![]() |
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিকেলে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দশ লক্ষাধিক লোকের অভূতপূর্ব সমাবেশে ভাষণ দেন। ২০ মিনিটের ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।
- বেলা সোয়া তিনটায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাস্থলে এসে উপস্থিত হন। সফেদ পাজামা-পাঞ্জাবী ও কালো কোট পরিহিত শেখ মুজিব মঞ্চে এসে দাঁড়ালে বীর জনতা করতালি ও ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের মধ্যদিয়ে তাঁকে অভিনন্দন জানান। বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু আহবান জানালেন: প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। তিনি ঘোষণা করেন: আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাইনা। আমরা এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।… আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, আমি যদি হুকুম দিতে নাও পারি—তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করো। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেবো। এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ।
- বক্তৃতাকালে জনতার কন্ঠে উচ্চারিত হচ্ছিল শ্লোগান, জাগো জাগো—বাঙালি জাগো, পাঞ্জাব না বাংলা—বাংলা বাংলা, তোমার আমার ঠিকানা –পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার নেতা আমার নেতা—শেখমুজিব, শেখ মুজিব, বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো—বাংলাদেশ স্বাধীন করো।
- ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ রিলে না করার প্রতিবাদে বেতারে কর্মরত বাঙালি কর্মচারিরা কাজ বর্জন করেন এবং বিকেল থেকে ঢাকা বেতার কেন্দ্রের সকল অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ রিলে করা হবে—এ ঘোষণার পর সাড়াবাংলায় শ্রোতারা অধীর আগ্রহে রেডিও সেট নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। শেষ মুহূর্তে সামরিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার প্রতিবাদে বেতার কেন্দ্রটি অচল হয়ে পড়ে। তখন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়েই অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন। গভীর রাতে সামরিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা বেতারে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের পূর্ণ বিবরণ প্রচারের অনুমতি দিলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ দিয়ে ঢাকা বেতার কেন্দ্র পুনরায় চালু হয়।
- বঙ্গবন্ধু ভাষণের পর পরই ঢাকায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে এয়ার মার্শাল (অব.) আসগর খান সামরিক শাসন প্রত্যাহার এবং অনতিবিলম্বে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসন করার অধিকার আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
- রাতে বঙ্গবন্ধু ২৫ মার্চ জাতীয পরিষদের অধিবেশন আহ্বান প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। সংবাদপত্রে প্রদত্ত বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার বেতার ভাষণের জবাবে বলেন, ১ মার্চ আকস্মিকভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আকস্মিক ও অবাঞ্ছিতভাবে স্থগিত ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদরত নিরস্ত্র বেসামরিক অধিবাসীদের ওপর ব্যাপকভাবে গুলি চালানো হয়েছে। গত সপ্তাহে যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন তাঁরা শহীদ হয়েছেন। এই শহীদদের ‘ধ্বংসকারী শক্তি’ আখ্যাদান নিঃসন্দেহে সত্যের অপলাপ। প্রকৃতপক্ষে তারাই ধ্বংসকারী যারা বাংলাদেশের বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টির জন্য দায়ী।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.