image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: একাত্তরের দিনগুলি: ১ এপ্রিল, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
১ এপ্রিল, ১৯৭১, বৃহষ্পতিবার সরকার এখন সবকিছু স্বাভাবিক দেবাবার চেষ্টা করছে। ২৭ তারিখ সকাল থেকে প্রতিদিন রেডিওতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্...

১ এপ্রিল, ১৯৭১, বৃহষ্পতিবার

সরকার এখন সবকিছু স্বাভাবিক দেবাবার চেষ্টা করছে। ২৭ তারিখ সকাল থেকে প্রতিদিন রেডিওতে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছে-সবাই যেন নিজ নিজ অফিসে কাজে যোগ দেয়। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে কারফিউ সত্ত্বেও ২৭ তারিখে ঢিভি চালু করা হয়েছে।

কিন্তু অনুষ্ঠান দেখে মনে হচ্ছে ভুতুড়ে। অনুষ্ঠান ঘোষক-ঘোষিকা, সংবাদ পাঠক-পাঠিকা সব যেন ভৌতিক অবয়ব।

টেলিফোন ঠিক হয়েছে। এটাও বোধ হয় জীবনযাপন স্বাভাবিক দেবাবার প্রয়োজনেই করা হয়েছে। কিন্তু এখন যেন টেলিফোন ঘোরাবার আগ্রহ আর নেই। বরং সময় গেলেই এখন খালি রেডিও’র নব ঘোরাচ্ছি। পরশুদিন সামনের বাসায় হুমায়ুন বলল, স্বাধীন বাংলা রেডিও নাকি কে শুনেছে। সে শোনে নি। তারপর থেকে মিনিভাই, লুলু, রঞ্জু অনেককেই জিগ্যেস করছি, কেউই এ পর্যন্ত নিজের কানে শোনে নি, তবে অন্যের মুখে শুনেছে।

রুমী-জামীকে গতকাল গুলশান থেকে নিয়ে এসেছি। ওরা থাকতে চায় না। তাছাড়া অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে-এখন যেহেতু সরকার সব স্বাভাবিক দেখাতে চায়, তাতে অন্তত এখনই ঘরে ঘরে ছেলেছোকরাদের টানাটানি করবে না। তবে রাস্তায় বেরোনো তরুণ ছেলেদের সম্বন্ধে যেসব ভয়াবহ খবর শুনছি, তাতেও তো বুক হিম হয়ে হাত-পা অবশ হয়ে পড়ছে। লুলু, রঞ্জু-আরো কয়েকজনের মুখে শুনলাম-ওরা দেখেছে ত্রিপল ঢাকা ট্রাক, যার পেছনটা খোলা থাকে, সেই ট্রাকে অনেকগুলো জোয়ান ছেলে বসা, তাদের হাত পেছনে বাঁধা, চোখও বাঁধা। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কে জানে। এই নিয়ে শহরে ক’দিন হুলুস্থুল। যার সঙ্গে দেখা হচ্ছে, তার মুখেই এই কথা। ভয়ে রুমি-জামীকে একা বেরোতে দিচ্ছি না, রুমীকে গাড়িও চালাতে দিচ্ছি না। ড্রাইভার না থাকলে আমি চালাচ্ছি, রুমী-জামীকে পেছনে বসিয়ে। মহিলা চালক দেখলে রাস্তায় আর্মি  কিছু বলে না। ওদের যত রাগ উঠতি বয়সের ছেলেদের ওপর। রাস্তার একপাশ দিয়ে মাথা নিচু করে চলা নিরীহ পথচারীও যদি অল্প বয়সী হয়, তাহলেও রক্ষে নেই। টহলদার মিলিটারি লাফ দিয়ে তার ঘাড় ধরে হয় ট্রাকে তুলবে, না হয় রাইফেলের দু’ঘা লাগিয়ে দেবে।

রাস্তায় বহু দোকানে উর্দু নেমপ্লেট। এলিফ্যান্ট রোডের ছোট ছোট দোকানপাটের বেশ কয়েকটার সাইনবোর্ড পালটে উর্দুতে লেখা হয়েছে। দোকানে জিগ্যেস করলাম- “সাইনবোর্ড পাল্টেছেন কেন?” দোকানী জবাব দিল, “এখন থেকে বাড়িতে, দোকানে, গাড়িতে, সবখানে উর্দু নামধাম নম্বর লিখতে হবে । ওপর থেকে হুকুম এসেছে।”

এরপর যাকেই জিগ্যেস করি, সে-ই বলে হ্যাঁ, তাইতো শুনছি। এলিফ্যান্ট রোডের দুটো ছোট সাইনবোর্ড লেখার দোকানের সামনে গাড়ির লাইন লেগে থাকে, দোকানের ভেতরে সাইনবোর্ড লেখার টিন-প্লেটের স্তুপের জায়গা হয় না, দোকানের সামনের ফুটপাত পর্যন্ত উপচে এসেছে।

মন বিদ্রোহী হয়ে উঠল। শেষ পর্যন্ত বাড়ির সামনে, গাড়িতে নাম ও নম্বর-প্লেট উর্দুতে লিখতে হবে? এই বাংলাদেশে? আমাদেরকে?

শরীফকে বললাম, “এই যে ওপর থেকে হুকুম এসেছে, এই হুকুমটার উৎস বের করা যায় না? দু’এক জায়গায় ফোন করে দেখ না। মোর্তুজা ভাই তো আগে এয়ারফোর্সে ছিলেন, ওঁকে জিগ্যেস কর না। তোমার বন্ধু আগা ইউসুফের সঙ্গে তো অনেক আর্মির লোকের জানাশোনা আছে, ওঁকে বল না কাউকে ফোন করে ব্যাপারটা জানতে।”

শরীফ বলল, “দেখি, ক্লাবে দেখা হলে জিগ্যেস করব। এসব কথা ফোনে বলা ঠিক হবে না।”

আমি গোঁয়ারের মত বললাম, “আমি কিন্তু এখনিই নাম-নম্বর-প্লেট বদলাবো না। কাগজে যদি মার্শাল ল’ অর্ডার হয়ে বেরোয়, তখন দেখা যাবে। তার আগে নয়।”

- শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বই থেকে

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

Emoticon
:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top
Chat here...