২৯ এপ্রিল, ১৯৭১
- কুমিল্লার
বড়কামতায় পাকবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে দুই দফায় প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়।
দু’বারই পাকবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাস্ত হয়। এ যুদ্ধে প্রায় পাঁচ-ছয়
হাজার গ্রামবাসী মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি
‘বড়কামতার যুদ্ধ’ নামে পরিচিত।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র আসাদ আহমদ
বায়রনের নেতৃত্বে একদল গেরিলা নবাবগঞ্জ মহকুমার শিবগঞ্জ থানাধীন পাগলা নদীর
তীরে কানপুরে অবস্থানরত পাকসেনাদের ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এ যুদ্ধে
তিনজন পাঞ্জাবি সৈন্য ও দশজন রাজাকার এবং দালাল নিহত হয়। ক্ষুদে গেরিলাদের
পথপ্রদর্শকের দায়িত্ব পালন করে নাম-না জানা এগার বছরের একটি বালক। এ যুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘কানুপুরের যুদ্ধ’ নামে পরিচিত হয়ে আছে।
- পাকবাহিনীর একটি দল করেরহাট-হিয়াকুল হয়ে রামগড়ের দিকে অগ্রসর হয়। অপর
একটি দল শুভপুর ব্রিজ এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর ক্রমাগত আক্রমণ
চালায় এবং অন্য আর একটি দল গুইমারা হয়ে রামগড়ের দিকে অগ্রসর হয়।
পাকবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে মেজর জিয়া, মীর শওকতকেরামগড় চলে
আসতে নির্দেশ দেন।
- নায়েক সফি তাঁর সেকশন নিয়ে সোনাইমুড়ি আউটার সিগনাল পুনরায় এ্যামবুশ
করে। এ্যামবুশরত অবস্থায় পাকবাহিনীর তিনটি গাড়ি অগ্রসর হলে মুক্তিযোদ্ধাদের
সাথে দু-তিন ঘন্টাব্যাপী গুলিবিনিময় হয়। এতে পাকবাহিনীর একজন সৈন্য
গুরুতরভাবে আহত হয় এবং গাড়ি তিনটি অকেজো হয়। পাকবাহিনীর গুলিতে একটি ছেলে ও
একজন বৃদ্ধ মারা যায়।
- দেশের উত্তরাঞ্চালের হিলি সীমান্তে মুক্তিযোদ্ধা ও পাসেনাদের মধ্যে দিনব্যাপী প্রচন্ড গোলাবিনিময় হয়।
- পাবাহিনী হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এলাকায় প্রবেশ করে। এসেই হানাদাররা নির্বিচারে হত্যা করে শতাধিক যুবক, ছাত্র,তরুন ও বৃদ্ধকে।
- সিলেটের সুরমা ও তলিয়াপাড়া চা বাগানে বর্বর পাকবাহিনী সংঘটিত হত্যাকান্ডে ৩০ জন চা শ্রমিক নিহত হয়।
- রংপুর সেনানিবাসের কাছে ঘাঘট নদীর তীরে ১২৫ জন বাঙালি ইপিআর যোদ্ধাকে নির্মমভাবে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যা করে।
- পাক হানাদাররা সৈয়দপুরগামী একটি ট্রেনের কামরায় ২৫ জন বাঙালি যাত্রীকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যা করে।
- অবরুদ্ধ বাংলা থেকে মার্কিন সাহায্য কর্মকর্তা ডা. জন ই. রড-এর লেখা
চিঠি সিনেটর উইলিয়াম সেক্সবি সিনেটে পাঠ করে শোনান। তাতে মার্কিন সিনেটে
গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। রডের লেখা ওই চিঠিটি ছিল ২৫ মার্চ
থেকে ঢাকায় সংঘটিত গণহত্যার একটি বাস্তব চিত্র।
- বৃটিশ পার্লামেন্টের শ্রমিক দলীয় সদস্য ব্রুস ডগলাসম্যান ভারতের
বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিদর্শন শেষে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে এক বিবৃতিতে
বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা পূর্ববঙ্গের মাটি চায় কিন্তু জনগণকে নয়।
তারা বাংলাভাষী জনগণের সংখ্যা হ্রাস করার নীতি হিসেবে সেখানে সামরিক তৎপরতা
ও গণহত্যা শুরু করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের বৈধতা সম্পর্কে আমার
লেশ মাত্র সন্দেহ নেই।
- ঢাকায় সামরিক সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে ১ মে থেকে ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে কলোনি,
সেক্রেটারিয়েট এলাকা ও শাহজাহানপুর কলোনি এলাকায় বসবাসকারী লোকদের উৎখাতের
নির্দেশ দেয় ।
- সামরিক সরকার এক ঘোষণায় শহরের সকল দেয়াল থেকে রাজনৈতিক স্লোগানসমূহ
মুছে ফেলার নির্দেশ দেয়। কারণ দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের
সপক্ষে ঐতিহাসিক স্লোগানসমূহ।
- করাচী পেসক্লাবে মুসলিম লীগ(কাইয়ুম) প্রধান খান আবদুল কাইয়ুম খান এক
সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, যে সব রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি আওয়ামী লীগকে
ক্ষমতার জন্য সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছিলো এবং আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ
মুজিবুর রহমানের হাতে শিগগিরই ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করেছিলো সেসব দলকে
অবিলম্বে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook