image

image
 

A+ A-
Voice of 71 Voice of 71 Author
Title: মুক্তিযুদ্ধ প্রতিদিনঃ ১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
Author: Voice of 71
Rating 5 of 5 Des:
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১ কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার ভবেরপাড়া গ্রামের ‘মুজিব নগর’-এ প্রায় দশ হাজার মানুষের বিপুল হর্ষধ্বন...
১৭ এপ্রিল, ১৯৭১
  • কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার ভবেরপাড়া গ্রামের ‘মুজিব নগর’-এ প্রায় দশ হাজার মানুষের বিপুল হর্ষধ্বনির মধ্যে আওয়ামীলীগ চীফ হুইফ অধ্যাপক ইউসুফ আলীর স্বাধীনতা সনদ পাঠের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার’ গঠিত হয়। এই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাঠের মধ্য দিয়ে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের যে স্বধীনতা ঘোষণা করেন, তা সাংগঠনিক রুপ নেয়। এ অনুষ্ঠানে ৫০ জন দেশী-বিদেশী সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
  • নবগঠিত মন্ত্রীসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী, খন্দকার মোস্তাক আহমদ পররাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী, মনসুর আলী অর্থ ও বানিজ্যমন্ত্রী, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র, যোগাযোগ ও সাহায্য মন্ত্রী এবং কর্ণেল ওসমানী বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হন। মুজিব নগরের অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
  • অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অধ্যাপক এম.ইউসুফ আলী।
  • স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা ও শপথ অনুষ্ঠানে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে মুক্তিবাহিনীর দুটি প্লাটুন এসডিপিও মাহবুবউদ্দীনের নেতৃত্বে সামরিক অভিবাদন জানায়। এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গণপরিষদ সদস্য আবদুল মান্নান। অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে তেলাওয়াত শেষে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ পরিবেশন করা হয়।
  • রাঙামাটির মধ্যস্থল বুড়িঘাটে পাকবাহিনীর ২০ জন সৈন্য লঞ্চযোগে রেকি করতে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা ব্যুহের কাছাকাছি হল গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ শুরু করলে পাকবাহিনীর অধিকাংশ সৈন্যসহ লঞ্চটি ধ্বংস হয়।
  • শাহবাজপুওে তিতাস ব্রিজ এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাকবাহিনীর একটি ব্যাটালিয়ন আর্টিলারি গানবোট সহকারে আক্রমণ চালায়। সারারাত স্থায়ী যুদ্ধে ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এতে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে মাধবপুরে গিয়ে ঘাঁটি রচনা করেন।
  • পাকিস্তান বিমানবাহিনীর ৪ টি জঙ্গিবিমান ময়মনসিংহ শহর ও আশেপাশে অন্যান্য এলাকায় আক্রমণ চালায়। এ আক্রমনে কয়েকজন নিরীহ মানুষ নিহত হয় এবং অনেক জায়গা পুড়ে যায়।
  • নওয়াবগঞ্জের গোদাবাড়িতে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ও নওয়াবগঞ্জ শহরের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী জঙ্গিবিমানের সাহায্যে রকেট ও মেশিনগানের প্রচন্ড হামলা চালায়।
  • ময়মনসিংহের কালিহাতীতে মুক্তিযোদ্ধা ও পাকসেনাদের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়।
  • গোয়ালন্দ ঘাট পার হয়ে পাকসেনারা রাজবাড়ি পৌঁছায় এবং ব্যাপক গুলি বর্ষণ করে। এতে আনসার কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির উদ্দিন শহীদ হন। তিনিই রাজবাড়ির প্রথম শহীদ।
  • যশোহর ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসে পাকসেনারা পুনরায় কুষ্টিয়া দখল করে নেয়।
  • প্রাথমিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ১৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা স্টুয়ার্ড মুজিবের নেতৃত্বে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহনের জন্য ভারতের আগরতলার উদ্দেশে মাদারীপুর ত্যাগ করে।
  • ফেনীর গঙ্গাসাগর যুদ্ধে পাকবাহিনীর সার্বিক আক্রমণের মুখে মুক্তিবাহিনী পশ্চাদপসরণ করে।
  • বরিশালের ওপর পাক স্যাবর জেট নির্বিবাদে গোলাবর্ষণ করে।
  • রংপুর ক্যান্টমেন্ট থেকে একদল সৈন্য বড়দরগা সানেরহাট রাস্তা ধরে গাইবান্ধা দখলের উদ্দেশে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অগ্রসর হয়। মাদারগঞ্জ ব্রিজের নিকট পৌঁছলে রাস্তা কেটে দিয়ে সুবেদার আফতাবের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরক্ষা ব্যুহ থেকে তাদেও ওপর প্রচন্ড আক্রমণ করা হয়। সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত সংঘটিত এ যুদ্ধে ২ জন পাকসৈন্য নিহত ও ৫জন আহত হয়। একজন নিরীহ গ্রামবাসী পাকসৈন্যদের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয়। পরা পাকবাহিনী পশ্চাদপসারন করার সময় শাখারী পট্টিসহ সমস্ত মাদারগঞ্জ বাজার জ্বালিয়ে দেয়। ৩ জন ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে।
  • দেশী-বিদেশী সাংবাদিক, বিদেশী পর্যবেক্ষক, মুক্তিযোদ্ধা ও জনতার উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। পরস্পরের ভাই হিসেবে বসবাস করতে চাই। মানবতা, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার জয় চাই।
  • প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন মুজিবনগরে প্রদত্ত এক দীর্ঘ বক্তৃতায় বলেন,বাংলাদেশে আজ যে ব্যাপক গণহত্যা চলছে পাকিস্তান সরকার তার সত্যতা গোপন ও বিকৃত করার জন্যে ওঠে পড়ে লেগেছে। বাংলাদেশ আজ যুদ্ধে লিপ্ত। পশ্চিম পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ। এ সংগ্রাম আমাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের সংগ্রাম, জীবন-মৃত্যুও সংগ্রাম। এছাড়া আমাদের আর কোন উপায় ছিল না।
তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

About Author

Advertisement

Post a Comment Blogger

 
Top