আবদুল জব্বার
জন্মঃ ২৬ আশ্বিন ১৩২৬ বাংলা, ১০ অক্টোবর ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ, পাঁচাইর
গ্রাম, গফরগাঁও, ময়মনসিংহ
মৃত্যুঃ ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২, ঢাকা
|
ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার (১৯১৯-১৯৫২) |
ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার ১০শে অক্টোবর ১৯১৯ইং বা বাংলা ২৬শে আশ্বিন ১৩২৬
বঙ্গাব্দ ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন।
তাঁর পিতার নাম হাছেন আলী এবং মাতার নাম সাফাতুন নেছা। তিনি ধোপাঘাট
কৃষিবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন এবং পঞ্চম শ্রেণী
পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়া শেষ করেন। এরপর তিনি তার পিতাকে কিছু দিন কৃষি কাজে
সাহায্য করেন। পরবর্তীতে আরো ভাল কিছু করার আশায় তিনি নারায়গঞ্জে চলে আসেন
এবং এখানে পরিচয় হয় একজন ইংরেজ নাবিকের সাথে। তিনি আব্দুল জব্বারকে
রেঙ্গুন শহরে (সাবেক দেশ বার্মা বতর্মান মায়ানমারে) একটি চাকুরীর ব্যবস্থা
করে দেন।
১২ বৎসর আব্দুল জব্বার রেঙ্গুনে কাজ করেন এবং স্বাস্থ্যগত কারনে মনের মধ্যে
লুকিয়ে থাকা ইচ্ছে শিপে কাজ করতে না পারার দরুন পুনরায় গ্রামে ফিরে আসেন।
তিনি গ্রামে ফিরে গ্রামের ছেলেদের নিয়ে একটি গ্রাম্য ডিফেন্স দল গঠন করেন
যে দলের নেতৃত্বে তিনি কমান্ডার হিসাবে ছিলেন।
১৯৪৯
সালে তিনি তাঁর এক বন্ধুর বোন আমেনা খাতুনকে বিয়ে করেন। ঐ সংসারে তাঁর
একমাত্র ছেলে নুরুল ইসলাম বাদলের জন্ম হয়। আবদুল জব্বারের পুত্র জন্ম
হওয়ার কিছুকাল পরে তার শাশুড়ি ক্যান্সারে
আক্রান্ত হন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর ২/৩ দিন আগে তিনি তাঁর ক্যান্সার আক্রান্ত
শাশুড়ীকে চিকিৎসা করাতে জনাব সিরাজুল ইসলামের সহযোগীতায় শাশুড়ীকে ঢাকা
মেডিক্যালে ভর্তি করান। হাসপাতালে রোগী ভর্তি করে আবদুল জব্বার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
ছাত্রদের আবাসস্থল (ছাত্র ব্যারাক) গফরগাঁও নিবাসী হুরমত আলীর রুমে (২০/৮)
উঠেন। তিনি তাঁর আত্নীয়া আয়শা খাতুন এবং পরিচিত আব্দুল
হাইয়ের বাসায় ঐ সময় রাত যাপন করে দিনে শাশুড়ীকে সেবা করতে মেডিক্যালে চলে
আসতেন।
ঢাকা মেডিক্যালের বাইরে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে যখন বাংলা ভাষাকে
রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে ছাত্র জনতা সোচ্চার এবং শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত
ঢাকার রাজপথ তখন তিনি মেডিক্যালে ভর্তি হওয়া রোগী তাঁর শাশুড়ীর শয্যা পাশে
বসা থাকতেন। গুলিবিদ্ধ হওয়ার অল্পক্ষণ আগে সিরাজুল ইসলামের সাথে শাশুড়ীর
রোগের ব্যাপারে কথা বলে তিনি মেডিক্যালের গেইটের বাইরে শাশুড়ীর জন্য কিছু
ফল কিনতে গেলেন। আন্দোলনরত ছাত্রদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হলে, কি
হয়েছে দেখবার জন্য তিনি বের হয়ে আসেন। এবং ঐ সময় তিনি দেখেন রাষ্ট্র ভাষার দাবী বেশ কিছু
ছাত্র-জনতা ব্যানারসহ সমবেত হয়েছে এবং বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার দাবীতে অনবরত
শ্লোগান দিয়ে যাচ্ছে। আব্দুল জব্বার আর স্থির থাকতে পারেনি তিনি অসুস্থ
শাশুড়ীর জন্য ফল নেওয়ার কথা ভুলে গিয়ে ব্যানার হাতে মিছিলের অগ্রভাগে এসে
দাঁড়ান। ঐ সময়ে পুলিশের এলোপাতাড়ি গুলাগুলি শুরু হয়, এতে আব্দুল জব্বার
গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালে
নেওয়া হয় । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি ২১ ফেব্রুয়ারী রাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে
পড়েন। তাকে যারা হাসপাতালে নিয়ে যান, তাদের মধ্যে
ছিলেন ২০/৯ নম্বর কক্ষের সিরাজুল হক।
শহীদ আব্দুল জব্বারকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০০ সালে মরনোত্তর ২১শে পদক দিয়ে সম্মানিত করেন।
|
আজিমপুর কবরস্থানের এই কবরে ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন |
সংক্ষিপ্ত জীবনী
নাম : আব্দুল জব্বার ।
জন্ম : ১০শে অক্টোবর ১৯১৯ইং বা বাংলা ২৬শে আশ্বিন ১৩২৬ বঙ্গাব্দ ৷
জন্মস্থান : ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার পাঁচুয়া গ্রামে ৷
পিতা : হাছেন আলী ৷
মাতা : সাফাতুন নেছা।
মৃত্যু : ২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল ৷
সমাধি স্থল : ঢাকার আজিমপুর পুরানো কবরস্থানে ৷
ছবি
ও তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া-ভাষা শহীদ আব্দুল জব্বার, ইন্টারনেট, ভাষা
সৈনিক আমানুল হক, বিশ্ব তোরনে বাংলা, মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধূরী, ব্লগার নীল
হৃদয় ও বিভিন্ন পত্রিকা থেকে নেওয়া।