বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য তাঁকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর |
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষাজীবনঃ
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম ৭ মার্চ ১৯৪৯, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ গ্রামে । পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন কৃষক ও শৌখিন গাইয়ে এবং মা সাফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী । তাঁর দাদা আবদুর রহিম হাওলাদার একজন প্রতাপশালী ও সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন৷ পিতার আর্থিক দৈন্যতার কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে মামার বাড়ি মুলাদি উপজেলার পাতারচর গ্রামে গমন করেন ।
১৯৫৩ সালে পাতারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদ জান পাইলট হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন । মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ছাত্র হিসেবে ছিলেন বেশ মেধাবী ৷ তিনি খুবই কম কথা বলতেন এবং বেশ পরোপকারী ছিলেন৷ খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন৷ কলেজ জীবনেই তিনি পাঠ করেন লেনিন, মাও-সেতুং, চে গুয়েভারা মতো ব্যক্তির সংগ্রামী জীবনের গল্প ও রাজনৈতিক দর্শন৷ তিনি মাষ্টার দা সূর্যসেনের জীবনীগ্রন্থ, ক্ষুদীরামের ফাঁসী, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনী সহ বহু গ্রন্থ নিয়মিত পড়তেন । আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ৩রা অক্টোবর ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । ১৯৬৮ সালের ২রা জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তার নম্বর ছিল PSS-১০৪৩৯ । তিনি মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, রিসালপুর থেকে অফিসার বেসিক কোর্স-২৯ এবং ইনফেন্ট্রি স্কুল অব ট্যাকটিস থেকে অফিসার উইপন কোর্স সম্পন্ন করেন । সর্বশেষ ১৯৬৯ সালে আগস্ট মাসের শেষের দিকে এক মাসের ছুটিতে দেশে আসেন ।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাঃ
মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের জন্ম ৭ মার্চ ১৯৪৯, বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার আগরপুর ইউনিয়নের রহিমগঞ্জ গ্রামে । পিতা আব্দুল মোতালেব হাওলাদার ছিলেন কৃষক ও শৌখিন গাইয়ে এবং মা সাফিয়া বেগম ছিলেন গৃহিণী । তাঁর দাদা আবদুর রহিম হাওলাদার একজন প্রতাপশালী ও সম্মানী ব্যক্তি ছিলেন৷ পিতার আর্থিক দৈন্যতার কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে মামার বাড়ি মুলাদি উপজেলার পাতারচর গ্রামে গমন করেন ।
১৯৫৩ সালে পাতারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবনের সূচনা হয়। ১৯৬৪ সালে মুলাদি মাহমুদ জান পাইলট হাইস্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৬৬ সালে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন । মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ছাত্র হিসেবে ছিলেন বেশ মেধাবী ৷ তিনি খুবই কম কথা বলতেন এবং বেশ পরোপকারী ছিলেন৷ খেলাধুলার পাশাপাশি তিনি রাজনীতি সচেতন ছিলেন৷ কলেজ জীবনেই তিনি পাঠ করেন লেনিন, মাও-সেতুং, চে গুয়েভারা মতো ব্যক্তির সংগ্রামী জীবনের গল্প ও রাজনৈতিক দর্শন৷ তিনি মাষ্টার দা সূর্যসেনের জীবনীগ্রন্থ, ক্ষুদীরামের ফাঁসী, তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন এবং প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের জীবনী সহ বহু গ্রন্থ নিয়মিত পড়তেন । আই.এস.সি পাশ করার পর বিমান বাহিনীতে যোগদানের চেষ্টা করেন, কিন্তু চোখের অসুবিধা থাকায় ব্যর্থ হন । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় ১৯৬৭ সালের ৩রা অক্টোবর ১৫তম শর্ট সার্ভিস কোর্সে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । ১৯৬৮ সালের ২রা জুন তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরে কমিশন লাভ করেন। সেনাবাহিনীতে তার নম্বর ছিল PSS-১০৪৩৯ । তিনি মিলিটারি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং, রিসালপুর থেকে অফিসার বেসিক কোর্স-২৯ এবং ইনফেন্ট্রি স্কুল অব ট্যাকটিস থেকে অফিসার উইপন কোর্স সম্পন্ন করেন । সর্বশেষ ১৯৬৯ সালে আগস্ট মাসের শেষের দিকে এক মাসের ছুটিতে দেশে আসেন ।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাঃ
পাকিস্তান সেনাবাহিনী যখন পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালাচ্ছিলো তখন তিনি কারাকোরামে ১৭৩ ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তানি হানাদাররা বাঙালিদের পাখির মতো মারছে৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর পশ্চিম পাকিস্তানে বসে সেগুলো শুনছিলেন আর কীভাবে দেশে আসা যায় ভাবছিলেন ৷ তাঁর নিদ্রা পালিয়েছিল চোখ থেকে৷ পশ্চিম পাকিস্তানে আটকেপড়া তাঁর অন্যান্য বন্ধুও খুঁজছিলেন পালানোর উপায়৷ অন্যান্য বাঙালি তরুণ অফিসারও পালানোর পথ খুঁজছেন৷ ৩ জুলাই ১৯৭১৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, ক্যাপ্টেন সালাহউদ্দিন মমতাজ, ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার রশিদ খান, ক্যাপ্টেন আব্দুল আজিজ পাশা এবং ক্যাপ্টেন আনাম শিয়ালকোটের কাছে সীমান্ত পেরিয়ে পালাতে সক্ষম হন । জাহাঙ্গীর এর আগে এদের কাউকেই চিনতেন না৷ তাঁর বন্ধু ক্যাপ্টেন হামিদের সহায়তায় এদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্র হয়৷ অনেক কষ্টে বিভিন্ন চরাই উৎরাই পার হয়ে বৃষ্টি-বাদল উপেক্ষা করে শিয়ালকোট থেকে তাঁরা ভারতের উদ্দেশ্য পাকিস্তানীদের চোখ ফাকি দিয়ে মাত্র সঙ্গে একটি পিস্তলকে সঙ্গী করে শেষ পর্যন্ত পা রাখতে পারলেন ভারতের মাটিতে৷ প্রথমেই গেলেন নিকটবর্তী বিএসএফের ব্যাটালিয়ান হেড কোয়ার্টারে৷ সেখান থেকে দিলি্ল, অতঃপর কলকাতা৷ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে চারজন বাঙালি সামরিক অফিসার পালিয়ে এসেছেন শুনে বাঙালি, মুক্তিবাহিনী ও বাঙালি শরণার্থীদের প্রাণে বিপুল উত্সাহ জাগল৷ মুক্তিযুদ্ধের চিফ কমান্ডার কর্নেল ওসমানী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কলকাতায় এলেন এই পাঁচ বীরকে অভ্যর্থনা দেয়ার জন্য৷
কলকাতা থেকেই পাঁচ ক্যাপ্টেনের বিচ্ছিন্নতা৷ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ৭নং সেক্টরে, যোগ দিলেন মেহেদীপুরে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে৷ ক্যাপ্টেন আনাম ৪নং সেক্টরে, সিলেট রণাঙ্গনে৷ বিভিন্ন রণাঙ্গনে অসাধারণ কৃতিত্ব দেখানোর কারণে তাঁকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। মেহেদীপুরের অদূরেই বয়ে চলেছে মহানন্দা নদী৷ মেহেদীপুর ক্যাম্পের দায়িত্ব পেয়েছেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ তখন তাঁর বয়স মোটে তেইশ৷ তারুণ্যে টগবগ করে ফুটছেন তিনি৷ দৃঢ় প্রত্যয়ের এক অসম্ভব লড়াকু মানুষ৷ পরিধানে লুঙ্গি, গায়ে গেঞ্জি, মাথায় লাল গামছা, পায়ে ক্যানভাসের জুতো৷ এই তরুণ সেক্টর কমান্ডারকে দেখে মেহেদীপুর মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা প্রথমে আঁচ করতে পারেনি কতটা ইস্পাতকঠিন তাঁর মন, কতটা বলিষ্ঠ তাঁর স্বভাব৷ তাঁর কঠোর নিয়মানুবর্তিতা, কর্তব্যপরায়ণতা এবং ক্লান্তিহীন অধ্যবসায় তাঁর অল্প বয়স আর বাচ্চা বাচ্চা চেহারাটাকে অতিক্রম করে পরিণত করেছে এক প্রবল ব্যক্তিত্বে৷ তাঁর নামে সবাই এক ডাকে দাঁড়িয়ে যায়৷ এখানে তিনি অসামান্য বীরত্বের সাথে আরগরারহাট, কানসাট, শাহপুর এলাকায় যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং মুক্তাঞ্চল গঠন করেন । এই ত্যাগী যোদ্ধা বেতন থেকে ২০ টাকা নিজের জন্য রেখে বাকি টাকা শরণার্থীদের সাহায্যার্থে দান করতেন ।
যেভাবে শহীদ হলেনঃ
৩ ডিসেম্বর ১৯৭১৷ বাংলাদেশ জুড়ে সব ফ্রন্টে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে শুরু হলো চূড়ান্ত লড়াই৷ মেহেদীপুর ক্যাম্পেও প্রস্তুতি শুরু হলো৷ এরই মধ্যে কোথাও কোথাও হানা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধারা৷ যেন পরীক্ষা করে নিয়েছে নিজেদের শক্তি৷ এখন প্রস্তুতি শুরু চূড়ান্ত লড়াইয়ের৷ মহানন্দা নদীর অপর পারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর৷ সেখানে শক্ত ঘাঁটি গেড়ে আছে পাকিস্তানি হানাদাররা৷ সে ঘাঁটি আগলাতেই নদীর তীর ঘেঁষে তারা তৈরি করে রেখেছে প্রতিরক্ষা দুর্গ৷ জনশূন্য চারদিকে৷ ঝোপঝাড়, গাছপালায় ভরা এই প্রতিরক্ষা দুর্গ৷ সেখানে তাদের হটানোর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের উপর৷
১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর৷ লেফটেন্যান্ট কাইয়ুম, লেফটেন্যান্ট আউয়ালসহ ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে একটি আক্রমণের উদ্যোগ নিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর৷ বেশ কয়েকটা নৌকায় তাঁরা উজানে পাড়ি জমালেন ৷ ভোররাত৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়া৷ সেখানে অবস্থান নিয়ে পরিকল্পনা করা হলো হানাদার বাহিনীকে মিত্রবাহিনী দিয়ে গোলাবর্ষণ করে বিভ্রান্ত করে দেয়ার৷ এই অপ্রস্তুত অবস্থাতে আক্রমণ চালাবে মুক্তিবাহিনী৷ কিন্তু মিত্রবাহিনী গোলাবর্ষণ না করার ফলে মুক্তিবাহিনী নতুন কৌশল পরিকল্পনা করল৷
১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১৷ ভোরারাত৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জকে দখল করার জন্য শুরু হলো চূড়ান্ত অপারেশন৷ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর জানতেন এটি খুব ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান, জানতেন সহকর্মীরাও৷ তাই তিনি সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করলেন এই অভিযানে কারা তাঁকে সঙ্গ দিবেন৷ সিদ্ধান্ত নেয়ার স্বাধীনতা তিনি সঙ্গীদের দিয়েছিলেন৷ মাত্র ২০ জন তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন৷ ২০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে তিনি রওনা দিলেন৷ শীতের শেষ রাত৷ প্রচণ্ড শীতে হাত-মুখ জমে যাচ্ছে৷ রেহাইচর এলাকা দিয়ে তাঁরা মহানন্দা নদী পায়ে হেঁটে পাড়ি দিলেন৷ উত্তর দিক দিয়ে আক্রমণের সূচনা করা হলো ৷ অতর্কিত হামলা করে বেয়নেটের মাধ্যমে খতম করতে করতে তাঁরা এগোতে লাগলেন দক্ষিণ দিকে৷ ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর এমনভাবে আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিলেন যাতে উত্তর থেকে শত্রু নিধন করার সময় শত্রু দক্ষিণ দিক থেকে গুলি করতে না পারে৷ সম্মুখ ও হাতাহাতি যুদ্ধ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করতে থাকে৷ আর মাত্র কয়েকটা বাঙ্কারের পাকসেনা বাকি৷ তখনই দেখা দিল সমস্যা৷ পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্সের কয়েকজন সৈন্য বাঁধের ওপর ছিল তারা ব্যাপারটা টের পেয়ে গেল৷ তারা যোগ দিল পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে৷ এরপরই পাকিস্তানি বাহিনী শুরু করে দিল গুলিবর্ষণ৷ কিন্তু জাহাঙ্গীর পিছু হটতে নারাজ৷ তিনি ভয়ে ভীত নন৷ তিনি সবাইকে নির্দেশ দিলেন এগিয়ে যাওয়ার জন্য৷ পাশাপাশি তিনি নিজেও এগিয়ে যেতে লাগলেন সামনের দিকে৷ তিনি হয়ে উঠলেন অদম্য দুঃসাহসী৷
হঠাৎ একটা গুলি এসে পড়ল সরাসরি ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের কপালে৷ মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন এই অসম সাহসী যোদ্ধা৷ হানাদারদের বেপোরোয়া গুলি বর্ষণের সামনে টিকতে পারলেন না তাঁর বাকি সহযোদ্ধারাও৷ তাঁরা পিছু হটলেন, নদীতে দিলেন ঝাঁপ৷ ডুব-সাঁতার দিয়ে চলে গেলেন নিরাপদ দূরত্বে৷ প্রচণ্ড শীতে তাঁরা নদী পাড়ি দিয়ে মৃতপ্রায় অবস্থায় হাজির হলেন মেহেদীপুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে৷ শোকের মাতম উঠল চারদিকে৷ দিকে দিকে রটে গেল ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের শহীদ হবার সংবাদ৷ মুক্তিবাহিনীর সব সদস্য দ্রুত এই শোককে শক্তিতে পরিণত করে প্রতিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠলেন৷ তাঁদের প্রবল আক্রমণের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হলো বর্বররা৷ মুক্ত হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ৷
যেভাবে সমাহীত হলেনঃ
ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীরের রক্তক্ষরা নিষপ্রাণ দেহ নদীর পাড় থেকে উদ্ধার করে সম্মাননার মধ্য দিয়ে সমাহিত করা হলো গৌড়ের ঐতিহাসিক সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণে৷ আজও ধীরে বহে সেই মহানন্দা তার ঢেউয়ে ঢেউয়ে উচ্চারণ করে যায় বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নাম৷
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ও মেজর নাজমুল হকের সমাধি |
পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক পদক বীরশ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয় মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীরকে। বরিশালের নিজ গ্রামের নাম তাঁর দাদার নামে হওয়ায় পরিবার ও গ্রামবাসীর ইচ্ছে অনুসারে তাঁর ইউনিয়নের নাম 'আগরপুর' পরিবর্তন করে 'মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর' ইউনিয়ন করা হয়েছে৷ সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে বরিশাল জেলা পরিষদ ৪৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দান করা ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর নির্মাণ করছে বীরশ্রষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর স্মৃতি জাদুঘর ও গ্রন্থাগার৷
সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ
নাম: মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর
জন্ম : ৭ই মার্চ, ১৯৪৯ ইং।
জন্মস্থান : বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার রহিমগঞ্জ গ্রামে৷
পিতা : আব্দুল মোতালেব হাওলাদার৷
মা : মোসাম্মাৎ সাফিয়া বেগম৷
কর্মস্থল : সেনাবাহিনী৷
যোগদান : ১৯৬৭ সাল৷
পদবী : ক্যাপ্টেন৷
মুক্তিযুদ্ধে অংশরত সেক্টর : ৭নং সেক্টর৷
মৃত্যু : ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সাল, বারঘরিয়া, রাজশাহী ৷
সমাধিস্থল : চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ প্রাঙ্গণ ৷
ছবি ও তথ্য সূত্র :
Post a Comment Blogger Facebook