায়ের ওপর হাত রেখে আস্তে বলল, “আম্মা, তবু তো আমরা পুরো ছবিটা জানি না।”<br /> <br /> আমি তার দিকে পাশ ফিরে বললাম, “তার মানে?”<br /> <br /> “আমরা ক’টা জায়গাতেই বা গেছি। অন্যরাও সব জায়গা নিজের চোখে দেখে নি। কিছু দেখা, কিছু শোনা মিলে যেটুকু জেনেছি, আমার ভয় হচ্ছে আসল ঘটনা তার চেয়েও অনেক বেশি ভয়াবহ। সবটা জানতে মনে হয় আরো ক’দিন লাগবে।” <br /> <br /> আমি চেঁচিয়ে কেঁদে ফেললাম, “আর জানতে চাই না। যেটুকু জেনেছি, তাতেই কলজে ছিঁড়ে যাচ্ছে। ইয়া আল্লাহ, একি সর্বনাশ হল আমাদের। ওরা কি মানুষ, না জানোয়ার?”<br /> <br /> “ওরা জানোয়ারেরও অধম। ওরা যা করছে, তাতে দোজখেও ঠাঁই হবে না ওদের।”<br /> <br /> অডিও শুনুনঃ <a href="https://soundcloud.com/icsforum/2yxjduexfoku" target="_blank">এখানে</a></div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ২৭ মার্চ, ১৯৭১

২৭ মার্চ, ১৯৭১, শনিবার গতকালও সারারাত জাগা। গোলাগুলির শব্দ, আগুনের স্তম্ভ, ধোয়াঁর কুন্ডলী। সকালের দিকে গোলাগুলির শব্দটা খানিক্ষণে...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ২৬ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <br /> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <b>২৬ মার্চ, ১৯৭১, শুক্রবার</b><br /> <br /> <div style="text-align: justify;"> ছ’টার দিকে হঠাৎ কানে এল খুব কাঁপা কাঁপা অস্পষ্ট গলার ডাক-“আপা, আপা”। চমকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি বাগানের একটা জবা গাছের নিচে কুঁকড়ি মেরে বসে আছেন কামাল আতাউর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অনার্স পরীক্ষার্থী, মোহসীন হলে থাকে। ছুটে নিচে নেমে এলাম। দরজা খুলে উদভ্রান্ত, প্রায় অচেতন কামালকে ধরে তুলে ঘরে নিয়ে এল রুমী-জামী। ও সারারাত হলের একতলার একটা বাথরুমে আরো দশ-বারোটা ছেলের সঙ্গে লুকিয়ে ছিল। ট্রেসার, হাউইয়ের দরুন রাতে বেরোতে সাহস পায় নি। এখন সকালের আলো ফুটতে ট্রেসার হাউই বন্ধ হয়েছে। ওরা বাথরুম থেকে বেরিয়ে মাঠ, খানা-খোন্দল, রেললাইন পুরো এলাকাটা চার হাতপায়ে হামাগুড়ি দিয়ে পালিয়ে এসেছে।<br /> <br /> কামালকে সুস্থ করে রেডিও খুললাম। সুরা বাকারার পর খালি একটা বাজনাই বারেবারে বাজছে-আমার প্রিয় একটা গান, “কোকিল ডাকা, পলাশ-ঢাকা আমার এদেশ ভাইরে”- এই গানের সুরে তৈরি যন্ত্রসঙ্গীত। সাতটার সময় পাশের ডাঃ এ.কে.খানের বাড়ি গেলাম ফোন করতে। ওঁদের ফোনও ডেড। ক্রমে ক্রমে আমাদের রাস্তার আরো সব বাড়ির লোকজন সাবধানে উকিঝুঁকি দিতে লাগল। সবারই মুখে আতঙ্ক। সবাই সারারাত জেগেছে। কেউ কিছু বুঝতে পারছি না -কি হচ্ছে। সব বাড়ির ফোনই ডেড।<br /> <br /> বাড়ি চলে এসে খাবার টেবিলে বসে রইলাম, রেডিও সামনে নিয়ে। জামীকে বললাম, “বারেককে সঙ্গে নিয়ে দাদাকে ওঠাও, মুখ ধোয়াও, নাশতা খাওয়াও।”<br /> <br /> কাসেম যন্ত্রচালিতের মত টেবিলে চা-নাশতা দিয়ে গেল। নাশতা ফেলে সবাই চায়ের কাপ টেনে নিলাম।<br /> <br /> সাড়ে ন’টার সময় হঠাৎ যন্ত্রসঙ্গীত বন্ধ হল। শোনা গেল একটা রুক্ষ অবাঙালি কণ্ঠস্বর। প্রথমে উর্দু এবং পরে ইংরেজিতে বলল। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে। কারফিউ ভঙ্গ করে কেউ বাইরে বেরোলে কি শাস্তি, তাও বলল। আর বলল, ‘মার্শাল ল’ জারি করা হয়েছে। তার নিয়ম কানুনগুলো এক এক করে বলে যেতে লাগল। বেতার-ঘোষকের উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি শুনে মনে হল লোকটা একটা সেপাই-টেপাই কিছু হবে। সামরিক সরকার আর কাউকে হাতের কাছে না পেয়ে ওকে দিয়ে ঘোষণাগুলো করাচ্ছে।<br /> <br /> অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ। যা তান্ডব হচ্ছে চারদিকে, কারফিউ না দিলেও বাইরে বের হয় কার সাধ্যি! গোলাগুলির শব্দ থামেই না। মাঝে-মাঝে কমে শুধু। আগুনের স্তম্ভ দেখার জন্য এখন আর ছাদে উঠতে হয় না। দোতলার জানালা দিয়েই বেশ দেখা যায়। কালো ধোঁয়ায় রৌদ্রকরোজ্জ্বল নীল আকাশের অনেকখানিই আচ্ছন্ন।<br /> <br /> মিকির কান্নায় অস্থির হয়ে উঠেছিল সবাই। ওর অ্যালসেসিয়ান চরিত্রই বদলে গেছে যেন। অবিশ্রান্ত গোলাগুলির শব্দে এই জাতের সাহসী কুকুর যে এরকম কাহিল ও উদভ্রান্ত হয়ে পড়বে, তা কে ভেবেছিল? ওকে কিছু খাওয়ানো যাচ্ছে না। আমরা সবাই পালা করে ওকে কাছে টেনে ওর গলা জড়িয়ে ধরে সুস্থির রাখার চেষ্টা করছি, কিন্তু কোনো ফল হচ্ছে না।<br /> <br /> বাবাকে নিয়েও হয়েছে মুশকিল। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কেন, কি দোষে নিজের দেশের লোকজনকে মারছে, তা ওঁকে বোঝাতে গিয়ে আমাদের সবার মুখ দিয়ে ফেনা উঠে গেল। আমার ভয় হচ্ছে ওঁর আবার ব্লাড প্রেসার না বেড়ে যায়।<br /> <br /> টেলিফোন বিকল, রেডিও পঙ্গু, বাইরে কারফিউ-গোলাগুলির শব্দের চোটে প্রাণ অস্থির, বাইরে কি হচ্ছে কিছুই জানবার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী স্কুপ সংবাদদাতা কামাল আতাউর রহমান। সকাল থেকে আমার বারবার একই প্রশ্নে একই কথা বলতে বলতে কামালও যেন হাঁপিয়ে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে।<br /> <br /> “আচ্ছা কামাল, রাত বারোটার সময় তুমি কি করছিলে?”<br /> <br /> “আমি? আমি একটা প্রবন্ধ লিখছিলাম-‘বাংলা সাহিত্যে দেশপ্রেম।’ ২৭ তারিখে রেডিও প্রোগ্রামে পড়বার জন্য।”<br /> <br /> “কখন গোলাগুলির শব্দ শুনলে?”<br /> <br /> “ঐ বারোটার দিকেই। হয়তো দু’চার মিনিট পরে। আমার এক বন্ধু এসে বলল “তুই এখনো হলে রয়েছিস? জানিস না শহরের অবস্থা ভয়ানক খারাপ? আর্মি আসছে ক্যাম্পাস অ্যাটাক করতে? আমি বাড়ি চললাম। তুইও বেরিয়ে যা।” কিন্তু আমরা কেউই আর বেরোবার চান্স পেলাম না। তখুনিই কানে এল ভয়ানক গোলাগুলির শব্দ। একটু পরেই চারদিক আলো হয়ে উঠতে লাগল। একবার করে আলো জ্বলে আর গুলিগোলা ছোটে। আমার ঘর ছিল পাঁচতলায়, তাড়াতাড়ি একতলায় নেমে এলাম। হাজী মোহসীন হলের দক্ষিণে ইকবাল হল-তার ওপাশে এস.এম. হল। মনে হল ভারি ভারি কামানের গোলা দিয়ে মিলিটারিরা ইকবাল হল উড়িয়ে দিচ্ছে। আমাদের হলের দিকে গুলি ছুটে আসছিল।”<br /> <br /> “তোমাদের হল আক্রমণ করে নি ?”<br /> <br /> “না, আমরা প্রতি মুহূর্তে ভয় করছিলাম, এই বুঝি হাজী মোহসীনেও এল। কিন্তু ওরা আসে নি।”<br /> <br /> “আর কোথায় কোথায় ওরা অ্যাটাক করেছে বলে মনে হয়?”<br /> <br /> “ঠিক বলতে পারবো না। মনে হয় এস.এম হল, জগন্নাথ হল, শহীদ মিনার। ঐদিক থেকেই শব্দ বেশি পাওয়া গেছে।”<br /> <br /> “তোমার কি মনে হয়? ইকবাল হল, এস.এম. হল সব একেবারে ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে? সব ছেলেদের মেরে ফেলেছে?”<br /> <br /> “কি করে বলব? আমরা তো একতলার বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। শব্দ শুনে মনে হয়েছে ভারি ভারি গোলা। মোহসীন হলের মাথার ওপর দিয়েও গুলি ছুটে আসছিল। জানালার কাচ ভাঙ্গার শব্দ পেয়েছি সারারাতই।”<br /> <br /> এক পর্যায়ে কামাল বাথরুমে গেলে রুমী আমাকে বলল, “ওকে আর জিগ্যেস কোরো না তো আম্মা। দেখছ না ওর কষ্ট হচ্ছে।”<br /> <br /> “তাতো দেখছি। কিন্তু কি যে হচ্ছে চারদিকে, তাই বুঝবার জন্য-”<br /> <br /> বুঝবার আর কি আছে আম্মা? যা ঘটবার কথা ছিল, তাইতো ঘটেছে।”<br /> <br /> চুপ করে রুমীর দিকে তাকিয়ে রইলাম। রুমী চোখ ফিরিয়ে নিল। কাল রাত থেকে ও বিশেষ কথাবার্তা বলছে না। থম ধরে আছে। আমি ভাবছি: রুমীর কথাই ঠিক হল।<br /> <br /> রুমী নিশ্চয় ভাবছে, কেমন জব্দ আম্মা? আহাম্মকের স্বর্গ থেকে ছিটকে পড়েছ তো।<br /> <br /> কাঁহাতক ঘরে বসে থাকা যায়। এক সময় উঠে সদর দরজা খুলে গাড়ি-বারান্দায় গেলাম। আমাদের বাসার সামনের এই গলিটা কানা। এলিফ্যান্ট রড থেকে নেমে এসে আমাদের বাসা পেরিয়েই বন্ধ হয়ে গেছে। ওই বন্ধ জায়গাটার ওপরে ডাঃ এ. কে. খানের বাড়ি। বন্ধ গলি হওয়ার মন্ত সুবিধে-এখানে বাইরের লোকের চলাচল বা ভিড় নেই। এ রাস্তার বাড়িগুলোর বাসিন্দারা-আমরা-অনেক সময় গলির ওপর দাঁড়িয়ে গল্প করি। গলিটা যেন আমাদের সকলের এজমালি উঠান। ১৯৫৯ সালে এখানে বাড়ি করে উঠে আসার পর থেকে এদেশে যতবার কারফিউ পড়েছে, আমরা বাড়ির সামনের এই গলিতে দাঁড়িয়ে বহু সময় গল্পগুজব করে কাটিয়েছি। আজ কিন্তু গাড়ি-বারান্দা পেরিয়ে গলিতে পা রাখতে সাহস হল না। গোলাগুলির শব্দে এখনো আকাশ ফাটছে। মাঝে-মাঝে কুকুরের চিৎকার কানে ভেসে আসছে। সেই সঙ্গে মনে হচ্ছে যেন মানুষেরও চিৎকার। খুব অস্পষ্ট। নাকি আমার ভুল? এত বিরামহীন গোলাগুলির পরও কোন মানুষ কি বেঁচে আছে চিৎকার দেয়ার জন্য? আশ্চর্যের ব্যাপার, একটা কাক, চিল কি কোন পাখির ডাক নেই। <br /> <br /> বাউন্ডারি ওয়ালের এপাশে শরীর রেখে শুধু  মুখটা  বাড়ালাম গেটের বাইরে, বাঁদিকে তাকালাম মেইন রোডের পানে। জনশূন্য রাস্তা। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে হয়তো সেনাভর্তি জীপ বা ট্রাক চলে যেতে দেখব। কিন্তু দরকার নেই তা আমাদের দেখে। আমার মুখোমুখি বাসাটা হোসেন সাহেবের। উনি খোলা দরজার ঠিক ভেতরেই চেয়ারে একবার বসছেন, আবার উঠে বারান্দায় আসছেন, আবার তাড়াতাড়ি ভেতরে চলে যাচ্ছেন। বাঁ পাশে ডাঃ রশীদের বাড়ি। উনিও অস্থিরভাবে ঘর-বারান্দা করছেন-এখান খেকে দেখা যাচ্ছে। ফিরে, ঘুরে  ঢোকার মুখে গাড়ির দিকে নজর পড়তেই আঁতকে উঠলাম। কাচ জুড়ে জ্বলজ্বল করছে সেই স্টিকার- ‘একেকটি বাংলা অক্ষর একেকটি বাঙালির জীবন।’ দ্রুত ঘরে ঢুকে রুমীকে ডাকলাম, “রুমী, রুমী, শিগগির গাড়ির স্টিকার উঠিয়ে ফেল।”<br /> <br /> ঠিক সন্ধ্যার মুখে কারেন্ট চলে গেল। বাঃ বেশ। এবার ষোলকলা পূর্ণ হল। গোলাগুলির শব্দ একটু কমেছে মনে হল। মিকিও যেন একটু ধাতস্থ হয়েছে। ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানের এক পাশের ঢাকা জায়গায় তার নিজস্ব জলচৌকিটায় গিয়ে বসেছে। সামান্য কিছু খেয়েছেও।<br /> <br /> আমি চার-পাঁচটা মোমবাতি বের করে একতলা দোতলায় তিন-চার জায়গায় বসিয়ে দিলাম। আজ সারাদিন বারেক, কাসেম আমাদের চারপাশেই ঘোরাঘুরি করেছে। সন্ধ্যের সময় বারেক-কাসেমকে বললাম, “তোরা এখুনি তোদের বিছানাপত্র এনে গেস্টরুমে রাখ। অন্ধকারে উঠোনে বেরিয়ে কাজ নেই।” ওরা কৃতজ্ঞমুখে দৌড়োদৌড়ি করে বিছানাপত্র এনে রেখে আমাদের কাছাকাছি মাটিতে এসে বসল। মনে হল আমরা সবাই নূহের নৌকায় বসে আছি।  <br /> <br /> বাড়িতে একটা ভালো রেডিও নেই। এবার ২০ ফেব্রুয়ারির শেষ রাতে আমরা বাড়িসুদ্ধ সবাই বাইরে ছিলাম-সেই ফাঁকে বাসায় চোর ঢুকে অনেক জিনিসের সঙ্গে আমাদের ভালো রেডিওটাও নিয়ে যায়। এতোদিন কিটির দামী রেডিওটাই ব্যবহার করতাম, ও গুলশানে চলে যাওয়াতে রুমী-জামীর নড়বড়ে টু-ইন-ওয়ানটা দিয়ে কোন মতে কাজ চালাই। কিন্তু এটাতে বিবিসি’র বাংলা সার্ভিসটা ধরা যায় না। আকাশবাণীও ঢাকার রাস্তায় আর্মি নেমেছে, এর বেশি কিছু বলে নি। টিভি বন্ধ। কি আর করি। তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে কাজের লোকদের রেহাই দিলাম। সবাই সিড়ি দিয়ে উপরে উঠছি, হঠাৎ রুমী থমকে দাঁড়াল, “মিকির কোন সাড়াশব্দ নেই যে? একেবারে নর্মাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে।”<br /> <br /> জামী বলল, “ওকে ভেতর আনা হয় নি।”<br /> <br /> আবার আমরা সবাই নিচে নামলাম। দরজা খুলে উঠানে নেমে মিকির জায়গায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মোমবাটির কাঁপা কাঁপা আলোয় দেখলাম মিকি মরে পড়ে আছে।<br /> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ২৬ মার্চ, ১৯৭১

২৬ মার্চ, ১৯৭১, শুক্রবার ছ’টার দিকে হঠাৎ কানে এল খুব কাঁপা কাঁপা অস্পষ্ট গলার ডাক-“আপা, আপা”। চমকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি ...

Read more »

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা - মাশুকুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান জালাল

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgebutIP8Dh3vP1JwZs-kV0q6bfLtIjGlT2jS6WOwppS65am5hBOaB0LCoWpMOgfsuLNBdNqQBJBcOxHQdtTmxW4SpGsrNR6_D3MeEJjg_T3mcWLeoQhHXNCJwo-Kia2okEqkdCDYVoNW0/s1600/np.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgebutIP8Dh3vP1JwZs-kV0q6bfLtIjGlT2jS6WOwppS65am5hBOaB0LCoWpMOgfsuLNBdNqQBJBcOxHQdtTmxW4SpGsrNR6_D3MeEJjg_T3mcWLeoQhHXNCJwo-Kia2okEqkdCDYVoNW0/s640/np.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"> </td></tr> </tbody></table> <div style="text-align: justify;"> ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বেতার কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাকিস্তানিরা রেডিও স্টেশনটির নতুন নাম দেয় ‘রেডিও পাকিস্তান ঢাকা’। এ কেন্দ্র থেকেই তারা সামরিক আইন জারির ঘোষণা দেয়। বাঙালিদের কন্ঠ রোধ করতে ইতিমধ্যেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। তবে বাঙালিরা ঠিকই প্রতিরোধ গড়েছিল এবং লড়াইয়ে ফিরে এসেছিল। শুরু হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধ।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর রক্তক্ষয়ী তীব্র আক্রমণ অবজ্ঞা করে ওই দিনই সন্ধ্যায় একটি ছোট রেডিও স্টেশন সম্প্রচার শুরু করেছিল। চট্টগ্রামের উত্তরে কালুরঘাট নামক স্থান থেকে গোপন ওই রেডিও স্টেশনটি বিশ্ববাসীর কাছে ঘোষণা করে: ‘শেখ পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিককে সার্বভৌম স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।’ রেডিও স্টেশনটি নিজের নামকরণ করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> পরবর্তী চার দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে রেডিও স্টেশনটির প্রচারণা যুদ্ধ চলে। যখন পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করে বাংলাদেশে সব কিছুই শান্ত, তখন গোপন রেডিও স্টেশনটি ঘোষণা করে, মুক্তি বাহিনীরা রাজধানীর দিকে এগিয়ে আসছে এবং পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করে, তারা বাঙালিদের ইচ্ছাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আর গোপন রেডিও স্টেশনটি ঘোষণা করে, পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গভর্নর জেনারেল টিক্কা খান গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দাবি করে, বাঙালিরা পরাজিত হয়েছে, অন্যদিকে গোপন রেডিও দাবি করে, বাংলাদেশের একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়েছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> গণহত্যার শুরুর দিনগুলোতে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র বিশ্বের কাছে ঘোষণা দেয়, বাঙালিরা ছাড় দেবে না, বাঙালিরা যুদ্ধ করবে এবং তাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। বিশ্ব গোপন ওই রেডিওর ঘোষণা শুনেছিল। মার্চের সংকটময় ওই পাঁচ দিন কালুরঘাটের ছোট রেডিও স্টেশনটি কখনো নীরব হয়নি। রেডিও স্টেশনটি বাঙালিদের মনোবলকে পুনরুদ্ধার করেছিল এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হতাশায় ডুবিয়েছিল।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নারী ও পুরুষেরা এবং ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্যরা রেডিও স্টেশনটিকে আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করেছিল। পাশাপাশি বিশ্বের কাছে ঘোষণা করেছিল, সংগঠিত বাঙালি প্রতিরোধ নতুন উদ্যমে লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। পাকিস্তানি ট্যাংক ও যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষের কন্ঠকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না, বিষয়টি তারা নিশ্চিত করেছিল।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> পরিবর্তিত ঐতিহাসিক দলিল</div> <div style="text-align: justify;"> ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কীভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার ইতিহাস সঠিকভাবে প্রতিফলনের লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকার দেশের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাস সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। গত তিন দশক ধরে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রশি টানাটানির মধ্যে বাংলাদেশের ইতিহাস একাধিকবার নতুন করে লেখা হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণায় শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের ভুমিকার প্রতিফলন ঘটাতে গিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকসমূহ একাধিকবার পুনর্লিখিত হয়েছে। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ইতিহাস বই সংশোধনের ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার নির্ভর করেছে স্বাধীনতাযুদ্ধের ব্যাপারে সরকারের আনুষ্ঠানিক ইতিহাসের ওপর, যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> আনুষ্ঠানিক ইতিহাস থেকে নিচের কালক্রমটি পাওয়া যায়:</div> <div style="text-align: justify;"> <ul> <li>১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর থেকে ২৬ মার্চ ভোরের কোনো এক সময়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার একটি ঘোষণাপত্র লিখেছিলেন।</li> <li>১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাপত্রটি সম্প্রচার করা হয়। তবে খুব কম মানুষই সম্প্রচারিত ঘোষণাটি শুনতে পেয়েছিল।</li> <li>ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ কালুরঘাট থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে একটি ঘোষণা পাঠ করেন। ওই ঘোষণা বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলো শুনতে পেয়েছিল এবং বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার ব্যাপারে জানতে পারে।</li> </ul> </div> <div style="text-align: justify;"> উপরোক্ত কালক্রম অনুযায়ী, ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমানের ঘোষণা পাঠের আগ পর্যন্ত বহির্বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা শুনতে পায়নি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> স্বাধীনতার ঘোষণার এই বিবরণটি ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে এবং প্রথাগত বিচক্ষণতায় প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এটা গত তিন দশক ধরে তৈরি হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, জনপ্রিয় ইন্টারনেট বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়ায় কালুরঘাট রেডিও ট্রান্সমিটার-বিষয়ক নিবন্ধে বলা হয়েছে: ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ এম এ হান্নান স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণার একটি ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করেছিলেন......ধারণা করা হয়, স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা বিশ্ব গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ব্যাপকভাবে পৌঁছায়নি।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মেজর জিয়াউর রহমানের শুরুর কথাগুলো ছিল বাংলায় ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’। এরপর তিনি সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের ঘোষণা পাঠ করেন, যা বার্তা সংস্থাগুলো শুনতে পেয়েছিল এবং তারা তা সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচার করে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> জিয়াউর রহমানের ঘোষণা প্রথম শুনতে পায় চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙর করা একটি জাপানি জাহাজ। তারা তাৎক্ষণিকভাবে তা সারা বিশ্বের কাছে প্রচার করে। জিয়ার ঘোষণার সংবাদ প্রথম সম্প্রচার করে রেডিও অস্ট্রেলিয়া এবং বিশ্ব বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের কথা বিস্তারিত জানতে পারে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> তবে বাস্তবতা আর প্রামাণিক দলিলপত্রে সম্পুর্ণ ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মার্চ ২৬, ১৯৭১: কালুরঘাট থেকে ঘোষণা</div> <div style="text-align: justify;"> ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সারা বিশ্বের ইংরেজি ভাষার শীর্ষস্থানীয় দৈনিকগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়। এসব দৈনিকের ওপর একটি জরিপ চালানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২৬ মার্চ সকালে কলকাতায় পৌঁছা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত বার্তা থেকে এবং ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার থেকে সারা বিশ্ব বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা জানতে পারে। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ১৯৭১ সালের মার্চে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কীভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার খবর প্রকাশিত হয়েছিল, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নিম্নলিখিত ইংরেজি দৈনিকগুলোতে জরিপ চালানো হয়েছিল: ভারতের দ্য স্টেটসম্যান এবং দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া; আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এয়ার্স হেরাল্ড; অস্ট্রেলিয়ার দ্য এজ এবং দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড; মিয়ানমারের দ্য গার্ডিয়ান; কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল; হংকংয়ের দ্য হংকং স্ট্যান্ডার্ড; ইন্দোনেশিয়ার দ্য জাকার্তা টাইমস; জাপানের আসাহি ইভিনিং নিউজ; নেপালের দ্য রাইজিং নেপাল; ফিলিপাইনের ম্যানিলা টাইমস; সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস; দক্ষিণ আফ্রিকার দ্য প্রিটোরিয়া নিউজ; থাইল্যান্ডের দ্য ব্যাংকক পোস্ট; যুক্তরাজ্যের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস অব লন্ডন; যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর সান, দ্য বোস্টন গ্লোব, শিকাগো টাইমস, ক্রিস্টিয়ান সায়েন্স মনিটর, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ফিলাডেলফিয়া ইনকুরিয়ার, সানফ্রান্সিসকো ক্রোনিকেল এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যানে ২৬ মার্চ পাওয়া দুটি বার্তার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়: </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> পাকিস্তানি বাহিনী আন্দোলনকে চাপা দিতে অগ্রসর হওয়ার পর শুক্রবার শেখ মুজিবুর রহমান দুটি বার্তা সম্প্রচার করেছেন। ইউএনআই এ কথা জানায়। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> একটি অজ্ঞাত রেডিও স্টেশন থেকে বিশ্বের কাছে পাঠানো এক বার্তায় আওয়ামী লীগ নেতা (শেখ মুজিব) ঘোষণা দিয়েছেন যে ‘শত্রু’ আঘাত হেনেছে এবং জনগণ বীরের মতো লড়াই করছে। বার্তাটি কলকাতা থেকে শোনা হয়েছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> রেডিও স্টেশনটি নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। শিলং থেকে শোনা স্টেশনটির পরবর্তী সম্প্রচারে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৭ মার্চ কলকাতা থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান-এ আগের দিনের দুটি বার্তা তুলে ধরা হয় এভাবে:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> একটি অজ্ঞাত রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে আজ সকালে বিশ্বের কাছে পাঠানো এক বার্তায় জনাব রহমান (শেখ মুজিব) ঘোষণা দিয়েছেন যে শত্রু আঘাত হেনেছে এবং জনগণ বীরের মতো লড়াই করছে। বার্তাটি কলকাতা থেকে শোনা হয়েছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> রেডিও স্টেশনটি নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। শিলং থেকে শোনা স্টেশনটির পরবর্তী সম্প্রচারে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৭ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া সকালের প্রথম সম্প্রচার থেকে পাওয়া বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করে:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> আজ বিশ্বের কাছে পাঠানো এক বার্তায় শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণ নিজেদের স্বাধীনতার জন্য বীরের মতো লড়াই করছে। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> একটি অজ্ঞাত রেডিও স্টেশনের মাধ্যমে সম্প্রচারিত ওই বার্তা মুম্বাই থেকে শোনা গেছে। </div> <div style="text-align: justify;"> ধারণা করা হচ্ছে, রেডিও স্টেশনটি পূর্ব পাকিস্তানের চট্টগ্রাম অথবা চালনায় অবস্থিত। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> বার্তায় জনাব রহমান বলেন: ‘আজ রাত ১২টার দিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী হঠাৎ করে পিলখানা ও রাজারবাগে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস ঘাঁটিতে হামলা চালায়। হামলায় অসংখ্য (নিরস্ত্র) মানুষ নিহত হয়।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘ঢাকায় ইপিআর ও পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে কঠিন লড়াই চলছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণ অকুতোভয়ে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষ অবশ্যই যেকোনো মূল্যে দেশের প্রতিটি কোণে শত্রু বাহিনীকে প্রতিরোধ করবে। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন এবং শত্রুর কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে তিনি আপনাদের সাহায্য করবেন। জয় বাংলা।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৭ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যানও প্রথম বার্তার বিষয়বস্তু প্রকাশ করে: </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> জনাব রহমান (শেখ মুজিব) বলেছেন, ‘২৬ মার্চ রাত ১২টার দিকে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী হঠাৎ করে পিলখানায় ও রাজারবাগে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস ঘাঁটিতে হামলা চালায়। এতে অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়। ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের সঙ্গে সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জনগণ বীরের মতো শত্রুর সঙ্গে লড়াই করছে। যেকোনো মূল্যে দেশের প্রতিটি কোনায় শত্রু বাহিনীকে প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন এবং শত্রুর কাছ থেকে স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ে তিনি আপনাদের সাহায্য করবেন। জয় বাংলা।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র প্রথম জীবন্ত হয়ে ওঠে এবং বেশ কিছু বার্তা সম্প্রচার করে। সম্প্রচারিত বার্তাগুলোর সবই ধারণ করা হয় এবং এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো, ওই দিন সন্ধ্যায় কালুরঘাটের একটি রিপোর্ট ভারতে ধারণ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘শেখ পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিককে সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> এই ঘোষণা এবং এর আগের বার্তা ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় সারা বিশ্বে প্রচার করা হয়। এভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা বিশ্বের প্রায় সব সংবাদপত্রেই প্রথম পাতায় ছাপা হয়। বিশ্বের অনেক শীর্ষ সংবাদপত্র পরের দিন অর্থাৎ ২৭ মার্চ এ খবর প্রকাশ করে। উদাহরণ হিসেবে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস ২৭ মার্চ এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয়:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> শেখ মুজিবুর রহমান শুক্রবার পূর্ব পাকিস্তানের জন্য স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলামী জাতিটির (পাকিস্তান) দুই অংশের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা অসন্তোষ গৃহযুদ্ধে রূপ নেওয়ায় তিনি এ ঘোষণা দেন। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘দ্য ভয়েস অব ইনডিপেনডেন্ট বাংলা দেশ’ নামে একটি গোপন রেডিও থেকে সম্প্রচারিত বার্তায় বলা হয়েছে, ‘শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানের সাড়ে সাত কোটি নাগরিককে সার্বভৌম-স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> দালিলিক প্রমাণ নিশ্চিত করে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ কালুরঘাটে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা শোনা গিয়েছিল এবং পরের দিন সকালে এ নিয়ে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ অবজারভার-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম ইংরেজিতে পাঠ করেন ওয়াপদার প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম। আর প্রথম বাংলায় পাঠ করেন আবুশ কাশেম সন্দ্বীপ। সন্ধ্যায় এম এ হান্নানও একটি বক্তৃতায় ঘোষণাটি পাঠ করেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মার্চ ২৭, ১৯৭১: মেজর জিয়ার ঘোষণা</div> <div style="text-align: justify;"> ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র কালুরঘাট থেকে অব্যাহতভাবে সম্প্রচার চালিয়ে যায়। ৩০ মার্চ পাকিস্তানি বিমান হামলা করে বেতার কেন্দ্রটি গুঁড়িয়ে দেয়।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৮ মার্চ ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো খবর প্রকাশ করে, ‘জিয়া খান’ নামে এক মেজর ২৭ মার্চ একটি ঘোষণা পাঠ করেন। ঘোষক জিয়া খানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৮ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান জানায়: আরেকটি ঘোষণায় রেডিওটি দাবি করেছে, বাংলাদেশের পর পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং পাখতুনিস্তান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> রেডিওতে কথা বলা ওই ব্যক্তিটি হলেন ‘বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান মেজর জিয়া’। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৮ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়: </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান মেজর জিয়া খান আজ রাতে স্বাধীন বাংলা রেডিওতে ঘোষণা দেন, দু-তিন দিনের মধ্যেই পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে।</div> <div style="text-align: justify;"> তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ না করলে পশ্চিম পাঞ্জাবি সৈনিকেরা ‘নিশ্চিহ্ন হবে’। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ওই প্রতিবেদনে মেজর জিয়াউর রহমানকে ‘জিয়া খান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে মেজর জিয়া কর্তৃক ২৭ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কোনো উল্লেখ করা হয়নি। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৮ মার্চ ভারতীয় পত্রপত্রিকার এ দুটি প্রতিবেদন বিশ্ব সংবাদমাধ্যম প্রচার করেনি। ভারতীয় পত্রপত্রিকা ছাড়াও ২৮ মার্চ প্রকাশিত সারা বিশ্বের প্রধান ইংরেজি সংবাদপত্রগুলোর ওপর পরিচালিত জরিপেও ২৭ মার্চ মেজর জিয়ার সম্প্রচারের ব্যাপারে কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মার্চ ২৮, ১৯৭১: মেজর জিয়া এবং বাংলাদেশের ‘প্রাদেশিক সরকার’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৮ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় বাংলাদেশের একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করা হয়েছে এবং মেজর জিয়াকে প্রাদেশিক সরকারের অস্থায়ী প্রধান ঘোষণা করা হয়েছে। কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র ঘোষণা করে, প্রাদেশিক সরকারের দিকনির্দেশনা দেবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘোষণাটি ভারতে শোনা যায় এবং এবারও ভারত মেজর জিয়াউর রহমানকে শুধু মেজর জিয়া খান হিসেবে উল্লেখ করে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> নিজেকে প্রাদেশিক প্রধান হিসেবে ঘোষণা দেওয়া মেজর জিয়ার একটি বক্তৃতা ২৯ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> স্বাধীন বাংলা বেতারের এক সম্প্রচারে ‘মুক্তি সেনা’র কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া খান বলেছেন, ‘আমি এতদ্দ্বারা স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্তি বাহনীর প্রাদেশিক প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করছি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> প্রাদেশিক প্রধান হিসেবে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের চুড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার আদেশ দিচ্ছি। জয় বাংলা।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> তিনি বলেন, ‘শত্রুরা আকাশ ও সমুদ্রপথে অতিরিক্ত সৈন্য নিয়ে এসেছে।’ বাংলাদেশের যুদ্ধরত গণতন্ত্রমনা জনগণের সাহায্যে এগিয়ে আসতে তিনি বিশ্বের সব শান্তিকামী জনগণের প্রতি আবেদন জানান।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মেজর জিয়া দাবি করেন, ‘মুক্তি সেনারা’ কুমিল্লায় পাঞ্জাব রেজিমেন্টের ৩০০ জনকে হত্যা করেছে। যুদ্ধের শেষে রেজিমেন্টের অন্যরা পালিয়ে গেছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মেজর জিয়া খানকে অস্থায়ী প্রধান করে প্রাদেশিক সরকার গঠনের খবর ২৯ মার্চ বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পায়। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> উদাহরণ হিসেবে, ২৯ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার দ্য এজ জানায়:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> পূর্ব পাকিস্তানের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের সমর্থকেরা মেজর জিয়া খানের অস্থায়ী নেতৃত্বের অধীনে আজ একটি প্রাদেশিক সরকার গঠন করেছে। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> একটি বিদ্রোহী রেডিও নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়। রেডিওটি মেজর জিয়াকে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগের মুক্তি সেনার প্রধান হিসেবে পরিচয় দেয়। তবে শেখ মুজিবকে কেন সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে রেডিওটি কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ২৯ মার্চও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে কোথাও মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার কথা বলা হয়নি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মার্চ ৩০, ১৯৭১: দলিলপত্র এবং সংবাদ প্রতিবেদন</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ১৯৮২ সালে ১৫ খন্ডে প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক দলিলকে বলা হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র। পাঠ্যপুস্তক সংশোধনে বর্তমান সরকার এটি ব্যবহার করছে। এর তৃতীয় খন্ডে মেজর জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত আছে। সেটা এ রকম:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া এতদ্দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> আমি আরও ঘোষণা করছি, আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি, যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইনমেন্ট নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে। বাংলাদেশে বর্বর গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টির জন্য আমি সব সরকারের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে এই সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম বৈধ সরকার এবং বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক জাতির কাছ থেকে এ সরকারের স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার আছে।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> দলিলপত্র অনুযায়ী জিয়াউর রহমান এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ। দলিলপত্রে এর সুত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে একই দিন নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকার। তবে স্টেটসম্যান পত্রিকায় ২৭ মার্চ সংখ্যায় এই বক্তৃতা ধারণ করা নেই।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> দলিলপত্রে উল্লেখিত মেজর জিয়ার বক্তৃতার প্রথম রিপোর্ট ভারতীয় পত্রপত্রিকায় পাওয়া যায় ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ। ভারতীয় প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই বক্তৃতা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ৩০ মার্চ সকালে সম্প্রচারিত হয়েছিল।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ৩১ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত স্টেটসম্যান পত্রিকার ৯ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি প্রতিবেদন আছে এ রকম:</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> কলকাতা, মার্চ ৩০: শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে গঠিত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম বৈধ সরকার এবং বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার আছে। মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া খান আজ সকালে এ ঘোষণা দেন। ইউএনআই এ কথা জানিয়েছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বার্তায় শেখের পক্ষে মেজর জিয়া খান বলেন, ‘নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইনমেন্ট নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি, যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘বাংলাদেশের বৈধ গণতান্ত্রিক সরকারকে দ্রুত স্বীকৃতি দিতে আমরা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক ও শান্তিকামী দেশের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।’ বাংলাদেশে ‘বর্বর গণহত্যা’র বিরুদ্ধে নিজ নিজ দেশে জনমত সৃষ্টির জন্য তিনি সব সরকারের প্রতি আবেদন জানান। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘মেজর জিয়া খান বলেন, পাকিস্তান সরকার পরস্পরবিরোধী বিবৃতির মাধ্যমে বিশ্বের জনগণকে বিভ্রান্ত ও ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছে।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘তবে ইয়াহিয়া খান ও তাঁর সহযোগীদের দ্বারা কেউ বিভ্রান্ত হবে না। </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ৩১ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়া ১৫ নম্বর পৃষ্ঠার একটি খবরে বলা হয়েছে: </div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> কলকাতা, মার্চ ৩০: শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে গঠিত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম বৈধ সরকার এবং ‘বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের কাছ থেকে এর স্বীকৃতি’ পাওয়ার অধিকার আছে। মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া খান আজ সকালে এ ঘোষণা দেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত বার্তায় শেখের পক্ষে মেজর জিয়া খান বলেন, ‘নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নন-অ্যালাইনমেন্ট নীতির প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ সব জাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করবে।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মেজর জিয়া সম্প্রচার শুরু করেন এ কথাগুলো দিয়ে: ‘আমি, মেজর জিয়া, বাংলা মুক্তিবাহিনীর প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ এতদ্দ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ‘আমি আরও ঘোষণা করছি,’ তিনি বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি। যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> ৩০ মার্চ মেজর জিয়ার দেওয়া বক্তৃতার ব্যাপারে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছিল ৩১ মার্চ, যা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়নি। জরিপ অনুযায়ী ৩০ মার্চ সকালে মেজর জিয়ার দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ভারতের বাইরে বিশ্বের ইংরেজি ভাষার কোনো পত্রিকাতেই প্রকাশিত হয়নি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> উপসংহার</div> <div style="text-align: justify;"> ৩০ মার্চ বিকেলে কালুরঘাট থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সম্প্রচার বন্ধ হওয়ার পর মেজর জিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া যান এবং ৩ এপ্রিল তিনি মেজর খালেদ মোশাররফ ও মেজর সফিউল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি মুক্তি বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ কর্নেল এম এ জি ওসমানীর অধীনে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধ শুরু করেন।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ইতিহাস একাধিকবার নতুন করে লেখার কারণে প্রথাগত বিচক্ষণতার সঙ্গে দ্বন্দ্বের সৃষ্ট হয়েছিল। ১৯৭১ সালের শেষ দিকে বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনসমূহ বিষয়টি স্পষ্ট করেছে যে ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে সম্প্রচারিত ঘোষণার ভিত্তিতেই সারা বিশ্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে মধ্যরাতে ঢাকায় ইপিআর ও পুলিশ ব্যারাকের ওপর হামলার ব্যাপারে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রকৃত বার্তা বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। যদিও প্রাদেশিক সরকার গঠনের ব্যাপারে ২৮ মার্চ কালুরঘাট থেকে মেজর জিয়ার ঘোষণাও বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে প্রচার পেয়েছিল। তবে স্বাধীনতার ঘোষণার জন্য বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে মেজর জিয়াকে কোনো কৃতিত্ব দেওয়া হয়নি।</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> মাশুকুর রহমান: ফ্রিল্যান্স লেখক </div> <div style="text-align: justify;"> মাহবুবুর রহমান জালাল: ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ওয়ার ডকুমেন্টস’-এর কর্মী</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> <a href="http://www.thedailystar.net/swadhin-bangla-betar-kendro-and-bangladeshs-declaration-of-independence-52001" target="_blank">ডেইলি স্টারে প্রকাশিত মূল রচনার জন্য এখানে দেখুন</a></div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> অনুবাদ: মোহাম্মদ রকিবুল ইসলাম</div> <div style="text-align: justify;"> <br /></div> <div style="text-align: justify;"> অনুবাদ নেয়া হয়েছে <a href="https://mukto-mona.com/Articles/jalal/swadhin_bangla_betar.htm" target="_blank">মুক্তমনা ব্লগ</a> থেকে।</div> </div>

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা - মাশুকুর রহমান ও মাহবুবুর রহমান জালাল

  ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের শুরুতেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বেতার কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। পাকিস্তানিরা রেডিও স্টেশনটির নতুন নাম দ...

Read more »

একাত্তরের দিনগুলি: ২৫ মার্চ, ১৯৭১

<div dir="ltr" style="text-align: left;" trbidi="on"> <table align="center" cellpadding="0" cellspacing="0" class="tr-caption-container" style="margin-left: auto; margin-right: auto; text-align: center;"><tbody> <tr><td style="text-align: center;"><a href="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s1600/ekd.jpg" imageanchor="1" style="margin-left: auto; margin-right: auto;"><img border="0" height="332" src="https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgzk9IJVRrSNTTd9Pqz5He9fLUw1h5GFITxiS6kjhjEeTrwn8YzUv8r2Ss4CYesxGu3wzmgJzuVOFyX34TNXqXygYuM3qbcqJ2bX9CTW4Du3jQOg-FLonzV9sFtXCguKBPvu_uP5FR-tBY/s640/ekd.jpg" width="640" /></a></td></tr> <tr><td class="tr-caption" style="text-align: center;"></td></tr> </tbody></table> <b>২৫ মার্চ, ১৯৭১, বৃহষ্পতিবার</b><br /> <div style="text-align: justify;"> <br /> ২৩ মার্চের উজ্জ্বল প্রতিরোধ দিবসের পর কি যেন এক কালোছায়া সবাইকে ঘিরে ধরেছে। চারদিক থেকে খালি নৈরাশ্যজনক খবর শোনা যাচ্ছে। ইয়াহিয়া-মুজিব- ভুট্টোর বৈঠক যেন সমাধানের কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছে না। শেখ মুজিব প্রতিদিন প্রেসিডেন্ট ভবনে যাচ্ছন আলোচনা করতে, বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের বলছেন আলোচনা এগোচ্ছে; ওদিকে আন্দোলনকারী জঙ্গী জনতাকে বলছেন দাবি আদায়ের জন্য আপনারা সংগ্রাম চালিয়ে যান। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলুন।<br /> <br /> বেশকিছু দিন থেকে মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে প্রতিদিন নাকি প্লেনে করে সাদা পোশাকে প্রচুর সৈন্য এসে নামছে বিমানবন্দরে। বিশ্বাস হতে চায় না কথাটা, তবু বুক কেঁপে ওঠে। ওদিকে চটগ্রাম খেকে দু’তিনজন বন্ধুর টেলিফোনে জানা গেছে-চট্টগ্রাম বন্দরে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ এসে ভিড়েছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। সে অস্ত্র চট্টগ্রামের বীর বাঙালিরা খালাস করতে দেবে না বলে মরণপণ করে রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিচ্ছে। ওদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য আর্মি ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওদের ওপর।<br /> <br /> রুমীর মুখে দু’দিনের খোঁচা খোঁচা দাড়ি। মাথার চুল খামছে ধরে রুমী বলল, “আম্মা বুঝতে পারছ না মুজিব-ইয়াহিয়া আলোচনা ব্যর্থ হতে বাধ্য। এটা ওদের সময় নেবার অজুহাত মাত্র। ওরা আমাদের স্বাধীনতা দেবে না। স্বাধীনতা আমাদের ছিনিয়ে নিতে হবে সশস্ত্র সংগ্রাম করে।”<br /> <br /> আমি শিউরে উঠলাম, “বলিস কিরে? পাকিস্তান আর্মির আছে যুদ্ধের লেটেস্ট মডেলের সব অস্ত্রশস্ত্র। তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করবি কি দিয়ে?”<br /> <br /> রুমী উত্তেজিত গলায় বলল, একজ্যাকটলি-সেই প্রশ্ন আমারও। সাদা গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে শেখ রোজ প্রেসিডেন্ট হাউসে যাচ্ছেন আর আসছেন, আলোচনার কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। ওদিকে প্লেনে করে রোজ সাদা পোশাকে হাজার হাজার সৈন্য এসে নামছে, চট্টগ্রামে অস্ত্রভর্তি জাহাজ ভিড়ছে। আর এদিকে ঢাকার রাস্তায় লাঠি-হাতে বীর বাঙালিরা ধেই ধেই করে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সালাম দিয়ে হৃষ্টচিত্তে বাড়ি ফিরে পেট-পুরে মাছ-ভাত খেয়ে ঘুম দিচ্ছে। পল্টন ময়দানে ডামি বন্দুক ঘাড়ে কুচকাওয়াজ করছে। আমরা কি এখনো রূপকথার জগতে বাস করছি নাকি? ছেলেমানুষিরও একটা সীমা থাকা দরকার।”<br /> <br /> “তাহলে এখন উপায়?”<br /> <br /> “উপায় বোধহয় আর নেই আম্মা।”<br /> <br /> ভয় আর আতঙ্কের একটা হিম বাতাস আমাকে অবশ করে দেয় যেন, “না, না, ওরকম করে বলিস না। তুই শেখের রাজনীতি সমর্থন করিস না, তাই একথা বলছিস। তোরা হলি জঙ্গী বাঙালি, খালি মার-মার, কাট-কাট। শেখ ঠিক পথেই আন্দোলনকে চালাচ্ছেন। ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হলেও এভাবে অহিংস, অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে জনগণ তাদের দাঁবি ঠিকই আদায় করে নেবে?”<br /> <br /> “আম্মা, তুমি কোন আহাম্মকের স্বর্গে বসে আছ? শুধু কয়েকটা বিষয় তলিয়ে দেখ-পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমানে যা যা ঘটছে সবই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে। স্বাভাবিক হিসেবে এগুলো সবই বিষম রাষ্ট্রদ্রোহিতা। দেশের সর্বময় কর্তা প্রেসিডেন্ট খোদ হাজির, অথচ দেশ চলছে শেখের কথায়। লোকে অফিস-আদালত-ব্যাঙ্ক সব চালাচ্ছে শেখের সময়ে। তারপর দেখ পাকিস্তান সরকারের হেনস্তা। টিক্কা খানকে কোন বিচারপতি শপথ গ্রহণ করাতে রাজি হল না বলে বেচারা গভর্নর হতে পারল না। শুধু মার্শাল ল’ এডমিনিস্ট্রেটার হয়ে কাজ চালাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ঢাকায় এসে নামল আর তার বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ। সেনাবাহিনীর জন্য কোন বাঙ্গালি খাবার জিনিস বেচছে না। ওরা কতদিন ডাল-রুটি খেয়ে থেকেছে। তারপর প্লেনে করে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে খাবার আনতে হয়েছে। এতসব কান্ডের পরও ইয়াহিয়া সরকার একদম মুখ বুজে চুপ করে আছে। কেন বুঝতে পারছ না? ওরা শুধু সময় নিচ্ছে। ওরা আলোচনার নাম করে আমাদের ভুলিয়ে রাখছে। শেখ বড্ডো দেরি করে ফেলছেন। এপথে, এভাবে আমরা বাঁচতে পারব না।”<br /> <br /> আমি রাগ করে বললাম, “দাড়ি কামিয়ে সাবান মেখে ঠান্ডা পানিতে ভালো করে গোসল কর দেখি বাপু-মাথা বড্ড বেশি গরম হয়ে গেছে।”<br /> <br /> রুমী নীরবে উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। আমি কেমন যেন চুপসে গেলাম। নিজের মনেও যেন আর জোর পাচ্ছি না।<br /> <br /> আজ আবার রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী-দম্পতি আতিক ও বুলুর বাসায় রাতের খাবার দাওয়াত আছে। এরকম অবস্থায় দাওয়াত খেতে যেতে ইচ্ছে করে না, আবার ঘরে বসে থাকলেও ফাঁপর লাগে। শরীফের মিটিং ছিল ঢাকা ক্লাবে। অতএব আমি একাই গেলাম আতিকের বাসায়। সেখানে দেখা হল এনায়েতুল্লাহ খান ও তার স্ত্রী লীনার সঙ্গে, লীনার ছোট ভাই জিল্লুর রহমান খান ও তার আমেরিকান বউ মার্গারেটের সঙ্গে। আরো এসেছে আতিকের বন্ধু হালিম ও তার স্ত্রী মণি, আতিকের ভায়রা ভাই ফাত্তাহ ও তার স্ত্রী। সকলের মুখে একই কথা: কি হবে? কি হবে?<br /> <br /> প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া নাকি কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে প্লেনে চড়ে পশ্চিম পাকিস্তান চলে গেছে? রাস্তায় নাকি ইতোমধ্যেই আর্মি নেমে গেছে? আমি বুঝতে পারছি না আর্মি কেন নামবে।<br /> <br /> সাড়ে নয়টার সময় মাসুমা ফিরল টিভি অফিস থেকে। কিছুদিন আগে বড়ভাই রফিকুল ইসলামের বাসা ছেড়ে এখন মেজভাই আতিকুল ইসলামের বাসায় থাকছে। সে এল ঝড়েপড়া পাখির মতো বিদ্ধস্ত চেহারা নিয়ে। সবার মধ্যে যে আশঙ্কা, তারমধ্যেও তাই। বরং টিভি স্টেশনে সে আমাদের চেয়ে বেশিকিছু শুনেছে। কিন্তু মাসুমা আমাদের সঙ্গে বসল না, বলল, খুব বেশি টায়ার্ড আমি, নিজের ঘরে যাই।” অনেক বলা সত্ত্বেও সে খেল না আমাদের সঙ্গে।<br /> <br /> আমাদেরও খিদে ছিল না। কোনোমতে খাওয়া সারলাম সবাই। সাড়ে দশটায় শরীফ ফোন করল, “এখনো দেরি করছ কেন? শহরের অবস্থা ভালো নয়। বহু জায়গায় জনতা নতুন করে ব্যারিকেড দিচ্ছে। ইয়াহিয়া ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। অনেক রাস্তায় আর্মির গাড়ি দেখা যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে এস।”<br /> <br /> ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ ভীষণ শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। চমকে উঠে বসলাম। রুমী-জামী ছুটে এল এ ঘরে। কি ব্যাপার? দু’তিন রকমের শব্দ-ভারি বোমার বুমবুম আওয়াজ, মেশিনগানের ঠাঠাঠাঠা আওয়াজ, চি-ই-ই-ই করে আরেকটা শব্দ। আকাশে কি যেন জ্বলে-জ্বলে উঠছে, তার আলোয় ঘরের ভেতর পর্যন্ত আলোকিত হয়ে উঠছ। সবাই ছুটলাম ছাদে। আমাদের বাড়ির দক্ষিণ দিকে মাঠ পেরিয়ে ইকবাল হল, মহসীন হল, আরো কয়েকটা হল, ইউনিভার্সিটি কোয়ার্টার্সের কয়েকটা বিল্ডিং। বেশির ভাগ আওয়াজ সেইদিক থেকে আসছে, সেই সঙ্গে বহু কন্ঠের আর্তনাদ, চিৎকার। বেশিক্ষণ ছাদে দাঁড়ালো গেল না। আগুনের ফুলকির মত কি যেন চিঁ-ই-ই-ই শব্দের সঙ্গে এদিক পানে উড়ে আসছে। রুমী হঠাৎ লাফ দিয়ে কালো আর স্বাধীন বাংলা পতাকা দুটো নামিয়ে ফেলল।<br /> <br /> হঠাৎ মনে পড়ল একতলায় বারেক, কাসেম ওরা আছে। হুড়হুড় করে সবাই নিচে নেমে গেলাম। রান্নাঘরের ভেতর দিয়ে উঠানের দিকের দরজাটা খুলতেই আমাদের অ্যালসেসিয়ান কুকুর মিকি তীর বেগে ঘরে ঢুকে আমাদের সবার পায়ে লুটোপুটি খেতে খেতে করুণ স্বরে আর্তনাদ করতে লাগল। উঠানের দিকে মুখ বাড়িয়ে ডাকলাম, “বারেক-কাসেম।” ওদের ঘরের দরজা খুলে বারেক, কাসেম কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে ঘরে ঢুকল। আমি বললাম, “তোমরা তোমাদের বিছানা নিয়ে এ ঘরে চলে এস।”<br /> <br /> মিকিকে কিছুতেই আর ঘর থেকে উঠানে নামানো গেল না। এত গোলাগুলির শব্দ ও ট্রেসার হাউইয়ের নানা রঙের আলোর ঝলকানিতে সে দিশেহারা হয়ে গেছে। রুমী তার ঘাড়ে-মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে বলল, “ভয় নেই, মিকি ভয় নেই। তুই আমাদের সঙ্গে উপরে থাকবি।” তাকে উপরেও নেয়া গেল না। কি এক মরণ ভয়ে ভীত হয়ে সে খালি কোণা খুঁজছে। শেষে সিঁড়ির নিচের ঘুপচি কোণটাতে কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে রইল।<br /> <br /> বসার ঘরে ফোন তুলে দেখি-ফোন ডেড। উপরে উঠে গেলাম। বাবার গলা শুনলাম। রুমী গিয়ে বাবার হাত ধরে মৃদু স্বরে তাঁকে কি কি যেন বলতে লাগল।<br /> <br /> বাকি রাত আর ঘুম এল না। আবার ছাদে গেলাম। দূরে দূরে আগুনের আভা দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন দিক থেকে গোলাগুলি, মেশিনগানের শব্দ আসছে, ট্রেসার হাউই আকাশে রংবাজি করে চলেছে-দূর থেকে চিৎকার ভেসে আসছে। উত্তরে, দক্ষিণে, পূর্বে, পশ্চিমে সবদিকেই দূরে আগুনের স্তম্ভ ক্রমেই স্পষ্ট ও আকাশচুম্বী হয়ে উঠছে।<br /> <br /> কারো মুখে কোনো কথা নেই। রুমী, জামী নীরবে থমথমে মুখে সুতলির বাঁধন খুলে প্লাস্টিক ব্যাগ একে একে উপুড় করল কমোডে। একটু করে ফ্ল্যাশ করে, খানিক অপেক্ষা করে, আবার ঢালে, আবার ফ্ল্যাশ করে। এক সঙ্গে সব মালমশলা ঢাললে কমোডের নল বন্ধ হয়ে যাবে। জামী বাসনমাজা পাউডার দিয়ে তিন চারবার করে হামানদিস্তা দুটো মাজল আর ধুল। একবার ধুয়ে শুঁকে দেখে, আবার মাজে, আবার ধোয়।<br /> <br /> এ কাজ সেরে রুমী মার্কস, এঙ্গেলসের বই, মাও-সে-তুংয়ের মিলিটারি রচনাবলি সব একটা প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরল। আমরা চিন্তা করতে লাগলাম কোথায় বইগুলো লুকোনো যায়। মাটিতে পুঁততে চাইলে, বইগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। শেষে মনে পড়ল বারেকদের ঘরের পেছনে বাউন্ডারি ওয়ালের এক জায়গায় একটা কোটরমতো আছে। প্রতিবেশী হেশাম সাহেবের বাউন্ডারি ওয়ালের দরুন এই কোটরটার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বইয়ের প্যাকেটটা ফেলে দিলে লুকোনোও থাকবে, নষ্ট হবে না। ভোরের আলো অল্প একটু ফুটতেই রুমী সাবধানে গুড়ি মেরে ওখানে গিয়ে বইয়ের প্যাকেটটা রেখে দিল। তার ওপর ফেলল কয়েকটা শুকনো নারকেলের পাতা।<br /> <br /> - শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে</div> </div>

একাত্তরের দিনগুলি: ২৫ মার্চ, ১৯৭১

২৫ মার্চ, ১৯৭১, বৃহষ্পতিবার ২৩ মার্চের উজ্জ্বল প্রতিরোধ দিবসের পর কি যেন এক কালোছায়া সবাইকে ঘিরে ধরেছে। চারদিক থেকে খালি নৈরাশ্যজ...

Read more »