৬ মে, ১৯৭১
- মুক্তিযোদ্ধারা
কুমিল্লার চৌমুহনী-চন্দ্রগঞ্জ রাস্তার ফেনাকাটা পুল এলাকায় এ্যামবুশ করে।
পাকবাহিনীর সৈন্য বোঝাই তিনটি ট্রাক চন্দ্রগঞ্জ থেকে চৌমুহনী যাবার পথে
ফেনাকাটায় পৌঁছলে মুক্তিবাহিনীর সাথে প্রচন্ড সংঘর্ষ হয়্ এ সংঘর্ষে
মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস শাহাদাৎ বরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এটি
‘ফেনাকাটা পুলের সংঘর্ষ’ নামে পরিচিত।
- তেলিয়াপাড়ায়
মুক্তিযোদ্ধাদের সদর দপ্তরের উপর পাকবাহিনীর দুই কোম্পানির সৈন্য অতর্কিতে
আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমণে পাকসেনারা দ্রুত পালাতে
বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে উভয় পক্ষের ব্যাপক হতাহত হয়।
- সকালে পাকসেনারা পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি এলাকায় প্রবেশ করে শর্ষিনার
পীরের বাড়িতে ঘাঁটি স্থাপন করে। শর্ষিনার পুল থেকে থানা পর্যন্ত এলাকার
সমস্ত হিন্দু বাড়ি প্রথমে লুট ও পরে অগ্নিসংযোগ করে এবং ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ
চালায়। পাকসেনাদের অপর একটি দল আলঘারকাঠির দিকে যায়এবং নির্বিচারে
হত্যাযজ্ঞ চালায়।
- পিরোজপুরে পাকহানাদার বাহিনী দুর্নীতি দমন বিভাগের দারোগা হীরেন্দ্র
মহাজন (চট্টগ্রাম)সহ ৫ মে বন্দিকৃত এসডিও আবদুর রাজ্জাক (কুমিল্লা), ডেপুটি
ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান(যশোর), এসডিপিও ফয়জুর রহমান (ময়মনসিংহ, লেখক
হুমায়ূন আহমেদের পিতা)-কে বলেশ্বর নদীর পাড়ে একত্র করে নির্বিচারে গুলি
চালায়। এতে তাঁরা সবাই শহীদ হন।
- সিলেটের কুলাউড়া থানায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করে।
তাদের নির্মূল অভিযানের শিকার হয় ২শর বেশি নিরীহ মানুষ। এ থানার
পৃথ্বিমপাশা নামক এলাকায়ও বর্বররা নিধনযজ্ঞ চালায়। এত শতাধিক মানুষ নিহত
হয়।
- সিনেটর ওয়াল্টার মন্ডেল মার্কিন সিনেটে বলেন, সাম্প্রতিক ঘূর্নিঝড়ের পর
গৃহযুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে ভয়ঙ্কর এক দুর্যোগের মুখোমুখি দাঁড়
করিয়েছে। এ অবস্থায় একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য সরকারের গৃহীত জরুরি
পদক্ষেপই লক্ষ লক্ষ মানুষকে আসন্ন মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।
- বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো এবং নির্বাহক
মি.জে.আর.বড়ুয়া জেনারেল হামিদ ও গভর্নর টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করেন।
বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো বৌদ্ধ পূর্ণিমার পরপরই চট্টগ্রাম, পার্বত্য
চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও পটুয়াখালি এলাকা সফর করে বৌদ্ধ
সম্প্রদায়কে সংগঠিত করবেন বলে জানান।
- পাকিস্তানি ঘাতকরা কুষ্টিয়ায় নেপালী শ্রমিকসহ স্থানীয় শ্রমিকদের পাইকারীভাবে হত্যা করে।
- রাওয়ালপিন্ডিতে একজন সরকারি মুখপাত্র তথ্য প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ
২৬ মার্চ শেষ রাতকে সশস্ত্র অভ্যুত্থান ও আনুষ্ঠানিকভাবে 'স্বাধীন বাংলাদেশ
প্রজাতন্ত্র' ঘোষণার সময় নির্ধরণ করেছিলো । তারা পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে
সেনাবাহিনীর বিমান ও সমুদ্র পথের সংযোগস্থল ঢাকা- চট্টগ্রাম দখলের
পরিকল্পনা নিয়েছিলো। কিন্ত্র সেনাবাহিনী আওয়ামী লীগের নির্ধারিত সময়ের
মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে প্রেসিডেন্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সামরিক তৎপরতা শুরু
করে এবং ২৫ ও ২৬ মার্চের মধ্যবর্তী মাঝ রাতের আগেই ধারাবাহিকভাবে অভিযান
চালিয়ে দেশকে রক্ষা করে ।
- মুখপাত্র আরো বলেন, এ সময় আওয়ামী লীগ বিচ্ছিন্নতার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো ।
শান্তিপূর্ণ পন্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের সমস্ত পথ বন্ধ হযে যাওয়ায়
প্রেসিডেন্ট সেনাবাহিনীকে তাদের কর্তব্য পালন ও সরকারি কর্তৃত্ব
সম্পুর্ণভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান ।
তথ্যসূত্র: মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
Post a Comment Blogger Facebook
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.